ঢাকা: মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতরের আগে রমজান মাসে রোজাদার মুসলমান ব্যক্তিরা দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখেন। রমজান মাসে তাই রোজাদার ব্যক্তিদের খাদ্যাভ্যাসের নিয়ম-কানুন থাকে একটু ভিন্ন। তাই ঈদুল ফিতরের দিন খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে সবাইকে থাকতে হবে একটু সচেতন। কেননা এই এক দিনেই পুরনো প্রায় এক মাসের খাদ্যাভ্যাসে চলে আসে পরিবর্তন। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের নানা জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। এতে করে হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপা, বমি, ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যা।
ঈদের দিনগুলোতে প্রথমেই হঠাৎ করে বেশি বেশি খাবার খাওয়া ঠিক নয়। ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ বাড়ানো ভালো। ঈদে মিষ্টি, কেক, বাদাম, চর্বিযুক্ত খাদ্য খেতে হবে কম পরিমাণে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ও মসলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকেও যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। ঈদের দিনে অনেকেরই বদ হজম, বুক জ্বালাপোড়া করার সমস্যা হয়। হঠাৎ করে অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাবার গ্রহণের ফলেই মূলত পরিপাকতন্ত্রের এসব সমস্যা হয়। ঈদের প্রথম দিনে মানুষের খাদ্যগ্রহণের যে বিশাল একটা পরিবর্তন ঘটে এর জন্যই এ সময়টায় অনেকেই পেটের নানা সমস্যায় পড়েন।
ওই দিন অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি ও চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে রক্তে চিনি, চর্বির পরিমাণ বেড়ে উচ্চ রক্তচাপ, মুটিয়ে যাওয়া এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। তাই যারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের অবশ্যই ঈদের দিনগুলোতে খাবারের ক্ষেত্রে হতে হবে অনেক বেশি সচেতন। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পরিমাণে মাংস খাওয়ার কারণে হতে পারে বদহজম ও কোষ্টকাঠিন্য। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ঈদে অনেকেই খুব বেশি পরিমাণে কার্বনেটেড পানি গ্রহণ করেন, যা মোটেও ঠিক নয়।
ঈদেরদিনগুলোতেযাযাখেতেপারেন
সকালে সেমাই বা পায়েস খাওয়া আমাদের দেশে খুব প্রচলিত একটি ব্যাপার। সেমাই বা পায়েস খেতে পারেন, তবে অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণে নয়। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের কিন্তু মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করলেই ভালো। সেই সঙ্গে ফলের জুসও খেতে পারেন। তবে সাত সকালে আনারসের জুস না খাওয়াই ভালো। সকালের নাশতার আধঘণ্টা পর এক-দেড় গ্লাস পানি পান করুন।
বিভিন্ন ধরনের খাবার ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাবেন। খাবারের বেলায় একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প পরিমাণে খাবার খেতে পারেন। পোলাও, বিরিয়ানি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাবেন না। পোলাও বা বিরিয়ানি খেলে তার সঙ্গে অবশ্যই সালাদ (টমেটো, শসা) খেতে হবে। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন।তবে কোল্ড ড্রিংস পরিহার করাই ভালো হবে। খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে দই খাওয়া ভালো।
খাবারকতটুকুখাবেন, কীভাবেখাবেন
ঈদের দিনগুলোতে যে হরেক রকমের মজার মজার খাবার রান্না হবে তা যে একে বারেই খাওয়া যাবে না তা নয়। তবে যে কোনো খাবারই খেতে হবে পরিমিত, ক্যালোরি মেপে এবং ব্যক্তির শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী। একবারে বেশি পরিমাণে খেলে সেটা হজম না হয়ে মানুষের শরীরে চর্বি হয়ে জমা হবে। ফলে ওজন বাড়বে। তাই বারে বারে খাবেন, তবে কম ক্যালরি যুক্ত খাবার।
কখনোই খুব বেশি ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকবেন না। বেশি ক্ষুধার্ত অবস্থায় খেলে বেশি খাওয়া হবে। খাবার গ্রহণের বেলায় বরাবরের মতোই বেশি পরিমাণে গুরুপাক বা শাহী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
সকালে যদি হালকা খাবার খান তবে দুপুরে একটু ভারী খাবার খেতে পারবেন। বিকালে বা সন্ধ্যায় আবার হালকা নাশতা করতে পারেন। তবে রাতের বেলায় অবশ্যই কম খেতে হবে।
মিষ্টি জাতীয় খাবার, তেলে ভাজা ও বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। কেননা এসব খাবারের ফলে বদহজম তো হবেই, সেই সঙ্গে ওজনও বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগারের বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঈদের সময় পানীয় হিসাবে কোমল পানীয় পান না করে ডাবের পানি কিংবা লেবুর শরবত খাওয়া ভালো হবে। খাওয়ার পরে টক দই খেলে হজম ভালো হবে। বোরহানিও হজমে সহায়ক।
রাতের খাবার বাসায় হোক কিংবা কোনো দাওয়াতেই হোক না কেন, চেষ্টা করবেন অল্প খেতে। খাবার পর আর একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলো, রাতের খাবার খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে যাবেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাবেন।