logo ০৩ মে ২০২৫
নগরীতে পথচলায় এত জট!
তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
১৭ মার্চ, ২০১৪ ২১:২০:৫৫
image


ঢাকা: ছুটির দিন বা স্বাভাবিক কর্মদিবস, বলতে গেলে সারাবছরই রাজধানীতে চলাচল মানেই এক যন্ত্রণা। যানজট তো আছেই, এর বাইরে ইচ্ছামতো গন্তব্যে যানবাহন না পাওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে বাধ্য হওয়া, দখলের কারণে ফুটপাতধরে চলতে না পারা নগরবাসীর নিত্যদিনের সমস্যা। এসব সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে বারবার। কিন্তু সমাধান আসেনি মোটেও।

নগরবাসীর চলাচল সহজ করতে নানা প্রকল্প এবং উদ্যোগের কথাও শোনা গেছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু ভালো ভালো উদ্যোগ রয়ে গেছে পরিকল্পনাতেই। আবার সরকার উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের মতো বিপুল টাকা খরচে বড় বড় প্রকল্পে যে ধরনের গুরুত্ব দিচ্ছে, নগরীতে চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ আছে। নগরীতে বাস চলাচলের জন্য আলাদা একটি লেন চালুর উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি তিন বছরের বেশি সময়ে।

জানতে চাইলে নগরবিদ সারোয়ার জাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসের পাশাপাশি ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। নাহলে যানজটের   যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে না।’

বিশৃঙ্খলা বাস চলাচল : নগরীতে কোন রুটে কী কী বাস চলবে, একই সড়কে চলা বাসগুলোর মধ্যে কোনগুলো কোথায় থামবে সেগুলো ঠিক করে দিয়েছে বিআরটিএ। যেমন মিরপুর রোডে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে কোনোটির থামার কথা ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে, কোনোটির থামার কথা রাসেল স্কয়ারে। আবার যে বাস কলাবাগান থামবে সেটির পরের স্টপেজে থামার কথা নয়।

সব বাস একই স্টপেজে থামলে যাত্রার সময় বেশি লাগার পাশাপাশি সড়কে যানজট বাঁধবে এই যুক্তিতেই স্টপেজ এভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু রুট পারমিট নেওয়ার পর বাসগুলো আর এই নিয়ম মানে না। সব বাস থামে সব স্টপেজে। আবার নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়াও যাত্রী দেখলেই এখানে সেখানে থামে তারা। যাত্রীরাও সামান্য দূরত্ব হাঁটবে না বলে যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে উঠানামা করেন। এই অনিয়ম চলে এলেও দেখেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না বললেই চলে।

পুরানা পল্টন পুলিশ বক্সের সামনে কোনো বাসেরই নির্ধারিত স্টপেজ নেই। বাসগুলোর হয় গুলিস্তান থেকে নয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে যাত্রী তোলার কথা। কিন্তু দিনভর বাসগুলো পুলিশের সামনেই আইন অমান্য করে যাত্রীদের ডাকতে থাকে। এতে পেছনে গাড়ির দীর্ঘ সারিও লেগে যায়। অথচ এই মোড়ে বলতে গেলে সবসময় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।

এখানেই শেষ নয়। বাসগুলোর যাত্রী উঠানামার স্বার্থে বিভিন্ন এলাকায় সড়কে আলাদা জায়গা করে দিয়েছে সরকার। বাস নির্দিষ্ট জায়গার বদলে অন্যত্র থামলে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি সম্বলিত সাইনবোর্ডও টাঙানো আছে। কিন্তু এটাও মানে না বাসচালকরা।

ফার্মগেট এলাকায় এমন একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ‘এখানে বাস থামার কথা চিন্তাও করবেন না। থামলে জরিমানা করা হবে।’ অথচ এই সাইনবোর্ডের সামনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করতে দেখা গেল একাধিক বাসকে।   

