গ্রামের একদল উদ্যমী মানুষ নিজেদের জমি দান করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্কুল। কিন্তু একদিন তারা দেখেন সেই স্কুলঘরের টিন, বাঁশ, খুঁটি সব উধাও। এরপর তাদের জন্য আরো বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তারা জানলেন, যে জমি স্কুলের নামে দান করেছিলেন তারা, তা স্বামীর নামে রেজিস্ট্রি করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।
বুধবার রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন স্কুলের নামে জমিদাতাসহ এলাকাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, ১৯৯৮ সালে জেলার মোহনপুর উপজেলার ধামিন নওগাঁ গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় এলাকাবাসী। নিজেদের দান করা জমিতে স্কুলের ঘর নির্মাণ করার পর ১৯৯৯ সালে শুরু হয় সেখানে পাঠদান। বছর কয়েক যেতে হঠাৎ তারা দেখতে পান এক এক করে স্কুলের টিন, বাঁশ, খুঁটি সরিয়ে নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক রাবেয়া বসরীর স্বামী শফিকুল ইসলাম। এরপর ২০০৫ সালে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
স্কুলের জন্য জমি দানকারী নায়েব আলী ও সাহেব আলী জানান, স্কুল বন্ধ হওয়ার পর এলাকার মানুষ জানতে পারেন, স্কুলের নামে থাকা জমি প্রধান শিক্ষক তার স্বামীর নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। জমি রেজিস্ট্রি করতে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে সদস্যদের স্বাক্ষরও জাল করা হয়।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল কাশেম ও জিয়াউর রহমান অভিযোগ করেন, তারা জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য কোনো রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেননি। স্কুলের জমিতে থাকা বাঁশ কাটার সময় তারা বিষয়টি জানতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, প্রধান শিক্ষক রাবেয়া বসরী তার স্বামীর নামে জমি রেজিস্ট্রি করতে স্কুল পরিচালনা কমিটির যে রেজুলেশন ব্যবহার করেছেন, তার সঙ্গে মিল নেই দলিলের। স্কুলে রেজুলেশনটি ২০১৪ সালের ১০ জুলাই করা হয়েছে। অথচ দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১০ সালের ১০ মে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি নায়েব আলী জানান, কাউকে কিছু না জানিয়ে স্কুলের জমি প্রধান শিক্ষক তার স্বামীর নামে লিখে দিয়েছেন। এ জন্য কমিটির অধিকাংশ সদস্যের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। মামলাও করেছেন আদালতে। এ কারণে প্রধান শিক্ষিকা ও তার স্বামী শফিকুল ইসলাম তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
তবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া বসরীর স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন। কাউকে কম টাকা দেননি। তার দাখিল করা রেজুলেশনের স্বাক্ষরগুলো সঠিক বলে দাবি করেন তিনি।