দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার সরকার ও বামপন্থী ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সোমবারের এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ৫২ বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাতে অবসান হল। খবর বিবিসির।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই লড়াইয়ে দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ লাখ মানুষ।
চুক্তি অনুষ্ঠানে ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা টিমোচেনকো(৫৭) সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সবার কাছে ক্ষমা চান।
টিমোচেনকো বলেন, ‘লড়াই চলাকালীন সময় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’
কলম্বিয়ার কার্তেজেনাতে এই চুক্তির অনুষ্ঠানে অতিথিরা শান্তির প্রতীক হিসেবে সাদা রঙের পোশাক পরেছিলেন।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস বলেন, ‘আজ কলম্বিয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিশ্ব এই দিনটি উদযাপন করছে। কারণ এখন আর কোনো যুদ্ধ নেই।’
‘আমরা এখন যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারি, সব বাধা অতিক্রম করে সব গোষ্ঠী মিলে একটি সুন্দর দেশ গঠন করতে পারি। আমরা সবসময় একটি শান্তিপ্রিয় দেশের স্বপ্ন দেখেছি।’
চুক্তি অনুষ্ঠানে ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা টিমোচেনকো বলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির আর্ম উইং ১৯৬৪ সালে যুদ্ধ শুরু করেছিল। আমরা অস্ত্রের পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছি। আমরা সবাই আমাদের ভেতর থেকে, হৃদয় থেকে নিরস্ত্র হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং টিমোচেনকো ঐতিহাসিক এই চুক্তির স্বাক্ষরের জন্য বুলেট থেকে তৈরি কলম ব্যবহার করা হয়েছে।
চুক্তি অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে হাভানায় সমঝোতার যৌথ ঘোষণা দিয়েছিল কলম্বিয়া সরকার ও ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
সেখানে, বিস্তৃতভাবে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উভয় পক্ষ একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়।
কিউবার রাজধানীতে হওয়া ওই অনুষ্ঠানে কলম্বিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান উমবেরতো দে লা চাল্লে ও ফার্কের প্রধান আলোচক ইভান মার্কেজ চুক্তিতে সই করেছিলেন ।
কিন্তু এবার কলম্বিয়ার মাটিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতার মাঝে চূড়ান্ত চুক্তিতে সই হল।
চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে ফার্ক অস্ত্র সমর্পণ করে বেসামরিক জীবনে ফিরে যাবে।