ফার্মগেটের দুই পাশেই আছে দুটি বাস বে। সব রুটের বাসের এখানেই যাত্রী উঠানামা করার কথা। কিন্তু মিরপুর এবং গাবতলী রুটে যাওয়া বাসের কোনোটিই থামে না বাস বে তে। এগুলো দাঁড়ায় তেজগাঁও কলেজের সামনে। তাও একেকটি বাস দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘসময়। আর পাশাপাশি দুটি, কখনও তিনটি বাস দাঁড়িয়ে থাকায় গোটা রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায় কখনও কখনও।

বাংলামোটরেও আছে একটি বাস বে। কিন্তু বাস থাকে ঠিক তার আগে অথবা পরে। শাহবাগ মোড়ে পল্টনের দিকে যাওয়ার পথে বাস বে আছে বারডেম হাসপাতাল পার হয়ে কিন্তু বাস থামে বারডেম হাসপাতালের সামনে। এ কারণে বাঁ দিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ থাকে দিনভর। আবার শাহবাগ থেকে ফার্মগেট যাওয়ার পথে বাস বে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল পার হয়ে। কিন্তু বাস থামে শাহবাগ মোড় থেকে হাসপাতাল গেট পর্যন্ত। এতে পথচারীর পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা।

আবার ফার্মগেট যাওয়ার পথে কারওয়ানবাজার এলাকায় বাসের কোনো স্টপেজ না থাকলেও সেখানে দিনভর যাত্রী তোলে বাসচালকরা। এ রকম অননুমোদিত স্টপেজের সংখ্যা নেহায়েত কম নয় ঢাকায়।

যত্রতত্র বাস দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে এক চালক তার দায় ঠেলে দেন যাত্রীদের দিকে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘কি করুম ভাই, মাইনষে যেহানে সেহানে নামতে চায়, বাস না থামাইলে চিল্লায়। আবার যেইহানে যাত্রী পামু সেইহানে না থামলে আমগো কী অইবো।’

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান ঢাকাটাইমসে বলেন,   ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা না থাকায় এই সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। আর আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে যেন সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করলে এই সমস্যা সমাধান হবে।

নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কেবল পুলিশকে ব্যবস্থা নিলেই হবে না। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’

যততত্র পার্কিংয়ে চলাই দায় : রাজধানীর আয়তনের তুলনায় সড়কের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু যে সড়ক আছে এরও পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। সড়ক দখল, যত্রতত্র পার্কিং আর ঢাকা সিটি করপোরেশনের সড়ক ভাড়া দেয়া এর কারণ।

রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের মূল সড়কের একটি বড় অংশই ভাড়া দিয়ে রেখেছে সিটি করপোরেশন। এগুলোতে এ এলাকায় আসা গাড়ি পার্ক করা থাকে। এ এলাকায় পার্কিংয়ের জন্য সিটি করপোরেশন-ডিসিসির আলাদা ভবন থাকলেও তাতে গাড়ি পাঠান না মালিকরা। এ কারণে পার্কিংয়ের জায়গা তালা দিয়ে রেখেছে ডিসিসি।

৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে মতিঝিলে গাড়ি পার্কিং নিয়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে তর্ক করতে দেখা গেল দুজনকে। একজন বলছিলেন, ‘রাস্তার মধ্যে গাড়ি রাখলেন কেন?’ দ্বিতীয় ব্যক্তি জবাব দিলেন, ‘এটা তো পার্কিংয়ের জায়গা, গাড়ি রেখেছি, আপনার কী?’ প্রথম ব্যক্তি আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে গেলেন।

ওই এলাকায় কথা হলো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানালেন অফিস সময় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সড়কে গাড়ি পার্ক করা থাকে আর এ কারণে বাকি সড়কে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না গাড়ি। এই সমস্যা নতুন না হলেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ কখনও নেয়নি ডিসিসি।

এ রকম সড়ক ভাড়া দেওয়া হয়েছে নিউমার্কেট এলাকা ও কারওয়ান বাজার এলাকাতেও। সড়কের একটি বড় অংশে গাড়ি দাঁড় করে রাখা হয়, এ কারণে বাকি অংশে বেড়ে যায় যানজট।   

