ঢাকা: সরকারি হিসাব অনুযায়ী কমপক্ষে ৮৭ লাখ ১৭ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশে কর্মরত আছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১৩ শতাংশের বেশি অবদান রাখছে। যা জিডিপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত। গত ৫ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এই অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রবাসীদের কল্যাণ ও ভালমন্দ দেখা শোনা করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার তা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন করে ১২টি দেশে শ্রম উইং খোলা হয়েছে। আরও ১১টি দেশে শ্রম উইং খোলা হবে। এই উইংগুলো প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কল্যাণের বিষয়ে দেখাশোনা করবে। পাশাপাশি নতুন বাজার, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সরকারের এই শুভ উদ্যোগে বাগড়া দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরেও নতুন করে খোলা শ্রম উইংয়ে কর্মকর্তা পদায়ন আটকে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে শুধুই বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। যুক্তি, তাদের সঙ্গে নাকি যথাযথভাবে আলোচনা করা হয়নি।
কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছে, তারা নতুন করে বিদেশে ১৭টি শ্রম উইং এবং ১৫০টি পদ সৃষ্টিতে সম্মতি দিয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই। অর্থ মন্ত্রণালয় ১০১টি পদের বিপরীতে অর্থ ছাড় দিতে সম্মতি জানিয়েছে। এরপর সরকারের যথাযথ নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে এর সারসংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ শেষে নিয়ম অনুমোদন করে কাকে কোথায় পদায়ন করা হবে তা চূড়ান্ত করেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, প্রধানমন্ত্রীর নেয়া এই সিদ্ধান্তকেই অজ্ঞাত কারণে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আপত্তি তুলছে ১০১টি পদ সৃষ্টির বিষয়ে শুরু থেকে নাকি তাদের যথাযথ মতামত নেয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ, কার্যপ্রণালী (রুলস অব বিজনেস) অনুযায়ী, বৈদেশিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন বিষয়ে কোনো কিছু করতে গেলে তাদের মতামত নিতে হবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের ‘পাশ কাটিয়ে’ চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রম উইং ও পদ সৃষ্টির বিষয়ে গত ২০১২ সালের ৮ জুলাই আন্তঃমন্ত্রণালয় যে সভা হয়েছে তাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছিলেন। সেখানে তারা তাদের মতামতও তুলে ধরেছেন। এর ভিত্তিতেই একই বছরের ২২ জুলাই ১৭টি নতুন শ্রম উইং এবং ১৫০টি নতুন পদ সৃষ্টির ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়। এছাড়া গত বছরের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর এবং এ বছরের ৭ ও ৮ জানুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে নতুন সৃষ্টি করা পদে নিয়োগে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সাক্ষাৎকার বোর্ডে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করেননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, কার্যপ্রণালী অনুযায়ী, নিয়োগবিধি তৈরি, পদ সৃষ্টি, কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের টিওএন্ডই পরিবর্তন ও পুনঃমূল্যায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এ ব্যাপারে মতামত দেয়ার ব্যাপারটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে নেই।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারদের অধীনে কাজ করবেন। তাই তাদের কাজে বৈদেশিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। তাছাড়া যেসব দেশে শ্রম উইং আছে, সেসব জায়গায় এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই শ্রম উইং খোলা এবং পদ সৃষ্টিতে কোনো ধরনের বাধা নেই। আর যে বিষয়টি খোদ প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন সেখানে বাধা সৃষ্টি করা রীতিমতো রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল।
নিয়ম অনুযায়ী বিদেশে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে পদায়ন করতে হলে তাকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হয়। এটি দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আর এই ক্ষমতাকেই কাজের পরিবর্তে অকাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে এখন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মনে করছে, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট মিশনে সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে পারেন ¯্রফে এই আশঙ্কায় নতুন শ্রম উইং খোলা ও সেখানে পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আপত্তি তুলছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিভিন্ন মিশনে কনস্যুলার উইং, কমার্স ও ইকনোমিক উইং কোথাও কোথাও প্রতিরক্ষা উইংসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে যেসব কর্মকর্তারা কাজ করছেন সংখ্যার হিসাবে তাদের চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অধিকাংশ মিশনে কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিষয়টিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহজভাবে নিতে পারছে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক একজন পেশাদার কূটনীতিক এ বিষয়ে আলাপকালে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটি সত্যিই দুঃখজনক। সরকারের যে মন্ত্রণালয়ের অধীনেই সংশ্লিষ্টরা বিদেশে মিশনগুলোতে কাজ করুক না কেন, সার্বিকভাবে সবাই দেশের জন্য কাজ করছে, এই দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। এর পরিবর্তে কোনো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যায় বেশি সেটি প্রাধান্য না দিয়ে কীভাবে দেশের কল্যাণে একযোগে কাজ করা যায়, এই দৃষ্টিভঙ্গি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের থাকা দরকার। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যদি কোনো মিশনে সংখ্যার হিসাবে সংখ্যালঘু হনও তাতেও হীনমন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নেই। এটি স্বীকৃত যে মিশন প্রধানের সিদ্ধান্ত অধীনেই ওই মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করবেন।’
সাবেক পেশাদার এই কূটনীতিক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করে বলেন, ‘যেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বছরের পর বছর চেষ্টা করে ২০টি পদও তৈরি করতে পারে না সেখানে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় শতাধিক পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সম্মতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে মন্ত্রণালয়টিতে দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছে। পারলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়টি অনুসরণ, অনুকরণ করা দরকার।’
দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ আছে, বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে কার্যত কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। প্রবাসীরা বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়লেও প্রয়োজনীয় সেবা পান না। অনেক ক্ষেত্রে একাধিকবার চেষ্টা করেও রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার, এমনকি পররাষ্ট্র ক্যাডারের একজন দ্বিতীয় সচিবের সাথে দেখা করাও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিদেশে শ্রম উইং খোলা এবং নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে গত ২৯ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৬১ এবং ভিয়েনা কনভেশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬৩ অনুযায়ী কোনো দূতাবাসে নতুন উইং খোলার জন্য স্বাগতিক দেশের সম্মতি দরকার। তাই যেসব দেশ আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করে না তারা এ বিষয়ে সম্মতি দেবে, এই সম্ভাবনা নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিয়েনা কনভেনশনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কারণ, ভিয়েনা কনভেনশনের, অনুচ্ছেদ-১০ অনুযায়ী, কোনো দেশের মিশনে কর্মকর্তা নিয়োগ, চাকরি থেকে অবসর কিংবা চাকরি থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি সংশ্লিষ্ট দেশের মিশনের অধীন। তাই এখানে শ্রম উইং খোলার ব্যাপারে স্বাগতিক দেশের সম্মতির প্রয়োজনই নেই। তাছাড়া কয়েকদিন আগে, জর্ডান, জাপান এবং ইতালির রোমে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য শ্রম উইং খোলা হয়েছে। একইভাবে চেষ্টা করলে অন্য দেশগুলোতেও শ্রম উইং খোলার অনুমতি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন শ্রম বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপাক্ষিক, ট্রেনিং এবং কনস্যুলার) মোস্তফা কামাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিদেশে শ্রম উইং খোলার প্রস্তাবটি আলোচনার পর্যায়ে আছে। এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘চাইলেই তো আর একটি দেশে শ্রম উইং খোলা যায় না। বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। উইং খোলার সম্ভাব্যতা কতটুকু তাও যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। এটি করতে সময় লাগবে।’
তবে প্রবাসীকল্যাণ সচিব খন্দকার শওকত হোসেন জানান, শ্রম উইং খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এ থেকে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শ্রম উইংয়ের জন্য লোকবল নিয়োগ হয়ে গেছে। তাদের পদায়নের বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে নাম পরিবর্তন করে প্রবাসীকল্যাণ উইং করা হতে পারে। তবে এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। এটি নিয়ে পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রবাসীদের কল্যাণে যেটা ভাল তা করাই আমাদের দায়িত্ব।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থানের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘হয়ত তাদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এটা আলোচনা করলে ঠিক হয়ে যাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, যদি বিদেশে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শ্রম উইং খোলার প্রয়োজন হয় তাহলে তাই করতে হবে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস বা মিশনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে প্রবাসীদের অভিযোগের শেষ নেই। দূতাবাসের কর্মকর্তারা যেভাবে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করার কথা, তা করছে না। এখন যদি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শ্রম উইং খোলার প্রয়োজন হয় তাতে সমস্যা কোথায়? এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে না প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা। সবাই তো দেশের জন্য কাজ করছে। বিষয়টি সাংঘর্ষিক হিসেবে দাঁড় করানো ঠিক হবে না।’
বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস ও মিশনগুলোর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের বিষয়টি উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘যে যার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে প্রবাসীকল্যাণ বা বৈদেশিক শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল হবে না।’
কথা বলার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং সচিব শহিদুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীন সফরে আছেন।
সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে ইউরোপের শ্রম বাজারে
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের সময় বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এক ধরনের শ্লথগতি ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গত মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নতুন করে শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়াতে বন্ধ থাকা শ্রমবাজার খুলেছে। দুইদেশের সরকার পর্যায়ে চুক্তির ভিত্তিতে নামমাত্র অভিবাসন ব্যয় ৩৩ হাজার টাকায় মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন কর্মীর। সূত্র জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সৃষ্টির সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার ক্যাম্বেরা, গ্রিসে শ্রমবাজার তৈরিতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেক উন্নত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে দেশটিতে সফর করেছেন। পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় একটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজও চলছে। এছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক অস্ত্র কেনার বিষয়েও চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এর আগে গত বছর নয়াদিল্লিতে অবস্থিত গ্রিসের দূতাবাস তাদের দেশে বাংলাদেশের শ্রম উইং খোলার ব্যাপারে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। যেখানে গ্রিসে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সৃষ্টির সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে।
একইভাবে বিশ্বের অন্যান্য সম্ভাবনাময় দেশে শ্রম উইং খোলার মাধ্যমে নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে দুই দেশের মধ্য ধারবাহিকভাবে ফলপ্রসু আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী অঙ্গিকার বাস্তবায়নে কাজ করছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সহায়ক। বিষয়টি মাথায় রেখেই গত মেয়াদে সরকার গঠনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে অতীতের যেকোনো সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকার বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলবেন। যেখানে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশকে প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই মানবসম্পদ বিদেশের শ্রমবাজারে পাঠানো গেলে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স আসবে। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি সচল থাকবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় মূলত প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গিকারগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাফল্য
২০০৯ সালের শিল্পনীতিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে তৃতীয় খাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে গড়ে পাঁচ লাখ করে বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে ৩৮টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বছরে ৭৪ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া ৩৫টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ এ বছরের মধ্যে শেষ হবে। আগামী বছর থেকে দেড় লাখ কর্মীকে এসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো গড়ে উঠলে বছরে প্রায় ছয় লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে বাংলাদেশি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার কর্মী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ৭৪০ জন এবং নারী কর্মী দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৬২ জন। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ১৫৯টি দেশে কর্মরত প্রবাসী কর্মীরা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।
আইওএম এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৭৫টি দেশের রাজধানীতে বর্তমানে নূন্যতম দশ হাজার বাংলাদেশি আছেন। এই ৭৫টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস এবং প্রবাসীকল্যাণ উইং খোলা দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
(ঢাকাটাইমস/ ০৮ জুন /বিপ্র/এআর/ ঘ.)