ঢাকা: দুনিয়াতের কেউই চিরকাল থাকবে না। এজন্য উভয় জগতে সফল হওয়াই জীবনের প্রধান লক্ষ্য। জীবনকে সুখি সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য আল্লাহর বিধান ও রাসুলের আর্দশ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন পরকালে জবাবদিহিতার বিষয় সর্বদা স্মরণ রাখা। কোরআনে অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, পার্থিব জীবনের প্রতিটি কর্ম ও আচরণের জন্য কেয়ামতের ময়দানে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব গ্রহণ করা হবে। তাতে যারা উৎরে যাবে, তারাই আল্লাহর প্রিয়ভাজন বলে গণ্য হবে এবং তাদের জন্য অনন্ত শান্তি ও পুরস্কারের সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে। আর যারা এ জবাবদিহিতায় উৎরে যেতে সক্ষম হবে না, তাদের কঠিন পরিণামের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী হবে।
মানুষের মধ্যে পরকালের জবাবদিহিতার চেতনা জাগরুক থাকলে তার জীবন শুদ্ধ ও উন্নত হতে বাধ্য। ইসলামের বিধানমতে মানুষ যদি পরকালীন জবাবদিহিতার অনুভূতি সর্বদা ধারণ করে রাখে, তাহলে তার প্রতিটি কর্মই পুরস্কাযোগ্য হয়ে যায়। বস্তুত এই অনুভূতিই তাকে অনন্য চালিকাশক্তি হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সবধরনের অসাধুতা ও অন্যায় ক্রিয়া-কলাপ থেকে নিবৃত্ত রাখে। মানুষ সব অন্যায়-অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকলে তাতে সবচেয়ে বেশি মনোকষ্টের শিকার হয় অভিশপ্ত ইবলিস। তাই সে মানুষকে চাতুর্যের সঙ্গে প্রতারিত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আশরাফুল মাখলাকাতকে আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। সে জন্য অভিনব কৌশল ও ফন্দিতে মানুষের মনোযোগ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে সে নিরন্তর প্রয়াস চালায়। মানবীয় বৃত্তিবৃত্তিকে অসার ও অসত্য চিন্তা-দর্শনে নিমজ্জিত করার জন্য নতুন নতুন পরিভাষার জন্ম দেয়। এভাবে মানুষ পাপে জড়ায়।
পৃথিবীবাসীর জন্য সবচেয়ে অকল্যাণকর ও মারাত্মক বিষয় পরকালবিমুখতা। অনন্তকালের জীবন কী উপায়ে সুখময় হবে সে বিষয়ে নিতান্ত উদাসীনতা বর্তমানকালের প্রধান প্রবণতা। মানুষকে উভয় জগতে সফল হতে হলে যে মহান প্রভুর অমোঘ বিধানে বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে, তার সামনে উপস্থিত হয়ে নিজের সবকিছুর হিসাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা সর্বদা স্মরণ রেখেই চলতে হবে। সবকিছুর ওপরে থাকবে জবাবদিহিতার বোধ। এই গুণটির উপস্থিতি থাকলে দুনিয়ার কোনো আইনের দরকার হবে না, এমনিতেই মানুষ সবধরনের অন্যায়-অনাচার থেকে বিরত থাকবে।