শেরপুরের ঝিনাইগাতী সীমান্ত অঞ্চলে ভারতীয় বন্যহাতির তাণ্ডব চলছে। গত তিনদিনে বন্যহাতির আক্রমণে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন। গ্রামবাসী এখন বন্যহাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। হাতির দলকে তাড়িয়ে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব উপকরণ দেয়া হয়েছে, তা আর আগের মত কাজে আসছে না বলে জানান গ্রামবাসী। এসব উপেক্ষা করেই আক্রমণ করে হাতির দল। যার ফলে তিন গ্রামবাসীর প্রাণ দিতে হলো।
হাতির আক্রমণে নিহতরা হলেন- ছোট গজনী এলাকার ললেন মারাক, পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকার পানবর গ্রামের চিবিরণ বেওয়া।
নদী পথে ভারত থেকে নেমে আসা বন্যহাতির দল খাদ্যের সন্ধানে বাংলাদেশের পাহাড়ে প্রবেশ করে। দিনভর পাহাড়ে অবস্থান করে। সন্ধ্যার পর খাদ্যের সন্ধানে চলে আসে লোকালয়ে। বর্তমানেও হাতির দলগুলো বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থান করছে। আবারও যে কোনো সময় বন্যহাতির তাণ্ডবে ঝড়ে যেতে পারে সীমান্তে থাকা গ্রামাবাসীর আরো প্রাণ।
দীর্ঘদিন থেকে হাতির তাণ্ডবে ওই এলাকার বহু লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। হাতির আক্রমণের শিকার হয়ে অনেক গ্রামবাসীকে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। এছাড়াও হাতির আক্রমণে অনেক বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
অসহায় গ্রামবাসী প্রাণ ও ফসল রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার আশায় আছেন। অন্যথায় বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে হবে বলে জানান সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামবাসীরা।
ভারতীয় বন্য হাতির দল পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদকৃত রোপা আমন ফসলসহ নানাজাতের সবজি ক্ষেত সাবার করে ফেলে। উৎপাদিত ফসল বন্যহাতি খেয়ে ফেললে গ্রামবাসীর জীবন-জীবিকা চলার কোনো উপায় নেই। এটিই যে তাদের একমাত্র আয়ের উৎস।
এলাকার দরিদ্র কৃষকরা হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার্থে মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে ও নানা কৌশল অবলম্বন করে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কৃষকের এই সব কৌশলের ভয়ভীতি না করে বন্যহাতির দল লোকালয়ে তাণ্ডব চালায়। বাধা দিতে গেলে হাতির আক্রমণে অকালে প্রাণ দিতে হচ্ছে সীমান্তের দরিদ্র কৃষকদের।
গত কয়েকদিনে হাতির তাণ্ডবে প্রাণহানির পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম রেজা, পিআইও আজিজুর রহমান, জেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা, রেঞ্জ কর্মকর্তা কবির হোসেন, রাংটিয়া বিট অফিসার মেজবাউল ইসলাম প্রমুখ।
বন্যহাতির তাণ্ডবে নিহত পরিবারের সমবেদনা দুঃখ প্রকাশ করেন রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা কবির হোসেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, সরকারি কাজে জেলা সদরে আছেন। তিনি এখনও কিছু জানেন না।
উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, হাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেছেন। প্রাণহানির জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে নিহত পরিবারকে শান্তনা দেন।
তবে, গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, হাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব উপকরণ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে আর হাতির দলকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
হাতির আক্রমণে নিহতদের পরিবারদের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা এবং সরকারিভাবে নিহতদের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।