ভারতের কলকাতা থেকে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ(জেএমবি)-এর ছয় সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে তিন জনই বাংলাদেশি। বাকিরা ভারতীয় বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স(এসটিএফ)।
সোমবার এসটিএফ প্রধান বিশাল গর্গ জানান, আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গা থেকে ওই ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন-আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালুভাই, জাহিদুল শেখ ওরফে জাফর ওরফে জাবিরুল, মহম্মদ রফিক ওরফে রুবেল ওরফে পিচ্চি, মাওলানা ইউসুফ ওরফে বক্কর ওরফে আবু খেতাব, শাহিদুল ওরফে সূর্য ওরফে শামিম এবং আব্দুল কালাম ওরফে কলিম।
এদের মধ্যে পাঁচ জনই খাগড়াগড় মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামি। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এএনআই)এই ছয় জনকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
গ্রেপ্তারের পর পশ্চিমবঙ্গের লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলনে এসটিএফ প্রধান জানান, দুই দিন আগে আসামের কাছাড় থেকে একটা জাল নোটের মামলায় কলকাতা এসটিএফ জাবিরুলকে গ্রেপ্তার করে। তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। এরপর জাবিরুলকে লাগাতার জেরা করে জানা যায়, তিনি জেএমবি’র সঙ্গে যুক্ত। শুধু তাই নয়, তার কাছ থেকে বেশ কয়েক জন জেএমবি সদস্যের খবর জানতে পারে এসটিএফ।
সেই সূত্র ধরে রবিবার নিউ কোচবিহার স্টেশন থেকে কালামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, কালাম বাংলাদেশ থেকে আসাম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টায় ছিল। বাংলাদেশ থেকে তাকে কাছাড়ে সংগঠনের দায়িত্ব সামলাতে পাঠানো হয়েছিল।
এরপর উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-বাগদা রোডে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি জায়গা থেকে ইনাম এবং রফিককে গ্রেপ্তার করা হয়। ইনাম এ রাজ্যে জেএমবি ইউনিটের প্রধান। তার বাড়ি বাংলাদেশের জামালপুরে। রফিকের বাড়িও ওই একই জায়গায়। সে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরিতে পারদর্শী। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া জেএমবি সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন রফিক।
এসটিএফ প্রধান জানিয়েছেন, এর পরে ওই জেলারই বসিরহাটের নতুন বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইউসুফ এবং শাহিদুলকে। ইউসুফের বাড়ি বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে। তার সন্ধান দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছিল এনআইএ। এসটিএফ-এর দাবি, শাহিদুল উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান হিসেবে কাজ করত। এ দেশে বিভিন্ন নাশকতামূলক ছকের মূল পরিকল্পনাকারীও তিনি। তার বাড়ি আসামের বরপেটায়।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রচুর বিস্ফোরক, জিহাদি বই, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, প্রায় দু’কেজি সাদা বিস্ফোরক পাউডার, বিয়ারিং বল, তার কাটা যায় এমন জিনিস এবং ব্যাটারি পাওয়া গেছে।
এসটিএফ-এর দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রত্যেকেই খাগড়াগড় হামলার পরে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল।
জেরার মুখে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন, তাদের বড়সড় একটি নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। তবে কলকাতায় হামলা করার কোনো উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। দক্ষিণ বা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো জায়গাকে তারা বেছে নিত বলে জেরায় জানিয়েছেন।
এসটিএফ প্রধান জানিয়েছেন, ধৃতরা সাংকেতিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত। সেই ভাষার অর্থ খুঁজে বার করে ওদের ধরা হয়েছে। সোমবার তাদের আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।