বর্ষা মৌসুমে একসময় ভারী বৃষ্টিতে পাবনার নদী-নালা, খাল-বিলে দেখা মিলত নানা প্রজাতির নতু মাছ। কিন্তু সেদিন আর নেই। প্রাকৃতিক উৎসের নানা প্রজাতির মাছের এখন দেখা মেলে না। নির্বিচারের কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক জলাধারগুলো মজে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে সেসব মাছ।
তবে সেই অভাব ঘুচিয়ে দিচ্ছে পাবনার মানুষ। তারা গতানুগতিক চাষাবাদ থেকে বেরিয়ে গড়ে তুলছে মাছের খামার। পাবনায় খামারে-খামারে এখন খেলা করে রুপালি স্বপ্ন।
পাবনার সদর, আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, চাটমোহর ও সাঁথিয়া উপজেলায় পুকুর-জলাশয়ে চলছে বিভিণœ প্রজাতীর মাছের চাষ। আলোড়নও ফেলেছে বেশ। এতে মাছের চাহিদা যেমন মিটছে, তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। অনেক যুবকের ঘুচছে বেকারত্ব।
জেলার কন্দর্পপুর গ্রামের পান্নু মিয়া এবার ২০ বিঘা জমিতে মাছের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য চাষের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। তাই তিনি আরো ২০ বিঘা পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতে আগ্রহী। এ জন্য সরকারি সহযোগিতা চান তিনি।
পাবনার মিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান এবার দুই বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করেছেন। তিনি জানান, বছরে তার ব্যয় হয় এক লাখ টাকা। আর এই পুকুর থেকে তিনি বছরে মাছ বিক্রি করেন চার লাখ টাকার।
পাবনায় বেকার যুবকরা পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন মাছ চাষ। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকাপ, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে এই মাছ। এ জন্য জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাছের আড়ত। এসব বাজারে সহজেই মাছ বিক্রি করতেন পারছেন স্থানীয় চাষিরা।
ব্যাপক হারে মাছ চাষ হওয়ায় এর সঙ্গে জড়িতরা যেমন হচ্ছেন স্বাবলম্বী, তেমনি কর্মসংস্থান হচ্ছে আরো অনেকের। সুদমুক্ত ঋণ পেলে এই ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে আরো বহু মানুষের আয়ের পথ সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, পাবনা জেলায় বছরে ৫ হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন মাছের বিপরীতে ৬৪ হাজার ৭৯০ টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মাছ চাষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দুই লাখ মানুষ। চাষিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতার করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।