বিশিষ্ট সাংবাদিক আতাউস সামাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। ২০১২ সালের এই দিনে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন খ্যাতিমান এই সাংবাদিক।
আতাউস সামাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনাতনে এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ।
সভায় প্রবীণ সাংবাদিক, কলামিস্ট কামাল লোহানী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওযাত আালী সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
এর আগে সকালে স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে আজিমপুর কবরস্থানে মরহুমের কবর জিয়ারত করা হবে।
আতাউস সামাদ ১৯৩৭ সালের ১৬ নভেম্বর ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আবদুস সামাদ ও মাতা সায়েরা বানু। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সতের দরিয়ায়। এ গ্রামে কেটেছে তার শৈশব-কৈশোর। তিনি পড়াশোনা করেছেন জলপাইগুড়ি, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও ঢাকায়। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ফজলুল হক হলের ছাত্র সংসদের প্রচার সম্পাদক ছিলেন।
সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় ১৯৫৬ সালে সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে। কাজ করেছেন সংবাদ, আজাদ ও পাকিস্তান অবজারভারে। ১৯৭০-’৭১ সময়ে করাচির দি সান পত্রিকার পূর্ব পাকিস্তান ব্যুরো চিফ ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) কর্মরত ছিলেন ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। তার শেষ কর্মস্থল দৈনিক আমার দেশ। তিনি এই পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নিউজ-এর বাংলাদেশস্থ সংবাদদাতা (১৯৮২-’৯৪), নয়া দিল্লিতে বাসস-এর বিশেষ সংবাদদাতা (১৯৭২-’৭৬) ছিলেন। এছাড়াও তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন (ইপিইউজে, ১৯৬৯, ১৯৭০) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বৈরাচার এরশাদের আমলে তাকে কারাভোগ করতে হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। অধ্যাপনা করেছেন ২০ বছর। সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘একালের বয়ান’। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন।
সংবাদ মাধ্যম ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। জীবনের অনেকটা সময় কেটে গেছে তার এ সেক্টরে। কখনো কলমে, কখনো কণ্ঠে লড়ে গেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে গোটা বাংলাদেশ যখন স্বৈরাচারের আতঙ্কে ছিল তখন বিবিসি থেকে রাষ্ট্রের কথা উঠে আসতো তার কণ্ঠে। মিডিয়ার সংখ্যা কম থাকায় তখন মানুষ দেশের খবরা-খবর জানতে রেডিওতে কানপেতে থাকতো। বঙ্গবন্ধু যে কয়েকজন সাংবাদিককে ভালোবাসতেন আতাউস সামাদ ছিলেন এর অন্যতম।