বাংলাদেশে আমরা জাদুবাস্তবতা কথাটার সঙ্গে ওঠাবসা করতে থাকি আশির দশক থেকে। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ নোবেল পুরস্কার পান ১৯৮২ সালে। তারপর থেকে তার লেখা অনূদিত হতে থাকে, তার সাক্ষাৎকার যা যেখানে পাওয়া যাচ্ছিল, আমরা বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করছিলাম, আর সেসব গোগ্রাসে গিলছিলাম। জাদুবাস্তবতা কথাটা এই দেশে তখনই সাহিত্যিক মহলে নিত্য ব্যবহার্য শব্দের মতোই স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করে। তার আগে আমাদের অন্বিষ্ট ছিল বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার হুজুগটা এসেছিল সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবোধ থেকে। হ্যাঁ, আমরা পরাবাস্তবতার সঙ্গেও পাশাপাশি পরিচিত হয়ে উঠছিলাম। আদ্রে ব্রেতোঁর পরাবাস্তবতার ইশতেহার (১৯২৪) অনুবাদ করেছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। আর ষাটের দশকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল অ্যাবসার্ড নাটক।
জাদুবাস্তবতা কথাটা যদিও প্রথম ১৯২০-এর দশকে জার্মানিতে ব্যবহার করা হয়েছে, প্রধানত চিত্রকলার আলোচনায়, সাহিত্যে তা প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৫৫-এর দিকে, হোর্হে লুইস বোর্হেসকে ব্যাখ্যা করার সময়। কিন্তু এটাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করেন এবং প্রতিষ্ঠিত করেন মূলত গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। আর আমরা, বাংলাদেশে মার্কেজের মাধ্যমেই আসলে সাহিত্যের জাদুবাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত হই এবং অভ্যস্ত হয়ে উঠি।
যেমন ধরা যাক, মার্কেজের সরলা এরেন্দিরা তার নিদয়া ঠাকুরমার গল্পটিতে। উলিসিস প্রেমে পড়ে এরেন্দিরার। তারপর উলিসিস যে কাচেই হাত দেয়, সেই কাচ রঙিন হয়ে ওঠে। তখন তাকে বলা হয়, নিশ্চয়ই তুই প্রেমে পড়েছিস, কেবল প্রেমে পড়লেই এ রকমটা ঘটতে থাকে। মার্কেজ বলেন, প্রেম নিয়ে এত কথা বলা হয়েছে, আমি নতুন কিছু খুঁজছিলাম এটা প্রকাশ করার জন্য যে, প্রেমে পড়লে সবকিছু উল্টেপাল্টে যায়। সরলা এরেন্দিরা বইটা বের হয় ১৯৭২ সালে।
এক শতাব্দীর নির্জনতা বইটা মার্কেজ লিখতে শুরু করেন ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৭ সালে বইটা প্রকাশিত হয়। সালগুলো মনে রাখতে হবে। ১৯৬৫ সালে মার্কেজ এক শতাব্দীর নির্জনতা লিখতে শুরু করেছেন, আর আমি, একজন অখ্যাত অগণ্য লেখক, নীলফামারীতে একটা খড়ির ঘরে জন্মগ্রহণ করছি। না, আমার জন্মের বছরটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারও দুই বছর আগে, ১৯৬৩ সালে সৈয়দ শামসুল হক নামের এক বাংলা ভাষার লেখক, কুড়িগ্রাম থেকে আগত, লিখে ফেলেছেন ‘রক্তগোলাপ’ নামের একটা উপন্যাসিকা।
মার্কেজের এক শতকের নির্জনতায় একজন প্রেমিক যেখানেই যায়, তার পেছনে পেছনে যায় প্রজাপতি। মরিসিও বাবিলিওনা নামের সেই প্রেমিকটা। মার্কেজ বলছেন, তার দাদিও এই কথাটাই বলেছেন। একজন বিদ্যুৎ মিস্ত্রি আসত তাদের বাড়িতে। সে চলে যাওয়ার পর রান্নাঘরের তোয়ালেতে দাদি দেখলেন একটা প্রজাপতি। দাদি বললেন, এই ছেলে যখনই আসে, তার পেছনে পেছনে আসে প্রজাপতি।
