মানুষকে উপার্জনশীল ও কর্মতৎপর হওয়ার তাগিদ করেছে ইসলাম। বেকারত্ব, আলসেমী ও অকর্মণ্যতা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, ফরজ ইবাদতগুলোর পরেই অত্যাবশ্যক কাজ হলো হালাল রুজি রোজগার করা। এজন্য নবী-রাসুলেরা পর্যন্ত হালাল রুজির জন্য শ্রম দিয়েছেন। ইসলাম কাউকে আলসেমী করে বসে থাকার অনুমতি দেয়নি। কোরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে হালাল রুজি উপার্জনের প্রতি বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি বা কারো দয়া পাত্র হয়ে থাকাকে ইসলাম পছন্দ করে না। রাসুলের কাছে এক সুস্থ-সবল ব্যক্তি ভিক্ষা চাইতে এলে তিনি ওই ব্যক্তিকে কুড়াল কিনে বন থেকে কাঠ কেটে এনে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দেন। এতেই বোঝা যায়, ইসলামের শিক্ষা হলো পারতপক্ষে কারো কাছে হাত না পাতা। হাদিসে আছে, নিজ হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম খাবার আর নেই।
বিভিন্ন ধর্মে মানুষকে পার্থিব ক্রিয়াকর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে একমাত্র আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হতে বলা হয়েছে। কিন্তু ইসলাম তা বলেনি। মানুষকে দুনিয়ায় যতদিন অবস্থান করতে হবে, ততদিন তাকে এখানকার বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। অতিপ্রাকৃত ভাবধারা পোষণ করা এবং অস্বাভাবিক জীবনযাপন করা মানুষের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। তবে মানুষকে শুধু চেষ্টা করলেই হবে না, তাকে আল্লাহর অনুগ্রহের আশা রাখতে হবে। কারণ মানুষ নিজের ক্ষমতায় কোনো কিছুই করতে পারে না। তার যেকোনো চেষ্টা ও শ্রমের সাফল্যের জন্য শর্ত হলো আল্লাহ পাকের রহমত। এ কথাটি আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে বলে দিয়েছেন।
মানুষ তার সাধ্যে যা কুলায়, সে পরিমাণ শ্রম ব্যয় করবে। আর তা সাফল্যে পৌঁছে দেয়া আল্লাহর কাজ। আল্লাহ তায়ালা তাই বান্দাকে শুধু পরিশ্রম করে যেতে বলেছেন। প্রতিদানে তাকে তার প্রয়োজন ও অবস্থা অনুযায়ী সুফল দান করা হবে। কার জন্য কতটুকু প্রতিদান দিলে ভালো হবে তা আল্লাহ পাকই সম্যক অবগত আছেন। তাই মানুষের উচিত, চেষ্টা করার পর যা পাওয়া যায় তাতে সন্তুষ্ট থাকা।
আল্লাহ তায়ালা নামাজ আদায়ের পরই তারই অনুগ্রহের অন্বেষণে দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলমানরা ইবাদত পালনের সঙ্গে সঙ্গে পার্থিব ক্রিয়াকর্মেও জড়িত হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতে সৃষ্টিকর্তাকে বিস্মৃত হওয়া যাবে না। এটাই কোরআন-হাদিস নির্দেশিত পথ।