গাছপালা, নদ-নদী, ফুল-ফল ও পশু-পাখি এসব নিয়েই প্রকৃতি বা পরিবেশ। এটা আল্লার বিশেষ নিয়ামত বা দান। মানুষের প্রয়োজনে, খোদার দেয়া প্রকৃতির মাঝে ইতিবাচক কল্যাণকর পরিবর্তন করা হয়- যেমন রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, কলকারখানা ইত্যাদি। এটা হলো সামাজিক পরিবেশ। সুস্থ, সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ। কেননা পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তাই সামাজিক পরিবেশ উন্নয়নের কথা বলে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয় যা প্রকৃতির মাঝে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিতে হবে। ইসলাম প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার তাগিদ দিয়েছে। তাই তো আল্লাহ হজরত নূহ (আ.)-এর পূর্বের সকল নবিকে প্রধান দায়িত্ব দিয়েছিলেন, পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করার। ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো- দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের মুক্তি। পৃথিবীতে মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে বসবাস করবে আবার আল্লাহর ইবাদতেও মগ্ন হবে।
তাই তো আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দাও এবং আখেরাতেরও কল্যাণ দাও এবং আগুনের আজাব থেকে আমাদের বাঁচাও।’ -বাকারা:২০১
সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সবার আগে প্রয়োজন জীবাণুমুক্ত নির্মল পানীয় জল ও বায়ু। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জল ও বায়ুকে দূষিত করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কেননা, জল ও বায়ুর মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত হয়। বিষাক্ত জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষের মাঝে বিভিন্ন রোগ-ব্যধি সৃষ্টি হয়। যেসব স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেললে দ্রুত জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে, সেসব স্থানে ফেলতে নিষেধ করে তিনি একটি হাদিসে বলেছেন, ‘তোমরা তিনটি অভিশপ্ত জিনিস থেকে বাঁচো ১। রাস্তার মাঝে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে ২। ঝর্ণা বা পুকুরের ঘাটে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে ৩। ছায়াবিশিষ্ট গাছের নিচে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে। -তবরনি শরিফ
প্রত্যেক শহরেই বাড়ছে যানবাহন। বাড়ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। হারাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বনডাই অক্সাইডের মাত্রা। পরিবেশ থেকে গাছ-পালা ও বন-জঙ্গল নিধন হওয়ার ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ যান্ত্রিক জীবনে বৃক্ষ রোপণ বা সবুজ শ্যামল পরিবেশের কথা আমরা দিব্যি ভুলতে বসেছি। অথচ আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষরোপণের বিষয়ে উৎসাহ দিতে গিয়ে এর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বৃক্ষরোপণের নির্দেশও দিয়েছেন। একটি হাদিসে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জান যে- কিয়ামত এসে গেছে, তবুও তোমার হাতে কোন গাছের চারা থাকলে তা রোপণ করবে।’ - মুসনাদে আহমাদ
অন্য আরো একটি হাদিসে এসেছে, ‘যদি কোন মুসলিম বৃক্ষরোপণ করে আর তা থেকে কোন মানুষ অথবা কোন প্রাণি ফল ভক্ষণ করে, তাহলে বৃক্ষ রোপণকারীর জন্য তা সাদাকা হয়ে যাবে।’ - বুখারি
এছাড়াও গাছ আল্লাহপাকের সুন্দর একটি সৃষ্টি। জান্নাতে আল্লাহপাক যতগুলো নিয়ামত দেবেন এর মাঝে একটি হলো গাছপালা। আল্লাহপাক কুরআন-হাদিসের যেখানেই জান্নাতের বর্ণনা করেছেন, সেখানেই গাছপালা, নদনদী ও ঝর্ণার বর্ণনা করেছেন। কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদগত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ক শস্যরাজি উদগত করি।’ -কাফ আয়াত:৭-৯
সুন্দর ও সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য আমাদের পরিবেশকে অবশ্যই উন্নত করতে হবে। এর সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা, পরিচ্ছন্নতা ছাড়া কখনও আমরা পরিবেশ উন্নত করতে পারব না। পরিচ্ছন্নতা শুধু পরিবেশ উন্নয়নের জন্য নয়, একজন ঈমানদার হিসেবে সবসময় নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখা প্রয়োজন। কেননা ইবাদতের জন্য পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা প্রয়োজন। এছাড়া সুস্থতার মূলেও হলো পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা। আল্লাহপাক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা পছন্দ করেন। পবিত্র কুরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীকে পছন্দ করেন।’ -বাকারা:২২২
সুন্দর জীবনের জন্য চাই সুন্দর পরিবেশ। পরিবেশ উন্নত হলে আমরা বিভিন্ন প্রকার জীবাণু থেকে দূষণমুক্ত হব। পরিবার, সমাজ ও দেশ উন্নতি লাভ করবে। আসুন, আমরা সবাই বেশি বেশি বৃক্ষ রোপণ করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করি। পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনি। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দিন।আমীন।