গার্সিয়া মার্কেসের নিঃসঙ্গতার একশ বছর উপন্যাসে কত বিস্ময়কর ঘটনাই না ঘটে। মাকান্দো নামের জনপদটিতে হঠাৎ অনিদ্রা দেখা দিল। ওই জনপদের প্রতিষ্ঠাতা হোসে আর্কাদিও বুয়েন্দিয়া বলেন, ‘কখনো আর যদি না ঘুম আসে তো খুবই ভালো হয়। জীবনের কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়া যাবে।’ কিন্তু তাতে যেটা হলো, ওই জনপদের সবাই ঘুম হারানোর সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিও হারিয়ে ফেলতে লাগল। সবকিছুর নাম ও ব্যবহার তারা ভুলে যাচ্ছে। তা ঠেকাতে তারা জিনিসপাতির গায়ে নাম ও সেসবের ব্যবহার লিখে রাখতে শুরু করল। যেমন গরুর গায়ে তারা লিখে রাখল, ‘এটা হলো গরু। যাতে সে দুধ উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য রোজ সকালে তাকে অবশ্যই দোহাতে হবে। আর সেই দুধ অবশ্যই জ্বাল দিতে হবে, যাতে করে কফির সঙ্গে মিশিয়ে কফি ও দুধ বানানো যায়।’
এসবই মার্কেজের জাদুবাস্তবতার কতগুলো উদাহরণ। এই যে জাদুবাস্তবতা, তা আসে কোত্থেকে। মার্কেজ তার নোবেল পুরস্কার ভাষণে (১৯৮২) বলেছেন, এসবই আসে ল্যাটিন আমেরিকার বাস্তবতা থেকে। তিনি বলছেন, ঔপনিবেশিক আমলে তাদের একটা এলাকায় পলিমাটিতে চড়ে বেড়ানো মুরগি হাটে বিক্রি হতো, যাদের পেটে থাকত সোনার দানা। ওখানে রেললাইন বসানোর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গেছে জার্মানরা, তাদের বলা হলো, রেললাইন কি সোনা দিয়ে বানানো যায় না, কারণ আমাদের এখানে সোনা সস্তা, লোহা তো পাওয়া যায় না। মার্কেজের নোবেল পুরস্কার ভাষণে ওই মহাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কা-কারখানার যে তালিকা তিনি দিয়েছেন, তা বাইরের মানুষের কাছে চরম গাঁজাখুরি বলে মনে হবে। মেক্সিকোর জেনারেল লোপেজের পা ডাক্তার কেটে ফেলে, এরপর সেই পায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করা হয় অবিশ্বাস্য জাঁকজমকের সঙ্গে। ইকুয়েডরের এক নায়ক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মরেনো মরে যাওয়ার পর তার শবটাকে উর্দির সঙ্গে সব মেডেল পরিয়ে সিংহাসনে বসিয়ে রাখা হয়। আরেকজন এক নায়ক একটা পেন্ডুলাম বানিয়েছিলেন খাদ্যে বিষ আছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য, আর তিনি রাস্তার সব বাতি লাল কাগজে মুড়ে দিয়েছিলেন যাতে মহামারি আসতে না পারে।
এখন আমরা আরেকজন লেখকের কথা বলব। তার নাম সৈয়দ শামসুল হক। ১৯৬৩ সালে ঢাকায় মাউরেন্ডার রেস্তোরাঁয় বসে তিনি রচনা করেন রক্তগোলাপ নামের এক ফিকশন।
তাতে কী ঘটে? তার রচনার আরো দুই বছর পর মার্কেজ লিখতে শুরু করবেন এক শতাব্দীর নির্জনতা, ৯ বছর পর লিখবেন সরলা এরেন্দিরা। সরলা এরেন্দিরায় উলিসিস প্রেমে পড়ে, আর সে যাতে হাত দেয়, তাই রং বদলায়। আর আমাদের লেখক সৈয়দ শামসুল হকের আখ্যানে চম্পা নামে এক নারীর প্রেমে পড়ে আল্লারাখা নামের এক যুবক। চম্পার বাবা জাদু দেখিয়ে বেড়ান। কুড়িগ্রামের টাউন হলে সেই জাদুর বিলবোর্ড ঝুলছে। পাগড়ি পরা জাদুকর প্রফেসর নাজিম পাশা। পাশে তার মেয়ে চম্পারও ছবি। চম্পা জাদুর মঞ্চে চোখ বাঁধা আরেক জাদুকর জহিরের সামনে দাঁড়ায় আর জহির ছুরি ছুড়তে থাকে। কিন্তু গোল বাধে একদিন। বৃষ্টি শুরু হয়। এই ধরনের বৃষ্টির বর্ণনা আমরা মার্কেজে প্রচুর দেখব। তা তো অনেক পরে। কিন্তু ১৯৬৩ সালেই সৈয়দ শামসুল হক লিখছেন বৃষ্টির বর্ণনা, যাকে মনে হবে জাদুবাস্তবতা, কিন্তু যেহেতু এ আমাদের বাস্তবতা থেকেই জন্মেছে, আমরা এতে বিস্মিত হব না।
