ঢাকা: উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে বগুড়ায় যে ছয়টিতে ভোট হচ্ছে তার তিনটিই জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। দ্বিতীয় দফায় আরও যে ছয়টি উপজেলা নির্বাচন হবে সেখানেও দুইটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে বিএনপি নেতারা। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জেলাটিতে জামায়াতকে এভাবে প্রায় অর্ধেক উপজেলায় ছাড় দেয়া নিয়ে বিএনপির কর্মী-সমর্থক এবং নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ।
প্রথমদফা উপজেলা নির্বাচনে বগুড়ায় ভোট হচ্ছে ছয়টি উপাজেলায়। এগুলো হচ্ছে- সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, দুপচাঁচিয়া, শেরপুর এবং নন্দীগ্রাম। এরমধ্যে শেষ তিনটিতে জামায়াতকে সমর্থন জানিয়েছে জেলা বিএনপি। কিন্তু জেলা নেতাদের নির্দেশ অমান্য করে শেরপুর এবং নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বগুড়ায় সমঝোতা বৈঠকটি হয়েছে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আলমগীর হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং মীর শাহে আলমের মধ্যে। এই সমঝোতার পর সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন নন্দীগ্রাম, শেরপুর ও দুপচাঁচিয়া থেকে বিএনপি নেতাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়। জেলা বিএনপি শেরপুর উপজেলায় সমর্থন দিয়েছে জামায়াত নেতা দবির উদ্দিনকে। দবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ট্রাকে আগুন দিয়ে চালক হত্যাসহ নাশকতার একাধিক মামলা আছে। দল নির্দেশ দিলেও এই জামায়াত নেতার পক্ষে মনোনয়ন তুলে নিতে রাজি হননি বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান।
জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। কিন্তু এ আসনটি দলের হাইকমান্ড জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছে। যেটি আমি মনে করি নেতৃত্বের দুর্বলতা। এ কারণে আমি দলীয় নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করেই প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি এলাকার মানুষের ভালোবাসায় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবো।’
কেন এমনটি করা হচ্ছে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঐ সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী করতেই জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি নেতাদের ভিন্ন কৌশল বলে আমার কাছে মনে হয়।’
একইভাবে নন্দীগ্রামে জেলা বিএনপি সমর্থন জানিয়েছে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে। কিন্তু তা মানতে অস্বীকার করেছেন বিএনপির চার জন প্রার্থী। তারা কেউই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেনি জামায়াতের পক্ষে। এদের একজন হলেন ইলিয়াস আলী।
যোগাযোগ করা হলে ইলিয়াস আলী বলেন, ‘আমি হাল ছাড়িনি। নির্বাচনে আমি ভোট করছি। আশা করছি উপজেলা নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো। বিএনপি ভুল করেছে। আমি ভুল করবো না। অনেক নির্যাতন-হামলা-মামলা সহ্য করেছি। হাত-পা ভেঙ্গে গেছে। তাই নির্বাচনে মাঠে থাকছি।’
তবে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। এখানে দাঁড়িয়েছেন জামায়াতের আব্দুল গণি মণ্ডল। কিন্তু জেলা বিএনপির এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও এই উপজেলায় নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা তাদের ক্ষোভ জানিয়েছেন সাংবাদিকদের কাছে। কেবল প্রথম দফায় নয়, দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচনেও জামায়াতকে কাহলু এবং শাজাহানপুর উপজেলায় সমর্থন দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে জেলা বিএনপি। এরমধ্যে শাজাহানপুর উপজেলায় জাতীয় নির্বাচনে ভোট করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এখানে বিএনপি জামায়াতকে ছাড় দেবে এ বিষয়টি কল্পনাতেও ছিল না স্থানীয় বিএনপি নেতাদের। এই নিয়ে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষোভ।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশেই আমরা এসব উপজেলায় জামায়াতকে ছাড় দিয়েছি। এর বাইরে বেশি কিছু বলতে চাই না।’ তবে যেসব উপজেলায় জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে জামায়াতেরও জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে দাবি করেন শাহে আলম।
এ দিকে জেলা বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করেও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের সমর্থন না পেয়ে কিছুটা হতাশ জামায়াত। জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আলমগীর হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এটি স্থানীয় নির্বাচন। এখানে যা কিছু করা হয়েছে সব কিছু সম্মিলিতভাবে আলোচনার মাধ্যমেই করা হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে নজিরবিহীন সহিংসতার কারণে দেশ-বিদেশে নিন্দিত হয়েছে ১৮ দলীয় জোট। প্রকাশ্যে সহিংসতার দায় স্বীকার করতে না চাইলেও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এর জন্যে জামায়াতকে দায়ী করেছেন। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি ভোটের পর খোলামেলাভাবেই বলেছেন বিএনপির একাধিক নেতা। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতকে এভাবে ছাড় দেয়ায় কেন্দ্রেরও সমালোচনা করছেন অনেক নেতা। তবে এখন নাম প্রকাশ করে আপাতত কিছু বলতে চাইছেন না তারা।
উল্লেখ্য, প্রথম দফায় ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। আর দ্বিতীয় দফায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১৭টি উপজেলায় নির্বাচন হবে।
(ঢাকাটাইমস/৪ফেব্রুয়ারি/এসআর/এমএম)