যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ মূলত মানুষকে কেন্দ করেই। প্রতিটি ধর্মই মানুষের প্রয়োজনের দিকটির প্রাধান্য দিয়েছে। মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি মুহূর্তে ধর্ম তার আবেদনময়ী হাত প্রসারিত করেছে। প্রতিটি ধর্মের মূলধারা মানবতার পক্ষে। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে ধর্মীয় আচরণ সবসময় মানবতাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তবে এ অভিযোগ ইসলামের বিরুদ্ধে করা যাবে না। ইসলাম মানবতাবাদ ও মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি ধর্ম।
এ কথা শুধু স্লোগানসর্বস্ব নয় বরং প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এর উজ্জ্বল নজির বিদ্যমান। ইসলামের সহজাত ধারা মানবতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি বহমান। ইসলামের প্রদীপ্ত শিখার দ্রুত বিচ্ছুরণের পেছনে এটি বিশেষ কারণ হিসেবে চিহ্নিত। ইসলাম একটি মানুষকে মাতৃগর্ভ থেকে কবর পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। যে কোনো দুর্যোগ ও সংকটে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। জীবনের পদে পদে ইসলামের করুণামিশ্রিত হাতছানি মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে। ইসলাম মানুষের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধের যে বীজ বপন করে দিয়েছে তার নজির আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ইসলামের মর্মবাণী হচ্ছে মানুষের জন্য, জীবনের জন্য সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সহানুভূতি। মানুষের প্রয়োজনে মানুষ। সভ্যতার মূল উপাদান মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ আঞ্জাম দিয়েছে ইসলাম। ইসলামের আদর্শে আদর্শবান কারো জন্য মানুষের প্রয়োজনকে খাটো করে দেখার কিংবা এ ব্যাপারে উদাসীন থাকার কোনো অবকাশ নেই। এ জন্য প্রতিটি মুসলমানকে মানবতাবাদী হওয়া তার ইমান ও আদর্শের দাবি। মানুষের হিতকামী হওয়া ইসলামের আদর্শ। মানুষের কল্যাণ ও সমাজের প্রয়োজনকে বড় করে দেখার শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে যত না ব্যতিব্যস্ত হবে তার চেয়ে বেশি উদগ্রীব হতে হবে অন্যের প্রয়োজন পূরণে। ইসলামের নবী আর্তমানবতার সেবায় অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, ব্যথা-বেদনা ও পীড়ন-দহনে তিনি যেমন ব্যথিত হতেন, তেমনি তা লাঘবের জন্যও গ্রহণ করতেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। একজন নগণ্য মানুষও যে কোনো সমস্যায় পড়ে তার কাছে এলে তিনি তাকে কোনো দিন নিরাশ করেননি। মানুষের প্রতি এমন দরদী অন্তর থাকা চাই প্রতিটি মুসলমানের।