logo ০১ মে ২০২৫
৭ নেতার অবৈধ সম্পদ ৪ হাজার কোটি টাকার
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
০৮ জুন, ২০১৪ ১০:৪৩:৩৭
image


ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় নবম জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং মহাজোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সম্পদের হিসাব নিয়ে তোলপাড় হয়েছে সারা দেশে। এদের সাতজনের সম্পদ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। এখন পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাদের অনুসন্ধান সংস্থাটির কর্মীদের মধ্যে ছড়াচ্ছে বিস্ময়। সাবেক ও বর্তমান সাত সংসদ সদস্যের সম্পদ পাওয়া গেছে চার হাজার কোটি টাকার।

তবে প্রতিবেদন এখনো চূড়ান্ত করেনি তদন্ত কর্মকর্তারা। যে সম্পদের কথা বলা হচ্ছে সেটা প্রাথমিক মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সম্পদ আরও বাড়তে পারে।   

গত ২২ জানুয়ারি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি এবং সাতক্ষীরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল জব্বারের অবৈধ সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। এখনো চলছে সেই অনুসন্ধান।  

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কথিত অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে আমরা অনুসন্ধান করছি। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। তাই আমরা এখন তো তাদের অবৈধ সম্পদের কথা বলতে পারছি না। তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। দুদকের বিধান অনুযায়ী এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে অভিযুক্তদের ব্যাপারে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি। তারা তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। তারা প্রতিবেদন জমা দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

শত শত কোটি টাকা একজনের

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা সাতজনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে এবং সরেজমিন গিয়ে হলফনামায় উল্লিখিত সম্পদ বিবরণ যাচাই-বাছাই শেষে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এসব অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন। দুদকের হিসাবে, এই সাতজনের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।

তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরে দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান সাংসদ-মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা অনেক অসংগতিও পেয়েছেন। অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী কমিশনে জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। এরপর তাঁরা আবার সময় চেয়ে নিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, ওই সাতজনের সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের হলফনামার বাইরে অবৈধ সম্পদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের সংগ্রহে রয়েছে। এই সম্পদের বেশির ভাগই হলফনামায় কৌশলে গোপন করেছেন তাঁরা। এসব বিষয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সঠিক জবাবও দিতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই সাতজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে এনা প্রপার্টিজের মালিক ও রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের।

দুদকের অনুসন্ধানে এনামুল হকের প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে। আর কক্সবাজারের এমপি আবদুর রহমান বদির সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার। সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের পাওয়া গেছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ। সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের রয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বর্তমান সংসদ সদস্য আসলামুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল জব্বারেরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে।

এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। অনেকেরই সম্পদের হিসাবে অসংগতি পাওয়া গেছে। তবে অনুসন্ধানের স্বার্থে এ মুহূর্তে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের কর্মকর্তারা শুধু তাঁদের দেওয়া হলফনামা বা আয়কর বিবরণীই পর্যালোচনা করবেন না, তাঁদের আরো কোনো সম্পত্তি আছে কি না তাও খতিয়ে দেখবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপিদের অবৈধ সম্পদের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে হলে দুদক শতভাগ সতর্কতার সঙ্গে এটি করতে হবে। এখানে নানামুখী চাপ থাকতে পারে, সেগুলোকে ওভারকাম করে অনুসন্ধান করতে হবে। আর এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে যে সম্পদের খোঁজ দুদক পেয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এ বিষয়ে দুদককে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।’  

দুদক সূত্র জানায়, দায়িত্ব পাওয়ার পর দুদকের কর্মকর্তারা সাতজনের নির্বাচনী হলফনামা চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। নির্বাচন কমিশন তাদের হলফনামা দেয়। এর পাশাপাশি কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের হিসাবের স্বাভাবিকতা-অস্বাভাবিকতা যাচাই-বাছাই করতে কর ফাইল খতিয়ে দেখেন। কক্সবাজারের সাংসদ আবদুর রহমান বদির এলাকা পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি বদিকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আবদুল মান্নান খানকে। ২৩ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মাহবুবুর রহমানকে। পরদিন দুদকে যান রুহুল হক। সাতক্ষীরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল জব্বারকে ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হককে ৫ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

নিজেদের সব তথ্য অনুসন্ধান শেষে তদন্ত কর্মকর্তারা সাত মন্ত্রী-এমপিকে সাতদিনের সময় দিয়ে নিজের, স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ দেন। নোটিশপ্রাপ্তির পর কয়েকবার সময় চেয়ে মন্ত্রী-এমপিরা সম্পদ বিবরণী দুদকের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরীর কাছে জমা দেন। তাদের অনেকেরই কর ফাইল, দশম জাতীয় সংসদে জমা দেওয়া নির্বাচনী হলফনামা এবং সম্পদ বিবরণীর মধ্যে অসংগতি খুঁজে পান অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় আবদুল মান্নান খান তাঁর আয়ের একটা বড় অংশ মৎস্য খামার থেকে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মৎস্য ও রেমিট্যান্স থেকে আয় ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। কিন্তু দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মান্নান খানের উল্লেখ করার মতো কোনো মৎস্য খামার পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানের জন্য মান্নান খানের গ্রামের বাড়ি ঢাকার দোহারে যান দুদকের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দীন। এছাড়াও মান্নান খান তাঁর পেশা আইন উল্লেখ করলেও এ থেকে আয় নেই বললেই চলে। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা থাকলেও সরকার তা প্রত্যাহার করে নেয়।

