সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরামের ভয়ে এলাকা ছাড়া স্থানীয় সাংবাদিকরা। তাঁকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এক সাংবাদিককে মারধর ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে এই ইউএনও’র বিরুদ্ধে। অন্য সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে তারাও এখন আসিফ বিন ইকরামের রোষাণলে পড়ে এলাকা ছাড়া।
শুধু সাংবাদিক নন, তার রোষাণলে পড়ে এলাকার এক দরিদ্র মহিলাও সম্প্রতি এলাকা ছেড়েছেন এবং তিনিও এই ইউএনও’র হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। মারধরের শিকার এক সাংবাদিক সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ইউএনও’র অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার মানুষ ও সাংবাদিকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। ইউএনও’র শাস্তির দাবিতে এলাকায় মানববন্ধনও হয়েছে। এছাড়া তার শাস্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, সাংবাদিককে মারধরের বিষয়টি আমরা অবহিত হয়েছি, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সংবাদ প্রকাশ করায় বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ওপর ক্ষুব্ধ শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরাম। নানা সময়ে তিনি সাংবাদিকের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য ও তাদের ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দেন। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত রবিবার।
উপজেলা সদরের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে স্থানীয় সাংবাদিক বকুল আহমেদ তালুকদার একটি ছোট মুদি দোকান পরিচালনা করতেন। রবিবার ইউএনও আসিফ বিন ইকরাম পুলিশ নিয়ে সেখানে ছুটে যান।
তিনি গণমাধ্যমকর্মী বকুলকে সামনে পেয়েই গালাগাল শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে তিনি বকুলকে মারধর করেন। পরে তিনি ঐ সাংবাদিককে মারধর করে পুলিশকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন। এক পর্যায়ে বকুল দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে রক্ষা পান।
সাংবাদিক বকুল ঢাকাটাইমসকে জানান, ইউএনও নিজে দোকানের জিনিসপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে দেন এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে নির্দেশ দেন পেট্রল নিয়ে এসে দোকানে আগুন দিতে। এরপর দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
পরে ঐ সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত বকুল জেলা শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক হিজল-করচ-এর শাল্লা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এদিকে এ ঘটনায় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ইউএনও এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরাম। তার ভয়ে শাল্লা উপজেলা থেকে জেলা শহরে পালিয়ে এসেছেন স্থানীয় অনেক সাংবাদিক।
শাল্লা উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক জয়ন্ত সেন বলেন, ইউএনও’র ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে এসেছি, তিনি আমাদের সাংবাদিকদের গুলি করে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন।
দৈনক সুনামগঞ্জের ডাক-এর সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইউএনও এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরামের হয়রানির ভয়ে শাল্লায় থাকতে পারছি না। আমরা আতঙ্কিত।
শুধু যে সাংবাদিকরা এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরামের হাতে নাজেহাল হয়েছেন তা নয়। উপজেলার চব্বিশা গ্রামের কুহিনূর বেগমকেও এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরামের হয়রানির শিকার হয়ে কারাবরণ করতে হয়েছে। ঐ মহিলাকে ইউএনও নিজেই মারধর করেছেন বলে কুহিনূর বেগম অভিযোগ করেছেন।
সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিজন সেন রায় ও লতিফুর রহমান রাজু বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়, তার হয়রাণিতে স্থানীয় সাংবাদিকরা অতিষ্ঠ। আমরা সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদে জেলা শহরে মানববন্ধন করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি প্রধানমন্ত্রী বরাবর।
ইউএনও এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরামের বক্তব্য জানতে চাইলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।