পাকিস্তানে ভারতীয় ‘অভিযান’: সাফল্যের পাল্টাপাল্টি দাবি
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১২:২৭:৩৩আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৩:০৪:২৮
পাকিস্তানে ভারতীয় ‘অভিযান’: সাফল্যের পাল্টাপাল্টি দাবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
কাশ্মির সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের কমান্ডো অভিযান ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা সামরিক অভিযানে ৩৮ জন জঙ্গি এবং দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। মাত্র ২৫ জন কমান্ডোর এই অভিযানে পাঁচটি জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বুধবার মধ্য রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অভিযান চালায়।
তবে পাল্টা দাবি করেছে পাকিস্তানী গণমাধ্যমগুলো। তারা জানিয়েছে, ভারতীয় আক্রমণ বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। একজন কমান্ডোকে আটকের পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে হত্যার দাবিও করেছে এই দেশের গণমাধ্যমগুলো। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীও ভারতের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে কল্পনাপ্রসূত প্রচার বলছে।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের সেনা ঘাঁটিতে বন্দুকধারীর হামলায় ১৭ সেনা নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। দুই দেশই সীমান্তে বিপুল সংখক সেনা মোতায়েন করেছে। পরিস্থিতিতে যুদ্ধাবস্থা বলা হচ্ছে।
ভারতের বিপুল সাফল্যের দাবি
পাকিস্তানি সীমানায় ভারতীয় হামলার কয়েক ঘন্টা পর পাকিস্তান সরকার নিহত দুই সেনা সদস্যের ছবি প্রকাশ করেছে। তারা হচ্ছেন, হাবিলদার জুম্মা খান এবং নায়ক ইমতিয়াজ।
ভারতের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের একজন সেনা সদস্য অস্ত্রসহ নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানে অভ্যন্তরে চলে গেছে। তবে তারা কোনো সেনা নিহতের খবর অস্বীকার করেছে।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ জন প্যারা কমান্ডোকে হেলিকপ্টারে করে কাশ্মির সীমান্ত্রের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নামিয়ে দেয়া হয়। এরপর হেলিকপ্টারটি ভারতের সীমান্তে ফিরে আসে। ভারতীয় সেনারা কাদা, পাথর এবং ল্যান্ডমাইন অতিক্রম করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে। তাদের লক্ষ্য ছিল পাঁচটি জঙ্গি আস্তানা। যেখানে প্রচুর সংখ্যক জঙ্গি ছিল। জঙ্গি আস্তানাগুলোর অবস্থান ছিল বিমবার, কেল, টাট্টাপানি এবং লিপা সেক্টরে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দলের ছয়টি জায়গা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তারমধ্যে তিনটি জঙ্গি আস্তানা পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতীয় কমান্ডোরা ট্যাভর, এম-৪ বন্দুক, গ্রেনেড এবং স্মোক গ্রেনেড ব্যবহার করে। তাছাড়া, তারা আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার(ইউবিজিএল), নাইট ভিশন ডিভাইস এবং ক্যামেরা সমৃদ্ধ হেলমেট ব্যবহার করেছে। অভিযানটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়েছিল। এতে ৩৮ জন জঙ্গি এবং দুজন পাক সেনা নিহত হয়। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ভারতের দুজন প্যারা কমান্ডো আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, হেলমেট ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যে পুরো অভিযানটি সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিৎ দোভাল এবং সেনা প্রধান জেনারেল দলবির সিং সোহাগ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অভিযানের সময় নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় শুরু হয় এবং শেষ হয় ভোর সাড়ে চারটায়।
পাকিস্তানের পাল্টা হামলার দাবি
পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন লিখেছে দেশটিতে আক্রমণকারী একজন ভারতীয় সেনা ধরা পড়েছে এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। তবে তারা নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করেনি।
তবে জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে পাক সেনাদের গোলাগুলিতে ১৪ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে জিও টিভির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং ক্যাপিটাল টক নিউজ প্রোগ্রামের উপস্থাপক হামিদ মীর বলেন, ‘আমার নিজস্ব সূত্র জানিয়েছেন, একটি সেক্টরে কমপক্ষে ১৪ জন ভারতীয় সেনা নিহত এবং আট জন আহত হয়েছে। অন্য একটি সেক্টরে ছয় জন আহত হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখার টাট্টা পানি সেক্টরে আট ভারতীয় সেনার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।’
হামিদ মীর আরও বলেন, ‘আরেকটি নিরপেক্ষ তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পৃথক একটি অভিযানে পাকিস্তানের নর্দান লাইট ইনফ্যান্ট্রি ছয় জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে।’
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাশ্মির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। বিমবার, হটস্প্রিং কেল, লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণ শুরু করলে পাক সেনারাও পাল্টা গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে দুজন পাক সেনা নিহত হয়েছে।