logo ০৪ মে ২০২৫
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আলোর মুখ দেখবে কবে

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ২০:১১:১৮
image


ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সড়কে যারা যাতায়াত করেন যানজটের ভোগান্তি তাদেরকে বলে দিতে হবে না নতুন করে। ২৬ কিলোমিটার এই সড়ক পাড়ি দিতে কতক্ষণ সময় লাগবে, এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে, এমন সাধ্য কার? এর মধ্যের যে কোনো দুই থেকে তিন কিলোমিটার সড়ক পারি দিতেই কখনও কখনও লেগে যায় এক ঘণ্টারও বেশি।

স্বাভাবিক কর্মদিবসে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই সড়কে থাকে যানবাহনের প্রচ- চাপ। সড়কের তুলনায় গাড়ি বেশি হওয়ায় তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।

দীর্ঘ এই যানজটের কারণে কেবল মানুষ সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না, তা নয়, বিপুল পরিমাণ জ্বালানি অপচয় হওয়ায় দেশের আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে বিপুল পরিমাণ। আর পণ্য পরিবহন হয়ে পড়েছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। যুগ যুগ ধরে রাজধানীর এক অংশ থেকে অপর অংশের সড়ক যোগাযোগের এই করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেতার পর ক্ষমতায় এসে মহাজোট সরকার রাজধানীর যানজট নিরসনে বেশ কিছু উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পটি ছিল সবচেয়ে বড়। কিন্তু সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের সাফল্য এসেছে সবচেয়ে কম। অথচ এই সময়ের মধ্যে ঢাকাতে হয়েছে হাতিরঝিল, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়ালসড়ক, বনানী উড়ালসড়ক, কুড়িল ফ্লাইওভারের মতো প্রকল্প।  

নিত্যদিনের যানজটের ভোগান্তি দূর করার স্বপ্ন দেখিয়ে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। ওই বছরের ৩০ এপ্রিল বেশ ঘটা করে উদ্বোধনও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। কিন্তু যানজটের ভোগান্তি দূরের স্বপ্ন থেকে গেলো স্বপ্ন হিসেবেই। ২৬ কিলোমিটিার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজই শুরু হয়নি তিন বছরে।

নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শুরু করতে না পারার পরও চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। উল্টো গত ১৫ ডিসেম্বর একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবারও করা হয়েছে চুক্তি যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএমএস আকতার এই সময়কে বলেন, ২০১১ সালের তুলনায় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে বলে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে কিছুটা।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যয় হবে আট হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ তদারকিতে স্বাধীন পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় হচ্ছে ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা; এটিও সরকারের তহবিল থেকে বহন করা হবে। অর্থাৎ এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা;  প্রাথমিকভাবে যা ছিল ১১ হাজার ১০ কোটি টাকা।

উদ্বোধনের পরও কেন রাজধানীতে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির কাজ শুরু করা যায়নি, জানতে চাইলে সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. কবির আহমেদ বলেন, ‘চুক্তির পর এক্সপ্রেস ওয়েটির অ্যালাইনমেন্ট ও নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ওঠানামার র‌্যাম্পের অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এসব কারণে দেরি হয়ে গেছে’।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর প্রথম জটিলতা হিসেবে দেখা দেয় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। প্রথম নকশা অনুযায়ী উড়াল সড়কটি তৈরি করতে হলে বেশ কিছু আবাসিক ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙতে হতো। এ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন শুরু হয়। বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণের মতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বারবার পিছিয়েছে সেতু বিভাগ। এসব কারণে ২০১২ সালের ১৭ মে সড়কের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে দৈর্ঘ্য কমানো হয় চার কিলোমিটার।

কিন্তু এতে আয় কমে যাবে এই যুক্তি তুলে আপত্তি জানায় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। নকশা কিছুটা পরিবর্তন করে কুতুবখালী পর্যন্তই নির্মাণের প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন দিক যাচাই-বাছাই করে গত বছরের জুনে নতুন আরেকটি নকশা  অনুমোদন করে সরকার।

সংশোধিত নকশায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের ওপর দিয়ে এবং কমলাপুর থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ওপর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত এবং পরের অংশটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার অংশের ওপর দিয়ে যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করে কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে।

নকশার পাশাপাশি মহাখালী ও মালিবাগের র‌্যাম্পের অবস্থানেও পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির কাঠামোগত ধরনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যয় কমানোর জন্য এক্সপ্রেসওয়েটি বক্স গ্রিডারের বদলে আই গ্রিডারে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়েটি তিন অংশে ভাগ করে নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে একটি অংশ শেষ হওয়ার পরই তা চালু করা যাবে। পরিবর্তিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতেই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি  করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএমএস আকতার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেরি যা হাবার হয়ে গেছে। অচিরেই আমরা প্রকল্পটি শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, নকশায় কিছুটা বদল হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা কমেছে। ৪৩৬ একরের জায়গায় এখন ৩০ থেকে ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করলেই চলবে। এরই মধ্যে সরকার এ বিষয়ে নোটিস জারি করেছে। সেতু বিভাগ টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে। এ অবস্থায় আমরা এক মাসের মধ্যেই যানজট দূরীকরণে রাজধানীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।’

নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করা হবে। তবে এই সড়ক বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে না। টোল পরিশোধ করেই উঠতে হবে সড়কে। আর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে টোলের হার বাড়ানো হবে।

এই সড়কটি চালু হলে বিমানবন্দর মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই উঠানামার সুযোগ থাকবে। সময় এবং জ্বালানি বাঁচাতে টোল দিতে রাজধানীবাসীর কোনো আপত্তি থাকবে না বলেও মনে করছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে বাড়তি নজরদারি থাকবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।