‘আজ কোথা থেকে একখ- কালো মেঘ এসে জমেছিল, ট্রেজারির পেটা ঘড়িতে চারটে বাজবার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বাতাস দিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তার ওপর সবে আধখানা হাট বসেছিল, সবে গিন্নিরা পয়সা বের করে দিচ্ছিল কর্তাদের হাতে, সবে তেলেভাজাওয়ালা তার উনুন জ্বালিয়েছিল, এমন সময় বৃষ্টি। সে বৃষ্টিতে দু হাত দূরেও আর দেখা গেল না। কেউ আর বাইরে রইল না। ডাকাত পড়ার মতো একটা শোরগোল পড়ে গেল; যে যেমন পারল রাস্তার দুপাশে জুতো কাপড় ট্রাংকের দোকানের বারান্দায় ভিজতে ভিজতে এসে দাঁড়াল। এমনকি মসজিদের ভেতরটাও লোকে আর তাদের কাপড় থেকে চুঁইয়ে পড়া পানিতে গমগম সপসপ করতে লাগল; মন খারাপ করে নিমীলিত নেত্রে বসে রইলেন ইমাম সাহেব; আলু পটল কুমড়োর বড় বড় ঝাঁকাগুলো পথের ওপরেই ভিজতে লাগল। একটা খেয়া এপারে এসেছিল বৃষ্টি মাথায় করে আর ফিরে যেতে পারল না। ক্যাশবাক্স গামছা দিয়ে ঢেকে ভিজতে লাগল ঘাটিয়াল। যাকে তাকে খামোকা গালাগাল দিতে লাগল সে। ওপারে ধু-ধু পাড়ের ওপর কয়েকজন হাটুরে হতভম্ব হয়ে কোথায় পালাবে বুঝতে না পেরে যে যেদিকে পারল দৌড়–ল।
সে বৃষ্টি আর থামল না।’
এই যে সে বৃষ্টি আর থামল না, সেই কথাটাই ম্যাজিক রিয়ালিজম। আর আগের বর্ণনাগুলো? ওই বাস্তবতার বর্ণনাটুকুই এই গল্পকে রূপকথা, কল্পকাহিনি, ফ্যান্টাসি থেকে আলাদা করে এটাকে সাহিত্য করে তোলে। একটা কথা কিন্তু বিদেশে প্রচলিত আছে। লিটেরারি ফিকশন। সাহিত্যিক কাহিনি। সায়েন্স ফিকশনকে এখনো সাহিত্য হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। যেমন দেওয়া হয়নি ফ্যান্টাসিকে। তাই যদিও আসিমভ বা ক্লার্ক অনেক বড় লেখক, তারা নোবেল পুরস্কার পাবেন না। যেমন নোবেল পুরস্কার পাবেন না হ্যার পটারের লেখিকা। ম্যাজিক রিয়ালিজমে রিয়ালিজম থাকতে হবে, কখনো কখনো বাস্তবতাটা নিজের তাপে আর চাপে ডিম ভেঙে বেরিয়ে যাবে জাদুর দিকে।
সৈয়দ শামসুল হকের রক্তগোলাপে সেই কা-টাই ঘটল, মার্কেজ যাকে এরপর অনেক সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করবেন যে প্রেম নিয়ে এত কথা বলা হয়ে গেছে যে, তা প্রকাশ করার জন্য নতুন কিছু দরকার। সৈয়দ হক নতুন কিছু ঘটালেন। আল্লারাখা নামের এক যুবক চম্পার কপালে পড়ে থাকা দুটো চুলের দিকে তাকাল এবং তার যেন কী ঘটে গেল। এরপর সে যেখানেই হাত দেয়, সেখান থেকে গোলাপ বের করতে পারে। চম্পা আর তার পিতার জাদুর কোম্পানিকে উদ্ধারের জন্য আল্লারাখাকে সুযোগ দেওয়া হলো, সে মঞ্চে উঠল, আর একটার পর একটা গোলাপ বের করতে লাগল। সে আসলে ৭৮৬টা গোলাপ বের করেছিল। সুবাসিত রক্তগোলাপ। কিন্তু কুড়িগ্রামের দর্শকেরা বলাবলি করতে লাগল গোলাপের সংখ্যা দু হাজার। চার হাজার। ‘তারা বাড়ি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল দশ হাজারে।’ এই যে সৈয়দ হক ৭৮৬ সংখ্যাটা ব্যবহার করলেন, এই সংখ্যাটা কিন্তু গল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়। এটা সাংবাদিকতার কৌশল। মার্কেজ বলেন, সাংবাদিকতায় একটা মিথ্যা পুরো কাহিনিটাকে নষ্ট করে, আর গল্পে একটা সাংবাদিক তথ্য পুরো গল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়। (আমি আমার মা বইয়ে আজাদের বাবার গাড়ির নম্বর ব্যবহার করেছি। এটা সত্যি নম্বর। আমি জানি, এটার প্রয়োজন গল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার জন্য)। কিন্তু এরপর যে সাধারণ মানুষ সংখ্যাটাকে দশ হাজারে উন্নীত করে। এটাও এসেছে আমাদের বাস্তবতা থেকে। এই দেশ তো সেই দেশ, যেখানে-
লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার।
শুমার করিয়া দেখে, চল্লিশ হাজার।।
এই যে আল্লারাখা, যার নাম পরে রাখা হবে ফিরদৌসি, সে কীভাবে শূন্য থেকে গোলাপ বের করার ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতাটা লাভ করল? ‘চম্পার চুলের ওপর চাঁদের মতো আবার সেই একগুচ্ছ চুল লাফিয়ে পড়ল।’ ওই একগুচ্ছ চুলের রূপ দেখে, যা চাঁদের মতো, তা দেখে আল্লারাখা বা ফিরদৌসি অলৌকিক ক্ষমতাবান হয়ে উঠল। সে জাদুর মঞ্চে ওঠে গোলাপ বের করতে পারে।
চম্পার বাবা, জাদু কোম্পানির প্রধান জাদুকর ও মালিক, প্রফেসর সাহেব জহিরের প্ররোচনায় আল্লারাখাকে জিগ্যেস করলেন, কী করে সে গোলাপ বের করতে পারে? রহস্যটা কী?
এখন আল্লারাখা কী বলবে। সে তো শুধু জানে, চম্পার চাঁদের মতো চুল দেখার পরই সে এই ক্ষমতা অর্জন করেছে। এটা তো কাউকে বলা যায় না, বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না।
আল্লারাখা বা ফিরদৌসি যখন মঞ্চে দাঁড়ায়, কী ঘটে?
‘সারা হলে তখন পশলার পর পশলা গোলাপের বৃষ্টি হচ্ছে। ফোয়ারা থেকে শীকরের মতো উৎক্ষিপ্ত হচ্ছে গোলাপ, গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে সুগন্ধ।’ আমরা এখন জানি, এই বর্ণনা জাদুবাস্তবতার।
এই রকম আমরা আরো দেখব ১৯৮০ সালে লেখা সৈয়দ শামসুল হকের ‘অন্তর্গত’ কথাকাব্যে।
মুক্তিযোদ্ধা আকবর কীভাবে লুকিয়েছিল যুদ্ধের সময়-
‘মান্দারবাড়ি ঢুকতেই দেখবেন এক বিরাট অশ্বত্থ গাছ,
সেই গাছের ওপর উঠে
ডালপালার ভেতর লুকিয়ে থাকে সে, তিন দিন তিন রাত,
অশ্বত্থ গাছের পাতা হয়ে যায় সে,
তার গায়ের রং অশ্বত্থের সবুজ হলুদ হয়ে যায়,
গাছের ফেটে যাওয়া বাকলের ভেতরে জিভ ঢুকিয়ে
সে গাছের রস পান করে তৃষ্ণা মেটায়, আর অপেক্ষা করে, আর
অপেক্ষায় সে থাকে,
তার গায়ে সারাদিন বাদুরের দল ঝুলে থাকে তীক্ষè নখে,
তার শরীরের ভেতর দিয়ে সারাদিন পাখিরা ওড়াউড়ি করে,
অশ্বত্থের ফলের মতো তার চোখ,
কিন্তু পাখিরা জানে গাছের সব ফল খেতে নাই,
পাখিরা তার চোখের ফল ডানা দিয়ে আড়াল করে রাখে,
আকবর হোসেনের গায়ে বাকলের মতো ফাটল ধরে,
সেই ফাটলের ভেতর দিয়ে তার গোলাপি মাংস দেখা যায়।’
এই বর্ণনা একেবারে জাদুবাস্তবতারই বর্ণনা।
সৈয়দ শামসুল হক আমাদেরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এই জাদুবাস্তবতাও আমাদের নিজস্ব জিনিস, তিনি প্রেরণা নিয়েছেন আমাদের ময়মনসিংহ গীতিকা ও রূপকথা থেকে। যেখানে আমরা দেখব, ভরা যৌবনা যুবতী নারী দিনের পর দিন নদীর ঘাটে তার হারানো প্রণয়ীর জন্য অপেক্ষা করে, দাঁড়িয়েই থাকে। কিংবা আমরা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর রচনায় পাব, শবেবরাতের রাতে সমস্ত প্রকৃতি স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য দেখাতে নত হচ্ছে, গাছপালা, ক্ষেত-ফসল- সব।
এই রকমভাবে সৈয়দ শামসুল হক হয়ে ওঠেন জাদুবাস্তবতার জনকদের একজন।