লোক-দেখানোর জন্য কোনো আমল করার নাম রিয়া। হাদিসের ভাষায় এ বিষয়টিকে ‘শিরকে খফি’ বা অপ্রকাশ্য শিরক বলা হয়েছে। মুসলমানের সব আমল তো একমাত্র আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত হবে, এর নামই এখলাস। এখলাস ও রিয়ার অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত দুই মেরুতে। কেয়ামতের মাঠে যে সাত ধরনের লোক আল্লাহর আরশতলে ছায়া পাবে, তাদের এক প্রকার হলো যারা এত গোপনে ডান হাতে দান করত যে, তার বাম হাতও তা জানে না। পবিত্র কোরানের দু’জায়গায় আল্লাহ পাক ওইসব লোককে মন্দ বলেছেন, যারা লোক-দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে, তাদের মুনাফিকও বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘একটি ক্ষুধার্ত বাঘকে ছাগলের পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, মানুষের সম্পদের লোভ ও সম্মানের আশা তার দ্বীন ও আমলে এর চেয়ে বেশি ধ্বংস সাধন করে।’ হাদিসে আছে, যে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এলেম শিখে (আলেম-মাওলানা হয়) সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বুঝে নেয়। আরো ভয়ঙ্কর বিষয় সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুব্বুল হাযান’ নামে জাহান্নামের একটি উপত্যকা রয়েছে, স্বয়ং জাহান্নাম তার কাছ থেকে প্রতিদিন একশ’বার রক্ষা চায়।
এ ভয়ঙ্কর উপত্যকাটি ওইসব কোরান পাঠকের জন্য, যারা লোক-দেখানোর জন্য আমল করে। সাধারণ মুসলমান কিংবা আলেম-ওলামা সবার জন্য এক চরম সতর্ক বাণী উচ্চারিত হয়েছে অসংখ্য হাদিসে। সামান্য যে কোনো কাজও যদি মানুষের কাছে নিজের সম্মান ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য করা হয়, আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিন সবার সামনে ঘোষণা করে তা প্রকাশ করে দেবেন। আর বলে দেবেন যার জন্য আমল করেছিলে তার কাছ থেকে এর প্রতিদান নিয়ে নাও। তাফসির ইবনে কাসিরে উল্লেখ রয়েছে, মানুষকে দেখানোর জন্য যতক্ষণ কোনো আমলে ব্যস্ত থাকল, ততক্ষণ সে আল্লাহ পাকের অসন্তুষ্টির মধ্যে থাকল। ইবনে মাজাহ শরিফের এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, দুনিয়াতে যারা সুনাম-সুখ্যাতির পোশাক গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিন তাকে অপমানের পোশাক পরিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেবেন। এ জন্য সবার আগে নিজেকে সংশোধিত হতে হবে। আর কারো জন্য নয়, একমাত্র আল্লাহ পাকের জন্য নিবেদিত হতে হবে এক টাকা দান থেকে নিয়ে নিজে সব আমল ও এবাদত।