logo ০৩ জুলাই ২০২৫
বিলুপ্তির পথে মাকাল ফল
মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
৩০ আগস্ট, ২০১৬ ১৪:১৫:৩৮
image




দেখতে আপেলের মতো এই মাকাল ফলটি। ভেতরে কলো ও তিতা। কাকে খায় বলে এটি ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় অনেকে কাওয়াজাঙ্গি বলেও ডেকে থাকে। এক সময় এই জেলায় মাকালের বিষ ব্যাপকহারে ব্যবহার হতো। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ে এই ফলটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। ভেতরে কালো হলেও এটির রয়েছে ভেষজ উপকার।



মাকালকে আরবিতে হানজাল, সংস্কৃতিতে দেব দালিকা এবং হিন্দিতে ইন্দ্রায়ন বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম সিট রুলুস কোলো সিন্থিস। উদ্যান তত্ত্ববিদ উইলিয়াম মিথিউস মাকালকে অন্তসার শূন্য ফল বলে অভিহিত করেছেন।



মাকাল গাছ মূলত লতাজাতীয় উদ্ভিদ। চৈত্র বৈশাখে মাকাল গাছে সাদা ধবধবে ফুল ধরে। শ্রাবণ-ভাদ্রে মাকাল ফল পাকে। তখন মনকাড়া এই ফলটিকে আপেলের মতো দেখা যায়।



মাকাল ফল নিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহে নানা ধরনের প্রবাদ আছে। এরকম এটি প্রবাদ হচ্ছে- এক সুন্দরী গৃহবধূ রাতের অন্ধকারে শাশুড়িকে বিষ প্রয়োগে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ওই বিষ তাকেও খেতে হয়। বিষক্রিয়ায় দুজনই মারা যায়। মৃত্যুুর আগে শাশুড়ি পুত্রবধূকে অভিশাপ দেয়। ওই অভিশাপেই গৃহবধূ মাকাল ফলে পরিণত হয়। যার বাইরের রূপই সুন্দর, কিন্তু ভেতরটা কালো।



কবিরাজি মতে, মাকাল গাছের শিকড় কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। কফ ও শ্বাস কষ্ট নিরাময়েও মাকাল ফলদায়ক। নাক ও কানের ক্ষত উপশমে মাকাল গাছ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।



মাকাল ফলের বীচি ও আঁশ শুকিয়ে গুড়ো করে পানিতে দ্রবীভূত করে ফসলে প্রয়োগ করা যায়। এই দ্রবণ ফসলের পোকামাকড়, ইঁদুর ও রোগ-বালাই দমনে বিষ হিসেবে কাজ করে। আবহমানকাল ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃষকরা মাকালের বিষ দিয়ে ফসল রক্ষা করেছেন। এর বিষ ফসলের জন্য ক্ষতিকর নয়।



পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, নানা কারণে প্রাকৃতিক বন উজাড় হওয়ায় এটি হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের কীটনাশকের প্রভাবে পরিবেশবান্ধব মাকালের বিষ আর কেউ কিনতে চায় না। বাজারেও পাওয়া যায় না।



(ঢাকাটাইমস/৩০ আগস্ট/আঞ্চলিক প্রতিনিধি/এলএ)