একের পর এক নির্যাতনে শিশুহত্যার তালিকা যখন দীর্ঘ হচ্ছে তখন অনন্য এক নজির রেখে গেলেন মো. সুমন। নিজের জীবন দিয়ে অটুট রাখলেন একটি নিষ্পাপ মুখের হাসি। গত ৪ আগস্ট বনানীর সৈনিক ক্লাব এলাকায় একটি পথশিশুকে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। সুমনেরও দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়েটির বয়স বড়জোর ১০ বছর। মেঝো ছেলের বয়স ছয় কিংবা সাত হবে। ছোট মেয়েটির দু মাস।
একটি তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানে মালামাল গাড়িতে ওঠানো-নামানোর কাজ করতেন সুমন। স্বল্প আয়ের এই মানুষটি বেঁচে থাকতেও পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। এখন একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র এবং সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে বাবা-হারা সন্তানরা হয়ত খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারবে।
দেশের বিভিন্নস্থানে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বেসরকারি একটি সংস্থার হিসাব বলছে, গত সাড়ে তিন বছরে ৯৬৮টি শিশুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরিসংখ্যানটা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো হলেও এ নিয়ে আমরা যে খুব বেশি আতঙ্কিত তা নয়। কারণ, আমাদের আশপাশেই ঘটছে এসব ঘটনা। আমরা দেখছি। নীরব সাক্ষী হয়ে থাকছি মাত্র। প্রতিবাদ করছি না। তা না হলে সিলেটে রাজন, রাজধানীর খিলক্ষেতে নাজিম উদ্দিন, খুলনায় রাকিব আর বরগুনায় রবিউলের ওপর যখন পাশবিক নির্যাতন চলছিল তখন কি কোনো হৃদয়বান মানুষ সেখানে ছিলেন না?
সিলেটে রাজনকে যখন লোহার রোলার দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হচ্ছিল, তখন কাছেই থাকা কয়েকজন অট্টহাসিতে উল্লাস প্রকাশ করছিল। ভিডিওচিত্রের কল্যাণে সবই এখন দৃশ্যমান। খুলনায় রাকিবের পায়ুপথে নির্মম কায়দায় যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস ভরে দেওয়ার সময় একজন নারীও নাকি উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তার ভেতরের মাতৃত্বটা কি একবারও জেগে ওঠেনি? তিনি তো ওই ঘটনার কোনো প্রতিবাদ করলেন না। তাহলে কি আমাদের মননে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন এসেছে? মানবতাবোধ পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে আমাদের ভেতর থেকে?
একটিবার ভেবে দেখুন তো এই ৯৬৮টি শিশুর মধ্যে একটি সন্তান তো আপনার হতে পারত। নির্যাতনের শিকার নিষ্পাপ মুখগুলো কি আমাদের সন্তানের মুখের চেয়ে খুব বেশি আলাদা? শিশু নির্যাতন ও হত্যার কঠোর শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি সমাজের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সৎ সাহস জাগ্রত হবে এমন প্রত্যাশা রইল।