প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১২:৫৯:১২আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৩:১০:১৫
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অর্থ আদায় যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ, ঢাকাটাইমস
চট্টগ্রামের মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই ভিড় লেগে থাকে। বিশেষ করে টিকা দানসহ ছোট-খাটো নির্ধারিত কিছু সেবার জন্য সবাই এই কেন্দ্রে ছুটে যান। বিনামূল্যে এসব টিকা দেয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার কাছ থেকেই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। সেবা নিতে আসা রোগীদেরকে বুঝতেই দেয়া হয় না যে এসব সেবা বিনামূল্যে দেয়া হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলেও সবাই তা এড়িয়ে যাচ্ছিল। সম্প্রতি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সময় এক স্বাস্থ্যকর্মীকে গণপিটুনি দেয়ার পর নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শুরু হয়েছে চিঠিচালাচালি।
নগরীর শুলকবহর ওয়ার্ডের ষোলশহর আবাসিক এলাকার আর্বান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মী নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে গণপিটুনি দেয়ার পর থেকে ঐ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অর্থ আদায় বন্ধ থাকলেও নগরীর অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অর্থ আদায় বহাল রয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে একাধিক আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টার রয়েছে। যেখানে বিনামূল্যে নিয়মিত টিকাদান ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা বিনামূল্যের টিকা ও ঔষধের বিনিময়ে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদার করে নিজেরে পকেট ভরছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, শিশুদের জন্য নির্ধারিত ছয়টি টিকার প্রতিটির জন্য ৫০ টাকা করে আদায় করছে স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং এটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে এবং সবার কাছ থেকেই এটা আদায় করছে। এছাড়া মা-দের জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন দিয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণের আরও বিভিন্ন পদ্ধতির সেবা নেয়ার বিনিময়েও রোগীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সুখি পিলের বিনিময়ে আদায় করেন ৩০ টাকা। অথচ এসব ওষুধ সম্পূর্ণ বিনামূল্যের, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’র অনুদান হিসাবে দিচ্ছে। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক অভিযোগও রয়েছে। ঝুঁকি থাকার পরও হেলথ সেন্টারগুলোতে চলছে অবৈধ গর্ভপাত। এর বিনিময়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হেলথ সেন্টারগুলো খোলা থাকলেও পরে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের বাসায়ও চলে এই কার্মকা-। বাসায় সেবা দেয়ার বিনিময়ে হাতিয়ে নেয়া হয় দু/তিনগুণ টাকা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, প্রতিদিন তাদের ৫/৬ হাজার টাকার মতো থাকে।
সম্প্রতি নগরীর শুলকবহর ওয়ার্ডের ষোলশহর আবাসিক এলাকার আর্বান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মী নাজিম উদ্দিন স্থানীয় যুবলীগ নেতার স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন, তাকে মারধর করা হয়। পরে শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম ছুটে গিয়ে নাজিম উদ্দিনকে উদ্ধার করেন।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর মোরশেদ আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, টাকা আদায়ের অভিযোগ অনেক দিনের। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্মী নাজিম উদ্দিনকে আমি সতর্কও করে দেই। কিন্তু অর্থের লোভ সংবরণ করতে পারেননি সে। শেষ পর্যন্ত তাকে লাঞ্ছিত হতে হলো। নাজিম উদ্দিনের ড্রয়ারে এসময় পাঁচ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে এসব টাকা সে সেবা নিতে আসা লোকজনকের কাছ থেকে নিয়েছেন।
কাউন্সিলর ঢাকাটাইমসকে বলেন, শুধু নাজিম উদ্দিন নন, চসিকের সবকটি আর্বান হেলথ কেয়ার সেন্টারে স্বাস্থ্যকর্মীরা বিনামূল্যের টিকা দিয়ে টাকা আদায় করেন। এতে প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্পদশালী হয়ে উঠেছেন। এমন কোন স্বাস্থ্যকর্মী নেই নগরীতে বাড়ি-গাড়ি ও জমি-জমা নেই। বিষয়টি তদন্ত করা দরকার।
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমসকে বলেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় টিকা ও ওষুধ দিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। এ বিষয়ে আমরা সোচ্চার হয়েছি। নগরির মেয়র ও সচিবকে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রাইমারি হেলথ সেন্টারগুলোতে টাকা আদায়সহ সকল অনিয়মের খোঁজ খবর নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/ ২৫ সেপ্টেম্বর/ আইখ/ এআর/ঘ.)