তবে সব সড়ক কিন্তু পার্কিংয়ের জন্য ভাড়া দেয়া থাকে না। তবু চিত্র মোটামুটি একই থাকে আবাসিক বা বাণিজ্যিক সব এলাকারই। সড়কের দুই ধারেই দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি আর এতে স্বাভাবিক চলাচলের পথ থাকে বন্ধ। পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও নিয়মিত এবং কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি।

খোলা থাকে না সড়কের বাঁ পাশ : মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে ফার্মগেট হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ দিয়ে মহাখালীর দিকে যেতে চাইলে নির্বিঘেœই যাওয়ার কথা গাড়িগুলোর। কারণ সড়কের একটি অংশই আছে এই পথ ব্যবহারকারীদের জন্য। পাশের অংশটি আছে ফার্মগেট দিয়ে কারওয়ানবাজার হয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কারওয়ানবাজারের দিকে যাবে এমন গাড়ির একটি অংশও সড়কের অন্য পাশ দিয়ে যায়। এই গাড়িগুলো সামনে আটকে থাকে ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনের মোড়ে। এতে করে মহাখালীর দিকে যাওয়া গাড়িগুলো আটকে থাকে এবং পেছনে বাঁধে দীর্ঘ যানজট। ডান পাশের সড়ক ছাড়লেই কেবল এ গাড়িগুলো কারওয়ান বাজারের দিকে যেতে পারে। এই মোড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও ব্যবস্থা নেয় না বললেই চলে।

মিরপুর বা মোহাম্মদপুর থেকে বিজয় সরণি হয়ে মহাখালীর দিকে যেতে চাইলেও পড়তে হয় একই বিড়ম্বনায়। ডান দিকে যাবে এমন গাড়িগুলো বাঁ দিকে চেপে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে বাঁ দিকে যাওয়ার সড়ক কখনও সরু কখনও একেবারেই বন্ধ থাকে। রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে বা শাহবাগ মোড় বা অন্য প্রায় সব সড়কেই এই দশা লেগে থাকে দিনভর। অথচ সড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ রাখতে বাঁ দিকের সড়ক খোলা রাখার নির্দেশনা আছে পুলিশের। কিন্তু উদ্যোগহীনতায় নির্দেশনা কাজে লাগেনি তেমন।

সিটি সেন্টারে নেই পার্কিং : রাজধানীতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং রোধে ডিসিসি ৯ বছর আগে নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বহুতল কার পার্কিং ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর একটিও চালু করা হয়নি। মতিঝিলের ‘সিটি সেন্টার’ নামে ৩৭তলার একটি ভবন নির্মাণ হলেও তাতে কোনো গাড়িই পার্ক করা হয় না।

২০০৫ সালের প্রথম দিকে মতিঝিলে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৯ সালে। ভবনটির ১০টি ফ্লোর রাখা হয়েছে গাড়ি পার্ক করতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর একটিও চালু হয়নি।

ভবনটিতে যে পথ দিয়ে গাড়ি পার্ক করার কথা, সেটি তালাবদ্ধ দেখা গেল। সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত এখানে একটি গাড়িও পার্ক করা হয়নি।

এ ভবনটি পড়ে থাকলেও গাড়ি পার্কিংয়ের আরও দুটি বহুতল ভবন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এর একটি হবে বনানীতে, একটি গুলশান-২-এ। ভবন দুটি নির্মাণে এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কারওয়ানবাজারে আরেকটি ভবন করতে চায় ডিসিসি। সেখানে ভবন তৈরির জন্য একটি জায়গাও ঠিক করেছে সংস্থাটি।

ফুটপাতে হাঁটার অধিকার হারিয়েছে পথচারীরা : নগরীতে যত বড় ফুটপাত দখল যেন তত বেশি। অস্থায়ী স্থাপনা তো বটেই, স্থায়ী স্থাপনাও তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি এলাকার ফুটপাতে। কোথাও কোথাও আবার ফুটপাত হকারদেরকে ভাড়া দিয়ে রেখেছে সিটি করপোরেশন।

