প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই জঙ্গিদের মদদদাতা। তাদের ছাড় দেয়া হবে না। সবার বিচার করা হবে।
স্থানীয় সময় বুধবার বিকালে ওয়াশিংটনের অদূরে ভার্জিনিয়ার টাইসন কর্ণারের রিটজ কার্লটন হোটেল বলরুমে বৃহত্তর ওয়াশিংটনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী জন্মদিন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা থাকলেও সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে তা বাতিল করা হয়। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ৭০তম জন্মদিনের কেক কাটার কথা থাকলেও তা কাটা হয়নি। সৈয়দ হকের মৃত্যুর কারণে জন্মদিনের অনুষ্ঠান না করার কথা আগেই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। জতির জনকের হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। দৃঢ়চিত্তে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশ বিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবে না।সূত্র এনা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই ছিলেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় করতে আমাদের সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন করা হয়েছে। যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করা হয়েছে।
শিশু ও নারীর সার্বিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও।
প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে সফলতা অর্জনসহ নানা বিষয়ে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদেরকে আরও বেশি করে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আমার ঋণ অনেক। যখনই বাংলাদেশ সংকটে পড়েছে তখনই প্রবাসী বাংলাদেশিরা এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশে ফেরার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি আমার সঙ্গে দেশে গিয়েছিলেন। তাদের সাহসী ভূমিকার জন্য আজো আমি বেঁচে আছি। এখনো আল্লাহর রহমতে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। সেজন্য ওয়াশিংটনে বসেও প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা করে অফিস করে দেশের জরুরি কাজ সমাধান করেছি। বাংলাদেশকে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
মতবিনিময় সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর চলে যাওয়ার পর সভাস্থলের বাইরে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন কর্মী বিক্ষোভ করে।