ঢাকা: তথ্যটা শিউরে ওঠার মতো। শিশুটি গেছে স্কুলে, গেছে খেলতে বা বন্ধুদের সঙ্গে খানিকটা সময় কাটাতে। কিন্তু শিশুটি আর ফেরে না। এক দিন যায়, দুই দিন যায়, ঘরের মানুষরা কেবল কাঁদে। সাত-দিন, আট-দিন পর সে কান্না আরও বাড়ে। শিশুটিকে পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যার খালে। হাত-পা বাঁধা, গলায়, বুকে বা সারা শরীরে জখম।
কারও আদরের সন্তান, প্রাণপ্রিয় ভাই বা ভাগ্নে-ভাস্তের এমন পরিণতির কথা ভাবাও মানুষের সাধ্যের বাইরে। অথচ রাজধানী লাগোয়া জনপদ নারায়ণগঞ্জে যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে এভাবে শিশুহত্যা। একটি-দুটি নয়, ২১টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে। তবে ২০১৩ সালের মার্চে কিশোর ত্বকী হত্যার ঘটনাটি যেভাবে আলোড়ন তুলেছে বাকি হত্যাগুলো আলোচনায় আসেনি তেমন। আর সব চেয়ে আলোচিত ত্বকি হত্যার যেখানে বিচার শুরু হয়নি, সেখানে বাকিগুলোর তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে তা সহজেই অনুমেয়।
এভাবে একের পর এক শিশু হত্যা নিয়ে বন্দরনগরীতে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। এমনিতে জনপদটি সন্ত্রাসকবলিত হিসেবে চিহ্নিত। এ অবস্থায় গত এক বছরের এ পরিসংখ্যানটি নিঃসন্দেহে ভয় জাগানিয়া। জেলার অভিভাবকরা শিশুদেরকে এখন চোখের আড়াল করতে চান না। এতে শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপন, যেমন খেলাধুলা আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে দিতে চান না অভিভাবকরা। এতে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কথা হচ্ছে শিশুরা কেন আক্রমণের শিকার। অন্যদের মতো নারায়ণগঞ্জবাসীও বুঝতে পারছে না এ রকম নৃশংসতার কী মানে। তবে একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বড়দের ওপর প্রতিশোধ নিতেই খুন করা হয়েছে শিশুদেরকে। যদিও পুলিশ সব কটি হত্যা একসঙ্গে মেলাতে চায় না। তারা বলছে, প্রতিটি হত্যাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
স্থানীয় সাংবাদিক শরিফ উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে শিশু হত্যার প্রবণতা কখনই ছিল না। মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যার পর থেকেই শিশু হত্যার প্রবণতা বাড়ছে।’
হত্যার শিকার কিশোর ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী বলেন, ‘খুনের পর পার পেয়ে যাবার সংস্কৃতিই খুনিদের উৎসাহিত করছে।’ সংস্কৃতিকর্মী আরিফ বুলবুল বলেন, যখন একজন আরেকজনকে চাপে ফেলতে চাচ্ছে, দেখে নিতে চাচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে তারা প্রতিপক্ষের শিশুটিকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ মোদক বলেন, ‘শিশুদের নিরাপত্তায় রাষ্ট্র এবং সমাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে হত্যার সংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা কমলেও শিশু হত্যার সংখ্যা বেড়েছে। কী কারণে এমনটা হচ্ছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন. ‘আসলে একেকটা ঘটনার গতি-প্রকৃতি আলাদা। সব ঘটনাকে এক সাথে মেলালে চলবে না। আমরা সব ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি দোষী ব্যক্তিরা শাস্তির আওতায় আসবে।’
ত্বকী হত্যা
২০১৩ সালের ৬ মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। দুদিন পর তার মরদেহ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীর খালে। গত এক বছরেও এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত এ মামলায় সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, সালেহ রহমান সীমান্ত, রিফাত বিন ওসমান, তায়েফ উদ্দিন জ্যাকি নামে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর এ ঘটনায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমীর ওসমানসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে র্যাব। যেকোনো দিন এটা আদালতে জমা দেওয়া হবে।
রাসেল হত্যা
২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল ফতুল্লার ইসদাইরে খুন হয় কিশোর ফুটবলার রাসেল। আড্ডার সময় ইভান নামে এক ছেলের সঙ্গে তার বাগবিত-া হয়। এর এক পর্যায়ে রাসেলকে ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। হত্যা করে পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রাখা হয়। মামলার অভিযোগপত্রও দিয়েছে পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি ইভান গত ১২ মার্চ জামিন পেয়েছেন।
ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, ‘এ ঘটনায় অপরাধের দায় স্বীকার করে দুইজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এটি এখনো বিচারাধীন।’
ইমন হত্যা
২০১৩ সালের ১৩ জুন ফতুল্লা থানার বক্তাবলীতে নয় টুকরো করে খুন করা হয় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র শিশু ইমনকে। এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর আসামিদের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এদের মধ্য থেকে কয়েকজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। মামলাটি এখনো শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সাইফুল ইসলাম।
জিয়াদ হত্যা
২০১৩ সালের ২৮ জুন ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ এলাকায় চার বছরের শিশু জিয়াদকে হত্যা করে ছুঁড়ে ফেলে খুনিরা। পরদিন মরদেহ ভেসে উঠলে কাঁচপুরের কুতুবপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে এ ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না ফতুল্লা থানা পুলিশ।
নাজমুল হত্যা
২০১৩ সালের ৯ জুলাই ফতুল্লা থানার পাগলার নয়ামাটি মুসলিমপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে খুন হয় পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র নাজমুল। এ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের মধ্যে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। যেকোনো সময় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মাহবুবুল হত্যা
গত বছরের ২২ জুলাই আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের শালমদী নয়াপাড়া গ্রামে খুন হয় শ্রীনিবাসদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মাহবুবুল হাসান। মাহবুবুল নয়াপাড়া গ্রামের পাওয়ারলুম শ্রমিক মোস্তফা হোসেনের ছেলে। চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গ কেটে হত্যা করা হয় মাহবুবকে। এ মামলায়ও পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে পারেনি।
রমজান শিকদার হত্যা
২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শেরপুরের নকলায় পাওয়া যায় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রমজান শিকদারের মরদেহ। রমজানের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, ১০ হাজার টাকার জন্য তিনজন ভাড়াটে সন্ত্রাসী রমজানকে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নকলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জে মামলা হয়েছে।
পরিচয় মেলেনি পাঁচ মাসেও
২০১৩ সালের ২ নভেম্বর জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে অজ্ঞাত এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, শীতলক্ষ্যা নদীর সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর পাশের বালুর মাঠ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বয়স ৭-৮ বছর।
শিশু সালমানের প্রাণ গেছে গুলিতে
২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর ভোরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতরা গুলি করে হত্যা করে শিশু সালমানকে। বন্দরের কেরামতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত সালমান।
ঘটনার দিন পার্শ্ববর্তী বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। এ সময় চিৎকারে বাড়ির লোকজন বেরিয়ে এলে ডাকাতরা সালমানের বুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সালমান। এ ঘটনায় পুলিশ কয়েক ডাকাত সদস্যকে আটক করে। এর মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার মোরশেদ জানান, মামলা তদন্ত শেষ পর্যায়। শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
জিদনী হত্যা
২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় খুন হয় ছয় বছরের শিশু ওমর ফারুক জিদনী। শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পাঁচদিন পর তার সন্ধান পাওয়া যায়। অভিযোগ ওঠে, শিশুটির বাবা রফিকুল ইসলামকেই এ ঘটনার জন্য সন্দেহ করছে পুলিশ। তবে রফিকুল ইসলামের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বন্দর উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বিয়ে করেছেন দুটি। প্রথম স্ত্রী রোজিনা বেগমের ছেলে ছিল জিদনী। রফিকুলের নির্যাতনের কারণে ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান রোজিনা। এরপর সেই বাড়িতে গিয়েও রফিকুল জিদনীকে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করত। টাকা না দেওয়ায় ওই বছরের ১৩ নভেম্বর জিদনীকে রফিকুল চুরি করে নিয়ে আসে বলে অভিযোগ করেছেন রোজিনা। পাঁচদিন পর টিপরদী এলাকায় সেফওয়ে সিএনজি পাম্পের পেছনে শিশু জিদনীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় মামলা হয়েছে সোনারগাঁও থানায়। তবে মামলার অগ্রগতির বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হক কিছু বলতে পারেননি।
সিয়াম হত্যা
২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর নগরীর মাসদাইর এলাকায় খুন করা হয় ১০ বছরের স্কুলছাত্র সিয়াম আহমেদকে। ২৩ নভেম্বর তার মরদেহ উদ্ধার হয় মুন্সিগঞ্জ থেকে।
এ হত্যার দায়ে মেহেদি নামে একজনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন সিয়ামের বাবা মোস্তফা মাতব্বর। মেহেদির বাবা ফারুক ম-ল জামিনে বের হয়ে এসে সিয়ামের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিয়ামের বাবা।
ঢাকাটাইমসকে মোস্তফা মাতব্বর জানান, কিছু দিন আগে তার মেঝো ছেলে রিফাতকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। প্রধান আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।’ সিয়ামের বাবাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেব।’
জোড়া শিশু হত্যা
গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে স্কুল থেকে কাঁচপুর ওমর আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জাহিদুল ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সাকিম নিখোঁজ হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর বারগাঁও বেড়িবাঁধের ওপর প্লাস্টিকের বস্তার ভেতরে জাহিদুলের গলাকাটা মরদেহ পাওয়া যায়। চার দিন পর বেড়িবাঁধের অপর পারে প্লাস্টিকের বস্তার ভেতরে সাকিনের ভাসমান মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ জানায়, সাকিমের সৎ ভাই জাহিদুলকে দিয়ে সাকিমকে ডেকে আনে হত্যার পরিকল্পনাকারীরা। পরে জাহিদুল ও সাকিম দুজনকেই অপহরণ করে নিয়ে যায়। সাকিম হত্যার যেন সাক্ষী না থাকে, সে জন্য জাহিদুলকেও হত্যা করা হয়।
হাবিব হত্যা
গত ২৪ জানুয়ারি সদর উপজেলার সৈয়দপুর আলামিননগর এলাকায় হাবিব নামের তিন মাসের এক শিশুকে খুন করা হয়। পুলিশ এবং স্থানীয়রা জানান, হাবিবের বাবার সাথে প্রতিবেশী লক্ষ্মী রানীর বাকবিত-া হয়। এর জের ধরে হাবিবের বাবাকে ঘুষি মারেন লক্ষ্মী রানী। একটি ঘুষি হাবিবের মাথায় লাগলে তার নাক-মুখ দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরতে থাকে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর লক্ষ্মী রানীকে আটক করেছে পুলিশ। মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ। শিগগিরই এটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মঞ্জুর কাদের।
ইমন হত্যা
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কামতাল এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্র রফিকুল ইসলাম ইমন নিখোঁজ হয় গত ২৯ জানুয়ারি। ঘটনার ৩৬ দিন পর গত ৬ মার্চ তার বস্তাবন্দি মরদেহ পাওয়া যায় একটি ডোবা থেকে।
নিহত ইমনের মা ফেরদৌসি বেগম জানান, এ ঘটনায় তারা মামলা করলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু আসামির স্বজনরা মামলা তুলে নিতে বারবার হুমকি দিচ্ছে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার মোরশেদ জানান, ‘ইমন হত্যা মামলায় অংশ নেয় পাঁচজন। এর মধ্যে তিনজন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি দুই আসামির মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যজনকে ধরার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মোস্তফা হত্যা
ফতুল্লার কুতুবাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মোস্তফা নিখোঁজ হয় ২ ফেব্রুয়ারি। তার হাতে থাকা মোবাইল ছিনিয়ে নিতে চাইলে বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া হয় মোস্তফার। এ ঘটনার জেরে শিশুটিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পিটালীপুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে পাওয়া যায় মোস্তফার মরদেহ। ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
খুন হয়েছে দুই বছরের শিশু মাহফুজও
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে খুন করা হয়েছে দুই বছরের শিশু মাহফুজকে। তাকে গলাটিপে হত্যার পর ফেলা হয় ডোবায় যা পুলিশ উদ্ধার করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি। এ ঘটনায় সমেলা বেগম নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ‘সমেলা বেগম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযোগপত্রও চূড়ান্ত হয়েছে। যেকোনো সময় আদালতে জমা দেওয়া হবে।’
বাবার হাতে শিশু হত্যা
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দি ইউনিয়নের বিশনন্দি গ্রামে খুন হয় চার মাসের শিশু রাহিমা। তাকে তার বাবা দেলোয়ার আছড়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, দেলোয়ারকে তারা গ্রেপ্তার করেছেন। এ মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে। চলতি মাসেই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
শান্তা হত্যা
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মর্তুজাবাদ এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে চার বছর বয়সী শান্তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শান্তার বাবা সাদেকুর রহমান অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহ আগে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের ঝগড়া হয়। এর পর দিন থেকেই শান্তা নিখোঁজ হয়।
থানার উপ-পরিদর্শক তারিফুজ্জামান জানান, শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
সাব্বির হত্যা
গত ১৬ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার দশদিন পর নগরীর গোপচর এলাকায় শীতলক্ষ্যার একটি শাখা নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সাব্বির হাসানের মরদেহ। ৭ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিল সে। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
নারায়ণগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি এখনো।
(ঢাকাটাইমস/ ২৫ মার্চ/এমএম)