মৃত্যুর পর, মৃত্যুর স্তব্ধতা আর স্বেচ্ছা নির্বাসনকে অতিক্রম করে, বলা উচিত— হার মানিয়ে দেশে ফিরলেন শহিদ কাদরী। জাতীয় শহিদ মিনারে, বুদ্ধিজীবীদের সমাধিস্থলে তাঁকে বাঁধভাঙা আবেগে অভিবাদন জানাল বাংলাদেশ। কবি ও কবিতার মুকুটে এর চেয়ে বড় সম্মান ও গৌরবদানের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্ভাস আর কী হতে পারে? বিলম্বিত, মরণোত্তর ও স্বীকৃতিতে আমরা আনন্দিত। উদ্ভুদ্ধ।
যে কবিকে দ্রোহ, প্রেম, নাগরিকতা, তীক্ষ্ণ শ্লেষ (সন্দীপনীয়) এবং সব শেষে ইতিবাচকতার নিশ্চিন্ত স্বপ্ন নিরন্তর ছুঁয়ে থাকত— তাঁর দ্রোহে উৎস কোথায়? রাষ্ট্রের ক্লীবতা, অন্ধতা, সামাজিক ভাঙন আর প্রাতিষ্ঠানিকতার আগ্রাসন নয় কি? যে ক্ষমতামত্ততা আর অনুশাসন তাঁকে বিদ্রোহী, ক্ষুব্ধ করে তুলত, যার বিরুদ্ধে তাঁর সহজিয়া, তুখোড় উচ্চারণ প্রবাদবাক্যের মতো যে কোনও সঙ্কটে, দুঃসময়ে স্মরণ করি আমরা— রাষ্ট্র মানেই স্ট্রাইক, মহিলা বন্ধুর সঙ্গে/এনগেজমেন্ট বাতিল/রাষ্ট্র মানেই পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত/ব্যর্থ সেমিনার/রাষ্ট্র মানেই নিহত সৈনিকের স্ত্রী/রাষ্ট্র মানেই ক্লাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাওয়া/রাষ্ট্র মানেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের ব্যর্থতা/... ব্যর্থতা মানেই লেফট–রাইট, লেফট–রাইট, লেফট। — তাঁকে, ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে নিয়ে তাঁর দেশ যেভাবে সমাহিত করল, তাতে প্রমাণিত হয়ে গেল, সৎ আর শুদ্ধ কবির বচন অনিরুদ্ধ। মৃত্যু তাৎক্ষণিক একটি ঘটনা মাত্র, মৃত্যুকে আড়াল করে জেগে ওঠে আমিত্বহীন সত্তার স্মৃতি। এ–ও আরেক স্বাস্থ্যময় উদ্যাপন। ব্যক্ত অথবা সমষ্টির বেঁচে থাকার অপ্রতিহত লক্ষণ। কবিতায় আর ব্যক্তিকতায়, সম্পর্কের নির্মাণ আর প্রাণবন্ত স্বভাবে এভাবে জেগে থাকতেন শহিদ কাদরী নিজেও। তাঁর বন্ধুসঙ্গ, দিনযাপনের আড্ডা, আড্ডার বহুগামিতা সময়ের সঙ্গে স্মৃতির সূত্র স্থাপনকে সামনে রেখে আজ তাঁকে স্মরণ করি আসুন। ভারিক্কি চেহারা, দীর্ঘাঙ্গ, চওড়া বুক, বলিষ্ঠ বাহুর শহিদকে পরিচয়হীন দূরত্বে দাঁড়িয়ে খানিকটা গুরুগম্ভীর মনে হত। কিন্তু প্রথম আলাপেই তিনি যে দরজা খুলে দিতেন, সে দরজার ভেতরে বেজে উঠত তাঁর দিলদরাজ, বন্ধুত্বময়, নতুন বন্ধুসন্ধানী এমন এক চরিত্র, যা যে কোনও কনিষ্ঠ অথবা সমবয়স্ক আগন্তুককে মুগ্ধ করে দিত।
৭৭–এর দুপুর। ঢাকার বাংলা আকাদেমিতে রফিক আজাদের পাশের চেয়ারে বসে আছি। হঠাৎ গহীন পদক্ষেপে তাঁর আবির্ভাব। রফিক আলাপ করিয়ে দিতেই শক্ত কবজির করমর্দনে অচেনা, অখ্যাত তরুণের ডান হাত বন্দী। বললেন, আমিও ও দেশের লোক। আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদ। আমাদের পরিবার কলকাতায় থাকত। বাবার কবর ও আমার জন্ম শহরে, দেশভাগের পর আমরা ঢাকায় চলে আসি, কিন্তু নাড়ির টান সে তো এক অবিভাজ্য প্রবাহ। বলেই তীক্ষ্ণ, শ্লেষাত্মক হাসি। আলাপ চলছে। বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবিকে সম্মোহিত হয়ে দেখছি। অনাড়ম্বর, নিরহঙ্কার। বলতে বলতে শৈশবের সরণি দিয়ে হাঁটছেন, হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসছেন কবিতায়, ভাঙা–গড়ার বৃত্তান্তে। রফিক তাঁর স্বভাবজাত খিকখিক হাসি ছড়িয়ে বলছেন, চল্ শালা বেরিয়ে পড়ি, তৃষ্ণায় বুক ফাটছে। শহিদ রাজি হলেন না, উঠে পড়লেন। বড়জোর এক ঘণ্টার আলাপিত সংসর্গ— এটাই প্রথম এবং শেষ চাক্ষুষ। সত্যি কি এদিনই শহিদ কাদরীর সঙ্গে আমাদের আলাপের আরম্ভ এবং এখানেই তার নিবিড় সমাপ্তি? না এরকম নয়। হতে পারে না। কেন, তা একটু বিশদভাবে বলা প্রয়োজন।
১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ওপারের লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর মতো সীমান্ত পেরিয়ে ওখানকার কবি ও কবিতার সংবাদও আগরতলা হয়ে, শিলচর হয়ে গুয়াহাটিতে পৌঁছে যাচ্ছে। বুঁদ হয়ে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজলে শাহাবুদ্দিন পড়ছি। পাশাপাশি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বরের শহিদ কাদরীও— যাঁর দ্রোহ, বেপরোয়া গদ্যভঙ্গি আর নাগরিকতার কশাঘাত আমরা আরও বেশি পড়তে চাইছি, কিন্তু বই কোথায়? তখনও তাঁর প্রকাশিত সঙ্কলন মাত্র একটি— ‘উত্তরাধিকার’ (১৯৬৭), এটিও দুষ্প্রাপ্য। ৭১ সালে, মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুর খোঁজে কলকাতায় এসে হাজির। তখনই সঙ্কলিত ‘বাংলাদেশের কবিতা’ হাতে এল, সম্ভবত কফিহাউসে, ওখানেই শহিদ কাদরীর দীর্ঘ একটি কবিতা পড়ে স্তম্ভিত— বন্ধুরা কোথায়, সবাই ব্যস্ত, নিজেদের কর্মস্থলে, কাগজের অফিসে কিংবা অন্যত্র— শহিদ আড্ডার খোঁজে ঘুরছেন, আত্মকেন্দ্রিকতা, শহরের ব্যস্ততা তাঁকে নিঃসঙ্গ করে তুলছে, নিঃসঙ্গতার ভেতরেও একসময় সংযত স্বরে বেজে উঠল তাঁর নাগরিক চাবুক—। ওই যে শহিদ–পাঠের শুরু আর অদেখা কবির সঙ্গে পরিচয়ের সূচনা— চার দশকের বেশি সময় জুড়ে আমাদের কবিতা পড়ার অভ্যাসে, আত্মজিজ্ঞাসার মুহূর্তে তিনি প্রায় নৈমিত্তিক হয়ে উঠবেন। তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা: কোথাও কোনও ক্রন্দন নেই, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও— এই তিন সঙ্কলনেও তাঁকে আমরা ঘুরে–ফিরে খুঁজব, এ খোঁজার শেষ নেই হয়ত। খুঁজতে খুঁজতে বোঝার চেষ্টা করব তাঁর কবিসত্তাকে এবং এর নির্মাণে তাঁর মেজাজি আড্ডা, বন্ধুপ্রীতি, দেশপ্রেম এবং আন্তর্জাতিকতার নিরলস ভূমিকা।
বেলাল চৌধুরি ঢাকার কাগজে তাঁর প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন— ‘আমাদের ঢাকা, কলকাতার রাত পরিক্রমার দিনগুলিতে সে সবার আগে এগিয়ে যেত। আমরা রাতভর হাঁটতাম, শহরের এ মাথা থেকে ও মাথায়। শহিদ ছিল সবচেয়ে বেশি আড্ডাতুর।’ শুধু কি আড্ডা আর পথ–হাঁটায় বন্ধুদের আগে থাকতেন শহিদ কাদরী? না, কবিতার স্বতন্ত্র নির্মাণেও তাঁর সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা— আধুনিকতার দুঃসাহসী, সচেতন অশ্বারোহী।
দেড় দশক আগে, অশোকদা (আজকাল–এর সম্পাদক) বলেছিলেন, শহিদ কাদরী সম্ভবত সমসময়িক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শক্তিমান, আধুনিক কবি। একটু খটকা লেগেছিল। কারণ, আমরা অনেকেই শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, রফিক আজাদেরও অনুরাগী। আবার সবাইকে একসঙ্গে পড়ে মনে হল, অশোক দাশগুপ্ত খুব একটা ভুল বলেননি। দিন বদলাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে কবিতার শরীর আর আত্মা, (ফর্ম অ্যান্ড কনটেন্ট) তবু শহিদের প্রতি আমাদের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। কেন? সংযত আবেগ, প্রবল দ্রোহেও দায়বদ্ধ সুন্দর তাঁর সহগামী। ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টির ভাষণে, রাজনীতির ঘোর সঙ্কটেও হতাশা তাঁর কাছে পরাজিত— ভয় নেই/আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/মার্চ পাস্ট করে চলে যাবে/এবং স্যালুট করবে/কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।
প্রশ্ন উঠবে, এমন একজন কবি, ত্রাণকর্তার মতো সঘন আর বেপরোয়া যার স্বরধ্বনি— তিনি কেন, কোন অভিমানে ৭৮ সালে দেশান্তরী হয়ে গেলেন, ভবঘুরের মতো ঘুরতে থাকলেন লন্ডন আর জার্মানিতে, পরে আমেরিকায় থিতু হয়েও দীর্ঘদিন কবিতা থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিলেন? এ কি প্রতিভার আত্মঘাতী সংবরণ? না সংবরণের আড়ালে ভিন্নতর প্রস্তুতিপর্ব?
শহিদ কাদরীর বন্ধু আর অনুরাগীরা বিদেশে তাঁর স্বেচ্ছা নির্বাসনকে মেনে নিতে পারেননি। পলায়নবাদী, আত্মকেন্দ্রিক বলেছেন কেউ কেউ তাঁকে। সত্যি কি বাংলাদেশ থেকে, বাংলা ভাষা থেকে, কবিতা থেকে, জাতির সুখ–দুঃখ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মনে হয় না। অসুস্থতা আর ব্যক্তিগত সঙ্কট ঘেরাও করছিল, স্বজনহীন নিঃসঙ্গতায় হাঁপিয়ে উঠছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি। নিভৃত কবিতাচর্চা তাঁর প্রধান, প্রধানতম আশ্রয় হয়ে উঠল। ফর্ম ভাঙছেন, বিষয় বদলাচ্ছে, দেশাত্মবোধের আত্মসংবরিত আর্তনাদ স্বপ্নের সঙ্গে, মর্মের সঙ্গে ‘চেঙ্গিস খানের তরবারির মতো’ ঝলসে উঠছে, ব্যক্তিকতা ও সময়ের ঝড়জল আবার তাঁর কাছে হার মানছে। বহুপ্রজ নন, বরাবর কম লিখতে অভ্যস্ত, পরবাসের নিঃসঙ্গতায়ও এ অভ্যাস বজায় রইল, বজায় রইল শাণিত ভাষা, শ্লেষ আর পরাজয়হীন আশাবাদ। তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ, ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই’— প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। চতুর্থ কবিতা সঙ্কলন, ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’— বের হল তিন দশকের পর, যা বিদেশবাসের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, ‘কাঁসার থালাবাটির মতো ঝকঝকে, হীরকখণ্ডের মতো’ উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত। পলায়নপর, পরাজিত, আত্মকেন্দ্রিক বলে যে–সব অভিযোগ উঠল— শহিদ তাঁর জবাব দিলেন কবিতায়, বুঝিয়ে দিলেন তিনি পালাননি, পালাতে পারেন না, তাঁর দুঃসাহসী কবজি, তাঁর উচ্চারণের পরিচিত দ্যুতি এখনও অক্ষত— ঐ সে তোমরা যাকে বলো শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্য/ওখানেই আমাকে পাবে (ওটাই আমার শেষ আশ্রয়)/না, হাতে সময় নেই/পালাতে হচ্ছে এখুনি/দ্যাখো দ্যাখো/পাহাড়ের সানুদেশ বেয়ে উঠে আসছে তলোয়ার/’— কী অদ্ভুত সমাপন আর সমাপতন। মৃত্যুর পর কাঙ্খিত, শেষ আশ্রয়ে ফিরে এলেন সংযত বিদ্রোহ আর প্রেমের কবি। দেশ তাঁকে ফিরিয়ে আনল, পূর্ণ করল তাঁর অন্তিম ইচ্ছা।