মান্নান খান ও তাঁর স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার কর ফাইলেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পায় দুদক। সৈয়দা হাসিনা সুলতানার কর ফাইল অনুযায়ী তার সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৫২ টাকা ৩৬ পয়সা। এর মধ্যে গত এক বছরেই তার প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে। তিনি গৃহিণী হলেও গত ডিসেম্বরে মান্নান খান তাঁর নির্বাচনী হলফনামায় তাকে একজন ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেন।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

অবৈধ সম্পদের হিসাব সম্পর্কে আবদুল মান্নান খানের কাছে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এতগুলো সম্পদ কল্পনাও করতে পারি না। এগুলো স্বপ্নেরও বাইরে। আমার হলফনামার বাইরে এক টুকরা সম্পদও নেই। যারা দুর্বৃত্তদের প্রতিনিধিত্ব করে তারাই এগুলো বলে। কারণ মান্নান খান অনেক দুর্বৃত্তের মুখোশ উন্মোচন করেছে।’  

অবৈধ সম্পদের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পটুয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মাহবুবুর রহমানকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।

সবচেয়ে বেশি সম্পদের সন্ধান পাওয়া এনামুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। সবকিছু মনগড়া। আমি টেলিফোনে এর বেশি কিছু বলব না।’

এ বিষয়ে ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ আসলামুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এগুলো বাদ দেন। এসব পুরনো প্যাচাল। নতুন কিছু থাকলে বলেন।’

কক্সবাজার-৪ আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বদির মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ এম জব্বারকেও ফোন করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ’হলফনামার তথ্য অনুযায়ী সম্পদের হিসাব

আ ফ ম রুহুল হক : পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক ও তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৯২ লাখ। এখন তাঁদের ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছরে বেড়েছে ১৬৫ গুণ। সঞ্চয়পত্রে এবার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে নিজের নামে হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৯২২ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৫ টাকা।

আবদুল মান্নান খান : পাঁচ বছর আগেও ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল তাঁর নামে। অল্পদিনের ব্যবধানে তা হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে বার্ষিক আয় ছিল তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ। এ ছাড়া তিনি ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক। হলফনামায় ফ্ল্যাট দুটির মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে প্লটসহ অন্যান্য সম্পদ। পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্র থেকে আগে তার আয় না থাকলেও এবার আয় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। আগে মৎস্য খাত ও রেমিট্যান্স থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার হলফনামায় তা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন অতীতে নেই উল্লেখ করলেও এবার ‘নেই’-এর স্থলে উল্লেখ আছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ ছাড়া তার মাছের খামার যুক্ত হয়েছে পাঁচটি।

মাহবুুবুর রহমান : গত পাঁচ বছরে ২০ একর জমির মালিক থেকে তিনি হয়েছেন ২ হাজার ৮৬৫ একর জমির মালিক। গণমাধ্যমে এই সম্পদ বিবরণী প্রকাশের পর তিনি একটি ব্যাখ্যা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেন। সেখানে তিনি বলেন, তাঁর জমির পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে ২৮ দশমিক ৬৫ একর। পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না থাকা স্ত্রীর নামে এখন এক কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ। নিজের নামে রয়েছে ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকার স্থাবর সম্পদ যা পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা।

আসলামুল হক : আসলামুল হকের জমির পরিমাণ বেড়েছে ৩৪ গুণের বেশি। ২০০৮ সালে হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তিনি ও তাঁর স্ত্রী মাকসুদা হক ৪ একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। সে সময় ওই মূল্য ছিল ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। দশম সংসদ নির্বাচনে পেশ করা হলফনামায় তিনি ও তাঁর স্ত্রীর জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর (১৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) এবং দাম উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র এক কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা।

এনামুল হক : ২০০৮ সালে শুধু বেতন-ভাতা থেকে তাঁর বছরে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পর এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকানভাড়া, ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে আয় হয় ৫০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর পরিবারের পোষ্যদের সাত লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা বার্ষিক আয় থাকলেও এবারের হলফনামায় পোষ্যদের কোনো আয়ের উৎস নেই উল্লেখ করা হয়। তাঁর নিজের, স্ত্রী ও অন্যদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার থেকে কোনো আয় নেই উল্লেখ করা হয় হলফনামায়। পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়।

আবদুর রহমান বদি : হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদের হিসাব অনুযায়ী আবদুর রহমান বদির আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। হলফনামায় বলা হয়, গত পাঁচ বছরে তিনি আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। তাঁর বার্ষিক আয় সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছিলেন, তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। ব্যয় ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা।

এম এ জব্বার : ২০০৮ সালের হলফনামায় বলা হয়, ওই সময় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল কৃষি খাতে ২০ হাজার, বাড়ি, দোকানভাড়া থেকে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২৯ টাকা এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪৯ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ২৩ দশমিক ৩৬৬ একর, স্ত্রীর নামে ১১ দশমিক ২৩৫ একর ও নির্ভরশীলদের নামে ৪ দশমিক ০৪৮ একর কৃষি জমি ছিল। অকৃষি জমির মধ্যে নিজ নামে ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪০২ টাকার জমিসহ একটি দালান এবং ঢাকা ও খুলনায় ৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৬ টাকা মূল্যের চারটি দালান উল্লেখ করা হয়েছিল।