বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে ভারত থেকে তিন হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হয়েছে। এক লাখ ৩০ হাজার ৪৩০ টন পণ্য আমদানি হয়েছে গত ২ মাসে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ২২ দশমিক ৪৪ মেট্রিক টন। তবে জুলাই ও আগস্ট মাসে রাজস্ব আদায় ১১৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেশি হয়েছে। দুই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৫৯৪ কোটি এক লাখ টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘চলতি বছরের দুই মাসে ছুটির হার বেশি ছিল। তাছাড়া বন্দরে পণ্যজট থাকায় ভারত থেকে ধীরগতিতে আমদানি হয়েছে। হয়রানি বন্ধ, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের দাবিকৃত ক্লিয়ারিং হাউস চালু হলে আমদানি-রফতানিতে গতি ফিরে আসবে এই বন্দরে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের মালামাল খালাস প্রক্রিয়া। আমদানিকারকরা সময়মতো তাদের পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে পণ্যজট। বন্দরের গুদাম থেকে পণ্য বের করার পর নতুন পণ্য ঢোকাতে হচ্ছে। জায়গার এ সংকটের কারণে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর অনুমতি মিললেও ক্রেন মিলছে না। ফলে জায়গা ও ক্রেন সংকটে বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বন্দর ব্যবহারকারীদের মেশিনারিসহ ভারি মালামাল লোড-আনলোডের সময় দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকতে হয় সিরিয়াল দিয়ে।
দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি করা হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস নেয়া সম্ভব নয়। পণ্য ধীর গতিতে ছাড় হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দর ব্যবহার করছেন। যে কারণে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি অনেকটা কমে গেছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার মারুফুর রহমান জানান, বছরের শুরুতে বাজেটে পরিবর্তন আসার কারণে আমদানি কিছুটা কম হয়ে থাকে। তাছাড়া ঈদসহ দুই মাসে সরকারি ছুটি বেশি থাকায় পণ্য আমদানি কম হয়েছে। তবে সামনের মাসগুলোতে আমদানি বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমদানি কম হলেও পণ্যের মূল্য যৌক্তিকীকরণ হওয়ার কারণে রাজস্ব আয় বেড়েছে। বেনাপোলকে আরো গতিশীল করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা একসাথে কাজ করছি।’
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। যেমন মোটর পার্টসের মূল্য আগে এক ডলার থাকলেও সেখানে করা হয়েছে তিন ডলার। এছাড়া ফেবিক্সসহ সব পণ্যের মূল্য কাস্টম বৃদ্ধি করায় আমদানিকারকরা পণ্য এনে বিক্রি করতে পারছেন না। যেকারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি কম করছেন।’