নিউমার্কেট এলাকায় সড়কের দুই পাশেই বেশ প্রশস্ত ফুটপাত আছে। থাকলে কী হবে, কেউ হেঁটে যেতে চাইলে নামতে হয় সড়কে। কারণ ফুটপাতের একটি অংশ দখল করে নিয়েছে বইয়ের দোকানিরা আর বেশিরভাগ অংশই কাপড় বা গৃহস্থালী পণ্য বিক্রি করা হকাররা। ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাতে রীতিমতো স্থায়ী দোকান তৈরি করে নানা পণ্য বিক্রি চলছে। সিটি করপোরেশন এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের যোগসাজশে এই দখল চলে আসছে বরাবর। বছর চারেক আগে এই ‘দখল’কে রীতিমতো বৈধতা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ফুটপাত হকারদের কাছে ভাড়া দিয়েছে তারা।

মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, ফার্মগেট, গুলশান, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, মৌচাক, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, ইংলিশ রোড, তাঁতীবাজারসহ প্রায় সব এলাকার একই রকম চিত্র। তবে সব জায়গায় ফুটপাত ভাড়া দেয়নি ডিসিসি। যে দলই ক্ষমতায় থাকে তাদের দলের যুব এবং ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে এসব ফুটপাত। এ থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলে নেতা-কর্মীরা। আর এর একটি ভাগ পুলিশের কাছেও যায় বলে জানিয়েছেন হকাররা।

হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থান আকৃতি ভেদে চাঁদার পরিমাণে পার্থক্য হয়ে থাকে। যারা ছাউনি টাঙিয়ে বা চৌকি বিছিয়ে কাপড় বিক্রি করেন, তাদের চঁাঁদার হার একটু বেশি। গুলিস্তান এলাকায় এ ধরনের ব্যবসার জন্য হকারদের দিনে দিতে হয় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা চাঁদা। মতিঝিল ও ফার্মগেট এলাকায় চাঁদা দিতে হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, নিউমার্কেট এলাকায় চাঁদা দিতে হয় ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ভাসমান হকারদের ক্ষেত্রে চাঁদার হার অবশ্য কম। এদেরকে দিনে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দিলেই চলে।

ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় পুনর্বাসনে সরকারের উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছু। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ছুটির দিন কিছু সড়কে হকারদের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলেও তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। প্রথম কদিন হকাররা আইন মেনে চললেও পরে আবার ফুটপাতেই ফিরে যায় তারা।

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পুলিশের নিয়মিত এবং কার্যকর কোনো অভিযান তো নেই-ই, বরং গতবছর এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, আদালতের আদেশ নিয়ে এলে তারা ফুটপাত দখলমুক্ত করবেন।    

জানতে চাইলে নগরবিদ সারোয়ার জাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। সরকারকে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে। হকারদেরকে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও বুঝতে হবে। যারা ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন তিনি।

ফুটপাতে মোটরসাইকেলের উপদ্রব : নানা বাধা পেরিয়েও হেঁটে যেতে যারা ফুটপাত ব্যবহার করেন, তাদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোটরসাইকেল। মূল সড়কে যানজট দেখলেই ফুটপাতে উঠে যায় এই দ্বিচক্র যান। কেবল ফুটপাতে চলে তা নয়, হর্ন বাজিয়ে পথচারীদেরই ফুটপাত থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করতে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালকদের।

এ নিয়ে   নগরবাসী রীতিমতো বিরক্ত। ফার্মগেট এলাকায় একজন পথচারী ক্ষোভের সঙ্গে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কী বলবো ভাই, মাঝেমধ্যে এত রাগ ওঠে যে, মন চায় ধরে মারি। কিন্তু রাস্তাঘাটে বিরোধে জড়াতে চাই না বলেই নেহায়েত কিছু বলি না।’