স্বেচ্ছা নির্বাসন আর প্রায় ৩৮ বছর জুড়ে শহিদ কাদরীর বাধ্যতামূলক পরবাসের কারণ কী? আত্মকেন্দ্রিকতা না স্বাভিমানের দ্রোহ বা দ্রোহজ অভিমানের অভিব্যক্তি? উত্তর খুঁজতে হলে তাঁর শৈশব, তাঁর প্রাণচাঞ্চল্য, তাঁর ভবঘুরে দিনযাপন আর বাংলাদেশকে ঘিরে তাঁর প্রত্যাশার দ্বারস্থ হতে হবে। জানতে হবে কোন পরিস্থিতিতে ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত ঠিকানায় পাড়ি দিতে বাধ্য হলেন? বাংলাদেশে তখন ছদ্মবেশী সামরিক শাসন। নির্বাসনে দিন কাটছে শেখ হাসিনার। নিহত বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্ন, এমনকী ছবিটিও দেশ থেকে উপড়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। রাষ্ট্র বহুত্বের প্রতিশ্রুতি বিসর্জন দিয়ে সর্বগ্রাসী অন্ধতার কাছে মাথা নোয়াচ্ছে। রাষ্ট্রের এ সব পরাজয়কে, জাতির স্বপ্নহত্যাকে মেনে নিচ্ছে সমাজের একাংশ— ‘অদ্ভুত উঠের পিঠে চলেছে স্বদেশ’। পরিবেশ অনুকূল, অস্থির, শ্বাপদসঙ্কুল। আর্থিক অবস্থা ভারসাম্যহীন, পুরোপুরি বিদেশি সাহায্যনির্ভর। ধুলিঝড়ে ম্রিয়মাণ অধিকাংশ বুদ্ধিদীপ্ত। গুটিকয়েক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমকে বাদ দিলে আপসকামিতা কিংবা নীরব অবস্থানকে বরণ করছে মধ্যবিত্তের ব্যঙ্গময় প্রতিনিধিত্ব। সম্মিলিত আলোড়ন নেই, প্রতিরোধ নেই। অদ্ভুত আঁধার এক, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা— হৃদয়হীন, প্রেমহীন, স্থবিরতাকে ঝাঁকুনি দেওয়া দরকার, অতএব নীরব ক্ষোভে অভিমানে স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিলেন শহিদ কাদরী। এটাই তাঁর দ্রোহ আর প্রতিবাদের ভাষা— যা ক্রমশ ব্যাপ্ত, সঞ্চারিত হতে থাকল কবিতায়, শব্দের তীক্ষ্ণতায়— শাণিত, তীর্যক আর সংযত আর্তনাদে। নিছক বিরহ নয়, নিঃসঙ্গতার বিচ্ছুরণ নয়, অন্য ধরনের হীরকদ্যুতি— যা পরবাসী চুম্বন হয়ে, দেশপ্রেম হয়ে, শ্লেষ হয়ে ঝলসে উঠল শহিদ কাদরীর কবিসত্তায়। প্রেমিক, জাগ্রত দায়বদ্ধ এ কবি মৃত্যুর স্তব্ধতাকে উপেক্ষা করে জেগে উঠল বাংলাদেশ, জাগছে তার ঘোষিত অঙ্গীকার।
আমাদেরও এ অঙ্গীকারের সরব সঙ্গী হওয়া জরুরি। কিন্তু তাঁর চিহ্ন কোথায়? বাংলার পশ্চিমি সমতট, তারই সন্তানের মৃত্যুতে, মৃত্যুর উদযাপনে কেন এত নীরব? জন্ম যেমন কলকাতায়, শহিদ কাদরীর প্রথম প্রকাশও এই শহরে, বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা পত্রিকায়’, তখন বয়স মাত্র ১৪। আর সেদিনই ঢাকায় মৃত্যু হয় তাঁর মায়ের। প্রকাশের ওই সুখ আর মাতৃশোক শহিদ কখনও ভুলতে পারেননি। ভোলেননি কলকাতাকে। তাঁর পূর্বপুরুষের ছায়া, এ শহরের কবরে শায়িত বাবার মুখ তাঁর বুকে শুয়ে থাকত, তাঁকে সঙ্গ দিত বাংলার অবিভাজ্য, অখণ্ড প্রবাহ। এ কথা আর এ সব তথ্যচারণের প্রয়োজন নেই বুঝি।