প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৬:১৫:১১আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৬:৩৪:৩২
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
হামলা-পাল্টা হামলার শঙ্কায় পালাচ্ছে সীমান্তবাসী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানে ভারতের ‘সেনা অভিযানে’র পর সীমান্তে উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। উরির সেনাছাউনিতে জঙ্গি হামলার পর থেকেই দৃশ্যত উত্তেজনা চলছে সীমান্তজুড়ে। সবশেষ বুধবার রাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে জঙ্গি আস্তানায় ভারতীয় সেনা বাহিনীর অভিযানের পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ভারতের অধিবাসীরা সরে যেতে শুরু করেছে। তারা ভ্যান ও পিক-আপে করে মালামাল নিয়ে নিরাপদ জায়গায় পাড়ি জমাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিচালিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে পাকিস্তানের ‘বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্য অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে।
ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দশ কিলোমিটার এলাকার গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার পরে এখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে পাক হামলার আশঙ্কা।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বা গোটা জম্মু-কাশ্মির রাজ্যে এ ধরনের কোনো নির্দেশ না দেয়া হলেও জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষ নিজ উদ্যোগেই সরে যাচ্ছে।
এদিকে, পাকিস্তান সীমান্তের কিছু এলাকা থেকে মানুষজন সরে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সূত্রগুলি বলছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে 'সার্জিকাল স্ট্রাইক' চালানো হয়েছিল বুধবার রাতে, তারপরে নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্য দিক থেকে গুলিবর্ষণ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জম্মুর ডেপুটি কমিশনার সিমরণদীপ সিংকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, অখনূর সেক্টরে পাকিস্তানি ফরোয়ার্ড পোস্ট থেকে গুলি চালানো হয়েছে রাত বারোটা থেকে দেড়টার মধ্যে। পল্লনওয়ালা, চপড়িয়াল আর সমনাম এলাকায় এই গুলি বর্ষণ হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর নেই।
এ ধরনের আরও হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় পাঞ্জাব আর জম্মু এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল জানান, বৃহস্পতিবার সকালেই যখন ‘সার্জিকাল স্ট্রাইকে’র ব্যাপারে জানানো হয়, তারপরেই সীমান্ত থেকে গ্রামবাসীদের সরিয়ে দেয়া শুরু করেছে সরকার।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ছয়টি সীমান্তবর্তী জেলার অন্তত এক হাজার গ্রাম খালি করা হচ্ছে। স্থানীয় গুরুদোয়ারাগুলো থেকে গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে মাইকে। প্রতিটি জেলায় গ্রাম খালি করা এবং মানুষদের দেখভালের জন্য একেক জন করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্কুলবাড়ি বা গুরুদোয়ারাগুলোতে রাখা হচ্ছে সীমান্ত অঞ্চল থেকে চলে আসা মানুষদের।
তবে যেসব মানুষকে গ্রাম থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকে বলছেন যে পেকে ওঠা ফসল ক্ষেতেই ফেলে রেখে তাদের চলে যেতে হচ্ছে। যদিও পাঞ্জাব সরকার বলছে ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি বা ফসলের ক্ষেত পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করছে তারা। সব পুলিশকর্মীর ছুটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল থেকেও মানুষজন হামলার আশঙ্কায় ঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন।
বিএসএফ-এর একজন কর্মকর্তা বলছেন, সরকারিভাবে সরে যাওয়ার কোনো নির্দেশ জারি হয়নি, কিন্তু অনেকেই আতঙ্কে ঘর ছাড়ছেন। বিশেষত জম্মু অঞ্চলে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি যেসব মানুষ থাকেন, তাদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে শ্রীনগর থেকে বিবিসি-র সংবাদদাতা রিয়াজ মাশরূর জানাচ্ছেন, দুই দেশের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
এর আগেও যখন যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে, সেইসব সময়ের কথা মনে করে বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছেন, গোলাবর্ষণ হলে সব থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে সীমান্তের মানুষদেরই পড়তে হয়। কখন কার বাড়িতে গোলা এসে পড়বে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।