নগরবাসীর এই বিরক্তির কারণে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উচ্চ আদালতও। বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান এবং বিচারপতি হাবিবুল গণির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১২ সালের ৫ মার্চ ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বলতে গেলে কিছুই করেনি পুলিশ। বরং মাঝেমধ্যে পুলিশকেও একই কাজ করতে দেখা যায়।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সামনেও নিবো। মানুষ যদি সচেতন হয় তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

আবার ২০০৮ সালে নগরীর মূল সড়কগুলোতে হর্ন বাজানো নিষেধ করেছিল পুলিশ। তখন হর্ন বাজালে জরিমানার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল বাহিনীটি। পরিবেশ অধিদপ্তর নানা সময় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে হর্নের বিপদ সম্পর্কে জানিয়েছে মানুষকে। উচ্চ শব্দের হর্ন মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে অধিদপ্তর। কিন্তু নিজের জারি করা নির্দেশনা ভুলে গেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান ঢাকাটাইমসকে বলেন, এটা আমাদের মানবিক মূল্যেবোধ অবক্ষয়ের কারণে হচ্ছে। আমরা ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি আফ্রিকার অনেক দেশেই দেখেছি মানুষ যখন হেঁটে যায় তখন গাড়ির চালক হর্ন বাজায় না। আর এই অপরাধ যদি দেশের ৫ শতাংশ মানুষ করত তাহলে একটা সমাধান করা যেতে পারত। এই অপরাধ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই করে থাকে।

অটোরিকশাচালকের দৌরাত্ম্যে অসহায় যাত্রীরা : ৫ মার্চ বেলা ৩টা। রাজধানীর পলাশীর মোড়ে ছিলেন মোস্তফা হোসাইনী। যাবেন সায়েদাবাদ। পথের দূরত্ব বড়জোর ৯ কিলোমিটার। মিটারে গেলে পথে আধা ঘণ্টা ওয়েটিং চার্জ হলেও ভাড়া হওয়ার কথা বড়জোর ১২৫ টাকা। কিন্তু চালক চাইলেন আড়াইশ টাকা।

এ নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ মোস্তফা হোসাইনী। রাগান্বিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই দেশে যেন কোনো নিয়ম নাই। আর কতদিন এ রকম চলবে।’

সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালুর সময় কথা ছিল মিটারে চলবে বাহনগুলো আর যাত্রীরা যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই যেতে বাধ্য হবে চালকরা। কিন্তু একদশকের বেশি সময়েও এই দুটি আইন মানাতে চালকদের বাধ্য করতে পারেনি সরকার।

মিটারে গেলে লাভ হয় না, চালকদের এমন অজুহাতে সরকার অটোরিকশা ভাড়া বাড়িয়েছে তিন দফা। প্রতিবার ভাড়া বাড়ানোর সময় মিটারে না গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি সরকার। আবার চালকদের অভিযোগেরও সমাধান হয়নি। মালিকরা চালকদের কাছ থেকে দিনে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ আদায় করলেও তা ঠেকাতে পারছে না সরকার।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর বেঁধে দেওয়া ভাড়া অনুযায়ী অটোরিকশাচালকরা প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ভাড়া ২৫ টাকা এবং পরের প্রতি কিলোমিটার সাত টাকা হারে ভাড়া পাবেন। আর সড়কে যানজটে আটকা থাকলে প্রতি মিনিটের জন্য তারা পাবেন ১ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু এসব হিসাব এখন গৌণ হয়ে গেছে। অটোরিকশা চলে চুক্তিতে। আর এ জন্য কখনও দ্বিগুণ কখনও তার চেয়ে বেশি ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের। বেশি ভাড়া নিলেও যাত্রীদের ইচ্ছামতো গন্তব্যে চালকদের যাওয়ার উদাহরণ একেবারেই বিরল।

বকশিবাজারে মাদ্রাসা বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশাচালক আজিজুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘কি আর করুম ভাই, মালিককে ১২ ঘণ্টার জন্য দেওয়া লাগে ৭৫০ ট্যাকা। উপায় না পায়া বেশি করি ভাড়া নেই।’

(ঢাকাটাইমস/১৭ মার্চ/ টিএ/এআর)