সম্প্রতি বন্যায় ভেসেছে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশ কিছু জেলা। ধ্বংস হয়েছে বহু ঘরবাড়ি, ফসল। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বন্যাদুর্গত মানুষকে। এখন বন্যাকবলিত এলাকায় পানি কমছে বটে, কিন্তু দেখা দিচ্ছে আরেক দুর্যোগ। ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখ ও শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বানভাসিরা। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই মুহূর্তে দুর্গত এলাকাগুলোতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন তৎপরতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা জরুরি।
ইতিমধ্যে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। তবে এসব উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে দরকার সমন্বয় ও মনিটরিং। বন্যাদুর্গত অঞ্চলের চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা যেন নিশ্চিত করা হয়, বন্যার্তদের মাঝে দ্রুততার সঙ্গে যেন প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে জোরদার করতে হবে জনসচেতনতা কার্যক্রম।
দুই.
পিস টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি একই ভাবধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিস স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ উসকে দেয়ার অভিযোগ আছে নানা মহলে। স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা পুষ্ট, তাদের ভাবধারার সংক্রামক, জঙ্গি তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী কোনো প্রতিষ্ঠান এ দেশে চালু থাকা উচিত নয়। পিস স্কুল ছাড়াও অন্য নামে দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সচল আছে কি না সে ব্যাপারে জোরালো তদন্ত দরকার।
শিশুদের মানসিক বিকাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শৈশব থেকে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, ইতিহাস-ঐতিহ্যচেতনা, মানবিকতাবোধ বপন এবং নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের সংযোগ ঘটানো গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেপথু হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।
কিন্তু একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিকড়-সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে জঙ্গি বানানোর কাজে লিপ্ত। এদের তৎপরতা রুখতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। দেশে অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু আছে কি না, কিংবা অনুমোদনহীন কোনো পাঠ্যক্রম কোথাও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের দায়সারা উদ্যোগ কিংবা ঔদাসীন্য ভবিষ্যতে দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
তিন.
আগস্ট মাস বাঙালি ও আওয়ামী লীগের এক রক্তক্ষরণের দিনলিপি। ১৫ আগস্ট খুনিচক্রের বুলেটে সপরিবারে প্রাণ হারান বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই নৃশংস হত্যাকা-ের বিচারে অনেক খুনির সাজা কার্যকর হলেও এখনো পলাতক রয়েছে বেশ কজন। তাদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার দাবি দেশবাসীর। কিন্তু তাতে খুব একটা অগ্রগতি আছে বলে জানা যায় না।
এই আগস্টেরই ২১ তারিখ বাংলাদেশের ইতিহাসে আর একটি কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। তাতে আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। ন্যক্কারজনক ওই হামলার ১২ বছর পূর্ণ হতে চললেও বিচার কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। দ্রুতই এই মামলার বিচারকাজ শেষ করা উচিত, নইলে জঙ্গিবাদই কেবল উৎসাহিত হবে।