যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির দুই প্রার্থী প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ করে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন। কর্মসংস্থান, ই-মেইল বিতর্ক, জাতিগত বিদ্বেষ, পররাষ্ট্রনীতি, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আচরণ এবং কর খেলাপের মতো বিষয়গুলো নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কযুদ্ধ বাধে।
বিতর্কে স্বভাবসুলভ হিলারি ক্লিনটনকে আক্রমণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনের ‘স্টামিনা’ বা টিকে থাকার মতো শক্তি নেই। তার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু সেগুলো ‘ব্যাড এক্সপেরিয়েন্স’।
ব্যক্তিগত এ আক্রমণের উচিত জবাব দিয়ে দেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেন, ডোনাল্ড নারীদের সম্মান দিতে জানেন না। তিনি নারীদেরকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেন। এমন ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চিফ হওয়ার ‘টেম্পারামেন্ট’ বা মানসিক প্রস্তুতি থাকে না।
স্থানীয় সময় সোমবার রাতে নিউইয়র্কের হফসট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যে ৯০ মিনিটের এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন এনবিসি টিভির লেস্টর হল্ট। চূড়ান্ত ভোটের লড়াইয়ের আগে আরও দুটি বিতর্কে দেখা যাবে হিলারি ও ট্রাম্পকে।
বিবিসি জানায়, হিলারি ও ট্রাম্পের এ টেলিভিশন বিতর্ক ১০ কোটি দর্শক সরাসরি দেখেছেন।
বিতর্কে হিলারি ক্লিনটন সারাক্ষণই নিজের ধৈর্য্য, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বক্তব্য রাখেন তখন তার মাঝে তিনি ফোঁড়ন কেটেছেন খুব সামান্যই। কিন্তু হিলারি যখন বক্তব্য রেখেছেন তখন প্রতিবারই বার বার তার বক্তব্যের মধ্যে তীর্যক বাক্য ছুঁড়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইরাক আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্য নীতির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আইসিস বা আইএস সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তা অস্বীকার করেন হিলারি।
তিনি বলেন, ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং সেই আগ্রাসনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন দিয়েছিলেন। এ সময় ট্রাম্প মিথ্যা বলে বিষয়টি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
হিলারি ক্লিনটন জোর দিয়ে বলেন, ট্রাম্প যে ইরাক, লিবিয়া যুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিলেন সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে।
মডারেটর লেস্টার হল্ট এক পর্যায়ে ট্রাম্পের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে মারেন। তিনি জানতে চান, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছেন। আপনি কি এটা সমর্থন করেন? এ প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর না দেননি ট্রাম্প।
হিলারি ও ট্রাম্প আরও দুটি বিতর্কে মিলিত হবেন। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে দুই প্রার্থী ইতিমধ্যে প্রায় দেড় বছর কাটিয়েছেন। তারা অসংখ্য বিতর্ক ও নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়েছেন। পত্রিকা-টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এসব ছাপিয়ে দুজনের জন্যই মুখোমুখি বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
চলতি বছরের ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপগুলোতে দুই প্রার্থীর পক্ষে কাছাকাছি জনসমর্থন লক্ষ্য করা গেছে।
বিবিসির সর্বশেষ জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৮ শতাংশ আর ট্রাম্পের পক্ষে ৪৬ শতাংশ সমর্থনের কথা বলা হয়েছে।