খুবই গরিব তারা। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাজার মূল্যে চাল কেনার সামর্থ্য নেই তাদের। তাই তাদেরকে ভর্তুকি মূল্যে চাল দিচ্ছে সরকার। অথচ এই মানুষদের কাছ থেকেও ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ে। কার্ড করে দেয়ার নামে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এক হাজার একশ জনের কাছ থেকে একশ টাকা করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ওই চেয়ারম্যানও অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তবে তিনি এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার দাবি, এই টাকা তিনি নিচ্ছেন না, রাজস্ব আয় কম হওয়ায় সরকারি কোষাগারে জমা দিতেই এই টাকা নিয়েছেন তিনি।
একই ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে শুরু থেকেই। কিন্তু এর কোনো তদন্ত হয়নি আর ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি কারো বিরুদ্ধে। ফলে গরিব মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে আর প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছে সামর্থ্যবানরা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিদরিদ্রদের জন্য বিশেষ মূল্যে এই খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, এই কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।
তবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এক নং রুহিয়া ইউনিয়নে দরিদ্র্যদের কাছ থেকে টাকা দেয়ার ঘটনা জানাজানি হলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি।
লক্ষাধিক টাকা ‘ঘুষ’ আদায়
হতদরিদ্রদেরকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিতে এই এলাকায় এক হাজার ৯৯টি কার্ড বিতরণ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। এই কার্ড দিতে সেলামির নামে চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু একশ টাকা করে আদায় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ঘনিমহেশপুর গ্রামের কার্ডধারী কশিদা বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মুই গরিব মানুষ, টাকা পাব কই। বলেছিলাম সে কথা। কিন্তু তারা বলে আমার কাড বাদ হবে।’
একই গ্রামের নাজিম উদ্দীন বলেন, পাশের আটোয়ারী উপজেলায় কারো কাছে টাকা নেওয়া হয়নি। কিন্তু তার ইউনিয়নে একশ টাকা না দিয়ে কেউ কার্ড পায়নি।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম উদ্দীন বলেন, এই ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে একশ টাকা হিসেবে এক লাখ ৯ হাজার নয়শত টাকা আদায় করা হয়েছে অবৈধভাবে।
এই টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রুহিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবুও বলেন, ‘এ ইউনিয়নে ট্যাক্স আদায়ের গতি অত্যন্ত ধীর। মানুষজন ট্যাক্স দিতে চায় না। তাই কার্ড দেওয়ার সময় একশ টাকা হারে চৌকিদারি ট্যাক্স আদায় করা হয়েছে। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে।’
তবে ট্যাক্স বা অন্য কারও নামে কার্ডের জন্য টাকা আদায়ের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাফিজ উদ্দীন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘সরকার হতদরিদ্রদের সহযোগিতা করতেই ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে। কাজেই তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কোন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কার্ড বিতরণ নিয়ে একই ইউনিয়নে আরও অনিয়মের অভিযোগ
ঘনিমহেশপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ললিত কুমার রায়ের পাকাবাড়ি, হাসকিং মিল চাতাল ও ১০-১৫টি পাকা দোকান থাকলেও তার ছেলে অর্জুন চন্দ্রকে হতদরিদ্র দেখিয়ে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়।
একই গ্রামের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হালিমা বেগম তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম, ভাসুর খাদেমুল ইসলাম, দেবর জাহেরুল ইসলামের নামে একই বাড়িতে তিনটি কার্ড এবং ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম তার নিজস্ব লোকজনের মাঝে বাড়ি প্রতি দুইটি করে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।