রাস্তার ইট চুরিতে ছাত্রলীগ নেতা, উদ্ধারকর্তাও আরেক নেতা
তৌহিদ বকসী ঠান্ডা, কুড়িগ্রাম থেকে
কুড়িগ্রামে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের নির্মাণাধীন ছাত্রাবাসের সামনের রাস্তার ইট খুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে সংগঠনেরই নেতা-কর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় সেই ইট উদ্ধার করেছেন।
প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের এই ইট চুরি হয় গত মঙ্গলবার রাতে। পরে খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতাকর্মী পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তিনটি ট্রাক্টর আটক করে।
এই ইট চুরির ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে নাম এসেছে কুড়িগ্রাম পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজুর নাম। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে সংগঠনের কোন্দলের শিকার বলছেন।
গত বছর ১৫ অক্টোবর প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় অংশ নেন। সে সময় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ছয় লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়ক থেকে কলেজ মাঠের জনসভা স্থল পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণ করে। পরে পরবর্তীতে সরকারি কলেজের নির্মাণাধীন ছাত্রাবাসের সংযোগ সড়ক নির্মাণে এখানকার প্রায় ৬৩ হাজার ইট ব্যবহার করা হয়।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এসব ইট সরিয়ে ফেলা হয়। পরে গভীর রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সাকিব ও নাজমুল কয়েকজন পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখান থেকে ইট বোঝাই তিনটি ট্রাক্টর ও ৩০ শ্রমিককে আটক করা হয়। বুধবার সকালে শ্রমিকদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাজু আহমেদ রাজু এবং তার সহযোগীদেরকে এখন পর্যন্ত আটক করেনি পুলিশ। বাহিনীটির কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি।
তবে ছাত্রলীগ নেতা রাজু আহমেদ তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। জেলা ছাত্রলীগের গ্রুপিং এর কারণে একটি পক্ষ এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে অপ-প্রচারকারীরাই গত ঈদের আগে ওই রাস্তার অর্ধেক ইট চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘারে চাপানোর চেষ্টা করছে তারা।’
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সাকিব ঢাকাটাইমসকে জানান, গত রাত ১২টার দিকে খবর পান একদল দুর্বৃত্ত কলেজ ক্যাম্পাসের রাস্তার ইট গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। এখবর পেয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতা নাজমুল ইসলামসহ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন ৩০ থেকে ৩৫ জন শ্রমিক রাস্তার ইট তুলে ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তারা পুলিশকে খবর দিলে উপপরিদর্শক আরমান ও রফিকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
পুলিশ আসার পর ছাত্রলীগের নামধারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ৩০ জন শ্রমিকসহ তিনটি ইট বোঝাই ট্রাক্টর আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
আটক শ্রমিকরা পুলিশকে জানায়, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, সহ-সভাপতি ফিরোজসাহী, মিলুসহ বেশ কয়েকজন তাদের এই ইট তোলার কাজে লাগায়।
ট্রাক্টর ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন মানিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা রাজু আহমেদ মালামাল পরিবহনের জন্য আমার কাছে তিনটি ট্রাক্টর চান। আমি রাতেই ড্রাইভারদের ট্রাক্টর নিয়ে যেতে বলি। পরদিন জানতে পারি ইট চুরির অভিযোগে পুলিশ ট্রাক্টর থানায় নিয়ে গেছে।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষ হওয়ায় মানবিক বিবেচনায় সকল শ্রমিককে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ট্রাক্টরগুলো আটক আছে। এখন পর্যন্ত কেউ মামলা দেয়নি। পুলিশ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সাবিহা খাতুন বলেন, ‘অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ রাস্তাটি আমাদের না কি শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয় করে এ রাস্তা নির্মাণ করে। যা পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষের।’