পালিত হচ্ছে পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে সৌদি আরবের মক্কার পবিত্র আরাফাত নগরী। এখানে জড়ো হচ্ছেন বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মুসলমান। রবিবার ভোরে ফজরের নামাজের পর থেকেই হাজিরা মিনা থেকে আরাফাতের উদ্দেশে রওয়ান করেন।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের হজ। আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেবেন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ড. সালিহ বিন হুমাইদ। হজের খুতবায় থাকবে মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বরাবরের মতোই নিন্দা জানানো হবে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় এই সম্মেলনে।
এই আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়েই মহানবী (সা.) আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। লাখো মানুষের উদ্দেশে প্রদত্ত ওই ভাষণের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছিল দ্বীনের পরিপূর্ণতা লাভের। আজও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভাষণ দেয়া হয়। আর হাজিরা এক আবেগঘন পরিবেশে মহান আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়ার মন-মানসিকতা নিয়ে কান্নাকাটি করেন দিনভর। তারা নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, নিজের পরিবার পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে থাকতে হবে হাজিদের। সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং সেখানে গিয়ে রাত যাপন করবেন। ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সেখানে হাজিরা কোরবানি করবেন এবং শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। পরে আরও দুই দিন মিনায় অবস্থানের পর সম্পন্ন হবে এবারের হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
এবার হজ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা। বিশেষ করে মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ হাজিদের ভাগ ভাগ করে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। গত বছর মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে ৭১৭ জন হাজির মৃত্যু হয়। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে এ সংখ্যা দুই হাজার ছাঁড়িয়েছিল। এরপরই হজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।
এ বছর হাজিদের পরিচয় নিশ্চিতের জন্য ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি ব্রেসলেটে বারকোড রয়েছে এবং এটি অ্যাপসের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযুক্ত। এই ব্রেসলেটে হাজিদের ব্যক্তিগত এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য রয়েছে। এটি তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি জরুরি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা দেবে। সেই সঙ্গে তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হবে এই ব্রেসলেটের মাধ্যমে।
সরকারি বার্তা সংস্থা সৌদি গেজেট জানিয়েছে, অবৈধ হজযাত্রীদের আটকে বাহিতা ও হাদা এলাকায় এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে হাজিদের নিরাপত্তায় দ্রুত তিন হাজার উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র স্থানান্তরে ১৭ হাজার কর্মী মোতায়েন করেছে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ। হজের পাঁচ দিন মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলো পরিষ্কারের জন্য ২৬ হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য মক্কায় পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ আটটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মিনা, আরফাতের ময়দান ও মুজদালিফায ২৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।