ঢাকা: বাংলাদেশে পর্ন সাইট বন্ধ করে দিতে চান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে বিষয়টির উল্লেখও করেছেন তিনি। কিন্তু এরপর এ বিষয়ে আর তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি।
তথ্য প্রযু্ক্তি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, অনলাইনে কোনও সাইট বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। তারা বলছেন, কোনও সাইট সরাসরি বন্ধ করে দিলেও প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে তা ব্যবহার করা যায়। এই প্রক্সি সার্ভার বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর সারাদেশে ফেসবুক বন্ধের উদাহরণ টেনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই সময় ফেসবুক-ভাইবার-হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। তারপরেও কিন্তু প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অনিন্দ ইকবাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বৈধ চ্যানেলে সরকার চাইলে কোনও সাইট বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু প্রক্সি সার্ভার তো তারা বন্ধ করতে পারবে না। এসব সাইট নিয়ে অনেকগুলো ইউআরএল থাকে। এগুলো খুঁজে খুঁজে বন্ধ করতে হয়। লাখ লাখ ইউআরএল দেশে রয়েছে। এগুলো এক সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হলে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে হবে। এটা তো আর সম্ভব নয়’।
গত ১৮ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার নিজের ফেসবুক পেজে এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে পর্ন সাইট বন্ধ হচ্ছে’।
এম এ আমিন খান নামের এক ব্যক্তি তারানার একটি পোস্টের নিচে কমেন্ট করেন, ‘আপা, পর্নোগ্রাফির সাইটগুলো বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে আপনারা আইন করেছেন। এখন এসব সাইটগুলো বন্ধ করাটাও খুব জরুরি। যুব সমাজকে পর্নোগ্রাফির ছোবল থেকে রক্ষা করতে না পারলে তাদের কাছে তথ্য-প্রযুক্তির সুফল পৌঁছাবে। তার এমন মন্তব্যের জবাবে তারানা হালিম পর্ন সাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও একদিন পর তার ওই কমেন্ট আর ফেসবুকে পাওয়া যায়নি।
তারানা হালিমের এমন ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এরপর এটি নিয়ে সরব হয় গণমাধ্যমও। তবে প্রশ্ন দেখা দেয়, এটি বন্ধ করা আদৌ সম্ভব কি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) এক পদস্থ কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও সাইট বন্ধের নির্দেশনাও বিটিআরসিতে আসেনি’।
জানতে চাইলে বিটিআরসির গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক জাকির হোসাইন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিটিআরসি পর্ন সাইট বন্ধে বদ্ধ পরিকর। এ লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রয়েছে। শিগগির এ বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে’।
ভারতে উদ্যোগ নিয়েও কার্যকর হয়নি:
গত বছরের ৩০ জুলাই ভারত সরকার ইন্টারন্টে সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) সংগঠনকে পর্ন সাইট বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী ১ আগস্ট ৮৫৭টি সাইট ব্লক করে দেয় বন্ধ করে দেয় আইএসপি।
বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি এইচ এল দাত্তু এক রায়ে বলেন, নিজের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে বসে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের পর্নগ্রাফি দেখার মৌলিক অধিকার রয়েছে। এরপরেও কেন নিষেধাজ্ঞা?
পরে প্রায় ৭০০টি সাইটের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশটির টেলিকম মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র শিশু পর্নগ্রাফি ও ব্লু ফিল্মের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।