কামরু। গোদাগাড়ীর আলোচিত এক হেরোইন মাফিয়ার নাম। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। মাদক নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন তার স্ত্রী রোজিনা বেগমও। কিন্তু কারাগারের ভেতর বেশি দিন আটকে রাখা যায় না তাদের। প্রভাবশালী এই দম্পতি নানা কৌশলে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। তারপর জড়িয়ে পড়েন পুরনো কারবারেই। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তাদের আবারও হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার সকালে রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ ঠাকুরমারা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সঙ্গে হেরোইনের এক ক্রেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম আবদুস সালাম। বাড়ি নগরীর আলীগঞ্জ এলাকায়। তার বাবার নাম মাইনুদ্দিন।
কামরুর বাবার নাম জকিমুদ্দিন। কামরুর আসল বাড়ি জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষ্ণবাঢি কালিদীঘি গ্রামে। তবে এলাকায় মাদক ব্যবসা করায় গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে বছর দুয়েক আগে তিনি এলাকা ছেড়েছেন। এরপর থেকে তিনি নগরীর উপকণ্ঠ ঠাকুরমারা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।
নগরীর রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, হেরোইন কেনাবেচার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার থানার একদল পুলিশ সদস্য রবিবার সকালে কামরুর ভাড়া বাসায় অভিযান চালায়। এ সময় ওই বাড়ি থেকে ১০০ গ্রাম উদ্ধার করা হয়। আর হেরোইন কেনাবেচার অভিযোগে কামরুজ্জামান ওরফে কামরু (৪৫), তার স্ত্রী রোজিনা বেগম (৩৫) ও হেরোইনের ক্রেতা আবদুস সালামকে আটক করা হয়। পরে থানায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করা হয়। এরপর দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কামরুর নামে বিভিন্ন থানায় প্রায় এক ডজন মাদকের মামলা রয়েছে। এর আগে গত ২৩ মার্চ নগরীর উপকণ্ঠ মোল্লাপাড়া এলাকা থেকে ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ তাকে আটক করেন র্যাব সদস্যরা। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। অবশ্য র্যাবের উদ্ধার হওয়া ওই হেরোইন পরবর্তীতে পুলিশের কারসাজিতে হয়ে যায় ‘অপিয়াম’ বা কীটনাশক জাতীয় পদার্থ।
ওই সময় অভিযোগ ওঠে, কামরু জেলের ভেতরে থাকলেও তার সহযোগীরা প্রথমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে। পরে তার সহায়তায় কামরুর সহযোগীরা ঢাকার গেন্ডারিয়ার রাসায়নিক পরীক্ষাগারে তদবির করে হেরোইনকে অপিয়াম বানিয়ে ফেলে। ওই প্রতিবেদন ঢাকা থেকে রাজশাহীর আদালতে আসা মাত্রই কামরুকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে কামরু কারাবন্দী থাকা অবস্থাতেই গত ৬ এপ্রিল ঠাকুরমারার এই বাসা থেকেই র্যাব সদস্যরা কামরুর স্ত্রী রোজিনাকে ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তী সময়ে তিনিও কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপরই এবার তাদের একসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হলো।
কালিদীঘি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কামরু যখন ওই এলাকায় থাকতেন, তখন এলাকার লোকজন তার মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করতেন। এ জন্য প্রতিবাদকারীদের ফাঁসাতে তার আপন প্রতিবন্ধী এক বোনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ মাঠের ভেতর ফেলে রাখেন। এরপর মাদক ব্যবসার প্রতিবাদকারীদের নামে কামরু আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অবশ্য পরবর্তী সময়ে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এ হত্যাকাণ্ডে কামরু ও তার স্ত্রীসহ নিকটাত্বীয়রাই জড়িত। এরপর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারও করে। তবে এ মামলা থেকেও তারা আদালতে জামিন পেয়ে যান।