logo ২১ এপ্রিল ২০২৫
বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
২৩ মে, ২০১৬ ১০:৫৬:২১
image



ঢাকা: সাপ্তাহিক পত্রিকা বেগম-এর সম্পাদক নূরজাহান বেগম আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।  সোমবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।






নুরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।  






নূরজাহান বেগমের মেয়ে রিনা ইয়াসমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ৪ মে শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মাকে ভর্তি করা হয়।তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভ্যান্টিলেশন দেয়া হয়। এরপর থেকে মাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়া হচ্ছিল। আজ সোমবার সকালে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।






সাহিত্যক্ষেত্রে মেয়েদের এগিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই কলকাতা থেকে বেগম পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে এটি ঢাকায় চলে আসে। বেগম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সওগাত পত্রিকার সম্পাদক ও নূরজাহান বেগমের বাবা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। বেগম–এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল। তবে চার মাস পর থেকেই পত্রিকাটির সম্পাদনা শুরু করেন নূরজাহান বেগম। বেগম-এর প্রথম সংখ্যা ছাপা হয়েছিল ৫০০ কপি। মূল্য ছিল চার আনা। এটি ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা।






বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত ও সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে তিনি আইএ এবং ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।






নারীর অবস্থার উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য নূরজাহান বেগম বহু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রোকেয়া পদক পান। এ ছাড়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুন্নেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন থেকে তিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন।









রাষ্ট্রপতির শোক






বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে নারীদের প্রথম সাপ্তাহিক বেগম’র সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।






এক শোক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, “নারী শিক্ষা ও নারী উন্নয়নে নূরজাহান বেগমের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তার মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”   






ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা যান নূরজাহান বেগম। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।






৭০ বছর প্রাচীন বেগম পত্রিকার শুরু থেকে এর সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের মেয়ে নূরজাহান বেগম। বাংলাদেশের নারী সাহিত্যিকদের অনেকের লেখালেখির হাতেখড়ি বেগমের মাধ্যমে।






আবদুল হামিদ বেগম সম্পাদকের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।









প্রধানমন্ত্রীর শোক






প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’–এর সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ।






নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে দেওয়া শোকবাণীতে প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।






বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত ও সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের কন্যা।






নূরজাহান বেগমের বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন খান জানিয়েছেন, হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মায়ের মরদেহ পুরান ঢাকার শরৎ গুপ্ত রোডের বাড়িতে নেয়া হবে। সেখানে তার নামাজের জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।









খালেদা জিয়ার শোক






বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের (৯১) মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ।






শোকবার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সাহিত্য ক্ষেত্রে মেয়েদেরকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনের শেষ বছরেই ‘বেগম’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। মেয়েদেরকে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার মহান ব্রত নিয়েই বেগম পত্রিকা তার পথচলা শুরু করে। নুরজাহান বেগম ছিলেন এই পথচলার অগ্রদূত।






খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ‘বেগম’ এদেশের নারী সমাজের কাছে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছে। বিংশ শতাব্দির মধ্যকালে তৎকালীন সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের জন্য এ ধরনের পত্রিকা প্রকাশ ছিল একটি সাহসী উদ্যোগ। 






নূরজাহান বেগমের সাহসী সম্পাদনার মধ্য দিয়ে বেগম পত্রিকাটি এদেশের শিক্ষা, সাহিত্যে উৎসাহী নারী সমাজের কাছে ছিল এক অপূরণীয় প্রেরণা। তার পত্রিকাতে লেখার সুযোগেই এদেশের অনেক নারী, সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন, বলেন খালেদা।






সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিংবদন্তিতুল্য সাংবাদিক ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের কন্যা হিসেবে নূরজাহান বেগমও নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আর এজন্যই তিনি সকল প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবেন। তার মৃত্যুতে দেশবাসীর ন্যায় আমিও গভীরভাবে সমব্যথী।






বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নূরজাহান বেগমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।






আরেক শোকবার্তায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নুরজাহান বেগম নারী সমাজের অগ্রগতি তথা শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞানবিকাশের অনন্য দিশারী। তিনি যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হিসেবে সাংবাদিকতায় একটি স্বতন্ত্র  মাত্রা যোগ করেন। 






 















(ঢাকাটাইমস/২৩মে/জেডএ/ এআর/ ঘ.)