বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন হয়নি জানতেন না গৃহায়ণমন্ত্রী
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৯:২৯:২১
বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন হয়নি জানতেন না গৃহায়ণমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
নির্দেশনা তৈরির ২০ বছর এবং আইন হওয়ার প্রায় ১০ বছর পরও বাস্তবায়ন হয়নি ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’। কি গ্রাম কি শহর, সর্বত্র হু হু করে মাথা তুলছে অপরিকল্পিত ভবন। ফলে দেশে দিন দিন বাড়ছে ভবন অবকাঠামো ঝুঁকি।
কিন্তু ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন হয়েছে কি না সেটি জানতেন না বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তবে এ বছরই ভবন নির্মাণবিধি (বিল্ডিং কোড) বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন’ বিষয়ক এক আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে।
দুর্যোগঝুঁকি কমানোর জন্য কাজ করছে এমন ১০টি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সংগঠন নারী কনসোর্টিয়াম অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। এতে সহায়তা করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হিউমেনিটারিয়ান এইড অ্যান্ড সিভিল প্রোটেকশন।
গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, ‘এই কোডটি (ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড) বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে আামি অবগত ছিলাম না। আমি কথা দিচ্ছি এ বছরই আইনটির বাস্তবায়ন হবে।’
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে নজর দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে মন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলার ইঞ্জিনিয়াররা খুব বেশি দক্ষ নন। আবার যারা বিল্ডিং তৈরির কাজে সরসারি জড়িত, তারাও খুব বেশি দক্ষ না।’
সবাইকে বিল্ডিং কোড মানতে হবে উল্লেখ করে গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, ‘এ জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করা দরকার। জনসচেতনাও জরুরি। রাজমিস্ত্রী ও জোগালিদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা বিল্ডিং কোড সম্পর্কে জানেন।’ কৃষিজমি নষ্ট না করে অকৃষি জমিতে পরিকল্পিত নগরায়ণ করার গুরুত্ব তুলে ধরেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নারী কনসোর্টিয়ামের চেয়ারপারসন ও একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ফলে নানা ধরনের অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। তবে ভয়ের বিষয়, এই অবকাঠামোগুলো তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। মানা হচ্ছে না নিয়মকানুন। ঢাকা শহরে এখন প্রায় দুই কোটি মানুষ। বড় কোনো ভূমিকম্প কিংবা দুর্যোগে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বেশির ভাগ ভবনের পরিকল্পনা, নকশা তৈরি করা হয় কম যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষকে দিয়ে। এ কারণে ভবনগুলোতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আবার সামনে কোনো জায়গা না রেখেই ভবন দাঁড়িযে যায়।’
অধ্যাপক জামিলুর রেজা আরো বলেন, ‘আইন-বিধি করার পর সবচেয়ে বেশি খেয়াল দিতে হবে তা বাস্তবায়নের দিকে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে লোকবল, দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতির পাশাপাশি একটি সহজ ও ছোট গাইডবুক তৈরি করতে হবে, যাতে একজন সাধারণ মানুষ ভবন তৈরি করার সময় ন্যূনতম বিষয়গুলো সহজে জানতে ও মানতে পারেন।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে উঠে আসে ভবন নির্মাণ কোড বাস্তবায়ন না হওয়ার দীর্ঘসূত্রতা। ১৯৯৬ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংস্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করার নির্দেশনা দিলেও তার কোনো বস্তবায়ন হয়নি। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০০৬ সালে সরকার এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আইনি বাধ্যবাধকতার পরও বিল্ডিং কোডটি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই হাইকোর্ট আইনটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে এক বছরের সময় বেঁধে দেয়। তারপর প্রায় ৬ বছর পার হলেও বাস্তবায়িত হয়নি আইনটি।
এত দিনেও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন না হওয়াকে দুঃখজনক উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই এর মূল কারণ। সিটি করপোরেশন, রাজউক, পৌরসভা কিংবা স্থানীয় সরকার প্রশাসনের নিজস্ব নিয়মের সঙ্গে সমন্বয় করে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন কাঠামো প্রণয়ন করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, বুয়েটের অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।