ঢাকা:আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার হচ্ছে রাজধানী ঢাকা। পুরো দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয় রাজধানীকে ঘিরে। ঢাকা মহানগর কমিটির সাংগঠনিক ভিত যে দলের যত বেশি শক্তিশালী সে দলের ভিত তত ভিত তত বেশি মজবুত।
গত সাধারণ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির ব্যর্থতা অন্যতম কারণ কারণ হচ্ছে বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির দুর্বলতা।
আর এই দুর্বলতার বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যও উঠে এসেছে।তিনি রাগে ক্ষোভে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কথাও বলেছিলেন।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটিও অনেকটা সে দশার মধ্যে পড়েছে।গত ১১ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে একই নেতৃত্ব দিয়ে। ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মারা গেছে তাও আট বছর হয়ে গেছে।
দীর্ঘ বিরতির পর সর্বশেষ দুই বছর আগে কাউন্সিল হলেও তা আর আগায়নি।২০১২ সালের ডিসেম্বরে ঘটা করে সংগঠনটির সম্মেলন হলেও ঘোষিত হয়নি নতুন কমিটি। হাইকমান্ডের নির্দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ থানা ও ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়ার রীতি মতো থমকে আছে।
সম্মেলনের পর ১৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ঘোষণা হয়নি নগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। সম্মেলনের আগে সংগঠনটিকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও কবে নতুন কমিটি হবে বা আদৌ দু’ভাগে ভাগ করা হবে কী না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানেন না নগর কমিটির বর্তমান নেতারাও। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে ঐতিহ্য অনুযায়ী মহানগর কমিটি গঠনের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
ঢাকা মহানগর আ’লীগ সূত্রে জানা গেছে, মহানগরের অন্তর্গত ৯৩টি ওয়ার্ড, ১৮ ইউনিয়ন ও ৪৯ থানা কমিটির মধ্যে তিনটি থানা ছাড়া সকল থানার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। সম্মেলন না হওয়া তিনটি থানা হলো ডেমরা, শ্যামপুর এবং রামপুরা থানা। এছাড়াও আছে ডেমরা থানার অন্তর্গত যাত্রাবাড়ী থানা এবং শ্যামপুর থানার অন্তর্গত কদমতলী থানা।
এই তিনটি থানার কাউন্সিল না হওযার জন্য মহানগরের নেতারা বলছেন, রামপুরা থানা এলাকার এমপি একেএম রহমতুল্লাহ অনেক দিন দেশের বাহিরে থাকার কারণে এই থানার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া মহানগর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আমেরিকা সফর এবং তার নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত থাকার কারণে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি।
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, নতুন কমিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কমিটিকেই দায়িত্ব পালন করে যাবে। সেই অনুযায়ী সাবেক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বেই চলছে নগর কমিটি। মহানগরের কমিটি কবে গঠিত হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের ঢাকাটাইমসকে বলেন, আপনি এ ব্যাপারে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফকে জিজ্ঞাসা করুন।
জানতে চাইলে মাহবুব-উল হানিফ বলেন, শীঘ্রই ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠিত হবে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নগর কমিটিকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে বিভক্তির সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।
সেই নির্দেশও খুব একটা কাজে লাগেনি। তবে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে নড়েচড়ে বসে নগর কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
গত ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নগরের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগে কোন গ্রুপিং চলবে না।
জানতে চাইলে মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ বলেন, ঢাকা মহানগরের কমিটি নিয়ে কোনো কোন্দল করে লাভ হবে না। এ কমিটি আমাদের দলের সভাপতি নিজেই দিবেন। দলীয় প্রধান যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা আমরা মেনে নিবো।
(ঢাকাটাইমস/১৫/টিএ/এআর/ ঘ.)