প্রাকৃতিক সবুজ শালবনে ঘেরা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ রাজেশপুর ইকো পার্ক। পার্কে ঢুকতেই পর্যটককে অভিবাদন জানাবে মৃৎ শিল্পের বিশাল ডানা মেলা ঈগল পাখি এবং সবুজ শাল ও জারুল গাছ। শোনা যাবে পাখির কিচির-মিচির ডাক। নির্জনতার খোঁজে এবং সবুজের মাঝে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে দর্শনার্থীরা এখানে এক সময় ভিড় জমাতেন। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব, অবকাঠামোগত সমস্যা ও পানির সংকটসহ নানা সমস্যায় এখানে দর্শনার্থী কমে গেছে। এতে এখন কেউ পার্কটি লিজ নিতে চায় না। প্রথম দিকে চার লাখ টাকা বছরে লিজ হলেও এখন তা দুই লাখে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা মহানগরীর ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে রাজেশপুর ইকো পার্ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালবাগ থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে। এ পার্কে স্থাপন করা বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মডেল, স্লিপার, দোলনা, বসার জন্য হেলানো চেয়ার ভেঙে আছে দীর্ঘদিন ধরে। পিকনিক স্পটগুলোতে পানির ব্যবস্থা নেই। সীমানা প্রাচীর না থাকায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হয়। দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় পার্কের গেইটের দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সামাজিক বন বিভাগ কুমিল্লার তথ্যমতে, ৫৮৭.৮৯ একর ভূমির উপর এ পার্ক। সাধারণভাবে এটি একটি শাল গাছের বন হলেও বর্তমানে প্রায় ৩০৬ একর শালবনের পাশাপাশি ৮৭ একর উডলট বাগান, ৭৩ একর কৃষি বন বাগান, ২৬০ একর বেত বাগান, তেলসুর, গর্জন, কাজু বাদাম, লোহা কাঠ, শোভা বর্ধনকারী গাছ, বাঁশ ঝাড়, কদম, জারুলের শোভা এখানে পর্যটকদের মোহিত করে। রাজেশপুর ইকো পার্কের উত্তর ও পূর্বে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত রাজেশপুরের এ বনাঞ্চলের গহিন অরণ্যে রয়েছে ব্যাপক প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য।
স্থানীয় জগপুর গ্রামের মো. সোলায়মান ও পলাশ চৌধুরী জানান, প্রাণীর মডেলগুলো ভেঙে আছে। সীমানা প্রাচীর নেই। নিরাপত্তা সংকটের কারণে এখানে মানুষ আসতে চায় না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে সম্ভাবনাময় পার্কটিতে দর্শনার্থী বাড়তো।
পার্ক গেইটের ব্যবসায়ী আহসান উল্লাহ ও ওমার ফারুক জানান, এখানে আগে অনেক দোকান ছিল। দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় ব্যবসা কমে গেছে। কয়েকটি দোকান বন্ধ, অন্যগুলোও বন্ধের পথে।
স্থানীয় সাংসদ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি দৃষ্টি দিলে পার্কটির উন্নয়ন হতো এবং ব্যবসায়ীদেরও উপকার হতো।
রাজেশপুর ইকো পার্কের ঠিকাদার এম এ আউয়াল জানান, এক বছরে দুই লাখ টাকায় লিজ নিয়েছেন। খরচ মিলিয়ে তা চার লাখে দাঁড়াবে। টিকিট বিক্রি করে এ টাকা উঠাতেও কষ্ট হবে। এখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হলে দর্শনার্থীরা আরো বেশি আকৃষ্ট হবে।
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, আরো কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে রাজেশপুর ইকো পার্ক বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। সীমানা প্রাচীর এবং নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী বছর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার কাজ, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও পানির ব্যবস্থা করা হবে।