সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বরিশালের আগৈলঝাড়ার বাবুল হওলাদার ও শহিদুল হাওলাদারের পরিবারের সদস্যরা এখন দিশেহারা। উপার্জনক্ষম দুই ভাইকে হারিয়ে পরিবারটির সামনে এখন শুধুই অন্ধকার। মৃত্যুর শোকের পাশাপাশি বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান ও প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সম্বল এখন শুধু চোখের জল।
দুই ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর পরিবারটির আহাজারি ছুঁয়ে গেছে উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের ছয়গ্রামসহ আশপাশের এলাকার মানুষকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত বাবুল ও তার ছোট ভাই শহিদুলের বাবা-মা, স্বজনরা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
বাবা আ. হাকিম হাওলাদার জানান, ১০-১২ বছর আগে পরিবারে সচ্ছলতা আনতে জায়গাজমি বিক্রি করে শহিদুল ও বাবুলকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। বাবুল স্যানিটারি মিস্ত্রী ও সহিদুল টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবুল ও শহিদুল মারা যান। দুপুরে বাবুল ও শহিদুলের মৃত্যুর সংবাদ সহকর্মী মিন্টু মৃধা তার পরিবারকে ফোনে জানান।
আ. হাকিম হাওলাদার তার ছেলেদের লাশ দ্রুত বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
দুই ভাইয়ের বৃদ্ধা মা নূরজাহান আর্তনাদ করে বলেন, ‘কে আমার শহিদুল ও বাবুলকে আমার বুকে এনে দেবে! কে চালাবে তাদের সংসার! কীভাবে চলবে তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া!’
নিহত শহিদুলের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘আগের দিন ফোনে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তখন তিনি বলেন, আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাড়িতে টাকা পাঠাতে দেরি হবে। মেয়ে অথৈ ও আতিয়ার দিকে খেয়াল রাখতে বলেন।’
পরিবারের উপার্জনক্ষণ দুই সদস্যের মৃত্যুতে এখন দিশেহারা সংসারের বড়রা। মৃত্যুর শোকের ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গে আসে এতগুলো মানুষের জীবনধারণের ভাবনাটি। নিহত বাবুলের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, ‘সংসারের নাবালক ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? সংসার কে চালাবে এবং বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে কে দেখবে এখন!’
বাবুল-শহিদুলের ছোট ভাই প্রতিবন্ধী নান্নু হাওলাদার বিলাপ করে বলেন, ‘ভাইয়েরা আমাকে চিকিৎসাসহ আর্থিক সহযোগিতা করত। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমাকে কে দেখবে! আমি কীভাবে বাঁচব।’
নিহত বাবুলের চার বছরের মেয়ে হিমি জানে না তার বাবা চলে গেছে না-ফেরার দেশে। হিমি পিতার ছবি নিয়ে অপেক্ষায় আছে তার বাবা তার কাছে কবে আসবে।