সিহাব ও মালা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাদের ভালোবাসা আকাশের মতো সীমাহীন। ভালোবেসে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মালার পরিবার। কিন্তু তাদের ভালোবাসার শক্তির কাছে পরাজিত হয় সব বাধা। বিয়ের একমাস পর অবশেষে এক হয়েছেন তারা। নবদম্পতিকে তানোর থানা পুলিশের সহযোগিতায় একত্রিত করেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তারা।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তারা জানান, রাজশাহীর তানোর উপজেলার চাপড়া গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে সুফিয়া আক্তার মালার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সিহাব ম-লের। সিহাব ম-ল রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা গ্রামের রেজাউল ম-লের ছেলে। সিহাব-সুফিয়া দুজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সিহাব প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ‘ভয়েজ অব বাংলাদেশ’ ঢাকায় কর্মরত। এক বছর আগে মোবাইল ফোনে তাদের পরিচয় হয়। এরপর পরিচয় থেকে প্রেম।
দৃষ্টিহীন এই যুগল তাদের সীমাহীন ভালোবাসার শক্তি নিয়ে গত ২২ আগস্ট গোপনে রাজশাহী মহানগরীর এক কাজী অফিসে বিয়ে করেন। বিয়ের তিন দিন পর ২৫ আগস্ট মালা তার স্বামীকে নিয়ে তানোরের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন।
তবে বিধি বাম। তাদের ভালোবাসার এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি মালার বাবা। ওই দিনই মালার বাবা ও তার পরিবারের সদস্যরা সিহাবকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। আর মালাকে আটকিয়ে রাখেন বাড়িতে। এরপর সিহাব জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী অফিসের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন।
মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি এবং প্রোগ্রাম অফিসার আব্দুস সালেক খান তানোর থানা পুলিশের সহযোগিতায় মালার বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে স্বামী সিহাবের হাতে তুলে দেন। মালার পরিবারের সদস্যরাও এ সময় তাদের বিয়ে মেনে নেন।
মালা বলেন, আমি প্রাপ্তবয়স্ক। আমরা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর স্বামীসহ বাড়িতে আসার পর পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তারা আমার স্বামীকে তাড়িয়ে দেন। আমাকে আটকিয়ে রাখেন। তবে যাই হোক, সব সমস্যা সমাধানের পর আমি সিহাবকে স্বামী হিসেবে পেয়ে সুখী।
সিহাব ম-ল বলেন, যারা আমাদের একত্রিত করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি মালাকে ভালোবাসি। আগামী কয়েকদিন রাজশাহী শহরে থাকব। এরপর মালাকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাব। গড়ে তুলব সুখের সংসার।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি বলেন, সিহাব ও মালা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তারা প্রাপ্তবয়স্ক। একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। তাই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে পুলিশের সহযোগিতায় এ জুটিকে আমরা একত্রিত করেছি। আশা করছি, তারা দাম্পত্য জীবনে সুখী হবেন।