ঢাকা: গাছগাছালি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু মানুষই নয়, গাছপালা ছাড়া কোনো প্রাণীই জীবন ধারণ করতে পারবে না। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধানত দায়ী বৃক্ষহীনতা। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যা। গাছপালার স্বল্পতার কারণে ভূপৃষ্ঠে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে। গাছগাছালির উপকারের কোনো শেষ নেই। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে।
মানুষের জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রকৃতিগত ধর্ম ইসলামও বৃক্ষরোপণ এবং পরিচর্যার প্রতি জোরালো তাগিদ করেছে। বৃক্ষরোপণকে ইসলামে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যে গাছ লাগাবে এবং তা পরিচর্যা করবে, সে অনবরত পুণ্য পেতে থাকবে। মহানবী (সা.) বৃক্ষের শোভামণ্ডিত সুশোভিত পরিবেশ ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন বৃক্ষপ্রেমী। জীবনে বহুসংখ্যক গাছ তিনি নিজ হাতে রোপণ করেছেন। অসংখ্য হাদিসে তিনি বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর অনুসারীদের। বৃক্ষরোপণকারী মরে যাওয়ার পরও এর সওয়াব অনবরত পেতে থাকবে। সওয়াবের উদ্দেশে কোনো গাছের চারা রোপণ করলে যতদিন গাছটি থেকে উপকৃত হওয়া যাবে ততদিনই এর সওয়াব রোপণকারী পাবেন।
ইসলামের আলোকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করা ইবাদতেরও একটি অংশ। নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ করা রাসুলের সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জান কিয়ামত এসে গেছে, তবুও তোমার হাতে কোনো গাছের চারা থাকলে তা রোপণ করবে।’ এ হাদিস থেকেই বোঝা যায় ইসলাম বৃক্ষরোপণকে কত গুরুত্ব দিয়েছে। বৃক্ষরোপণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা পরিচর্যা করাও অপরিহার্য। এ জন্য ইসলামে বৃক্ষের পরিচর্যার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়; বরং এর যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে পুষ্প-পল্লবে বিকশিত হওয়ার সব ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার যত্নে যদি একটি বৃক্ষ ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়, পথিক এর ছায়ায় বসে, পশু-পাখি বিশ্রামের সুযোগ পায়, ফুল-ফল খেয়ে উপকৃত হয় এরা সবাই আপনার জন্য দোয়া করবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলাম কাউকে গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেয় না। এক কথায় গাছের ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো কর্মকাণ্ডই ইসলাম সমর্থন করে না। গাছপালা আল্লাহর অন্যতম সেরা দান। বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যা করা মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব। এ জন্য সবার উচিত ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে সবুজাভ প্রকৃতিকে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলা।