রাজধানীর গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা দিনদিন বাড়ছে। সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির তথৈবচ অবস্থা এজন্য দায়ী। কারণ, রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থা যদি যাত্রীসেবা বাড়ানোর পাশাপাশি মান নিশ্চিত করতে পারত তবে বেসরকারি পরিবহন খাত এতটা বেপরোয়া হতো না। বিআরটিসির তথ্য বলছে, হঠাৎ করেই সংস্থাটি দুরবস্থায় পড়েনি, দিনের পর দিন হরিলুটের কারণে এ রকম অবস্থা হয়েছে। ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে বেশ ধকল পোহাতে হয়েছে। আয় ও ব্যয়ে স্বচ্ছতা না থাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ যে কীভাবে বেহাত হয়েছে তা জানারও উপায় নেই।
অতীতের ক্ষত সারিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বিআরটিসি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আসলে কতটুকু আলোর মুখ দেখবে এই উদ্যোগ? বিআরটিসি পারবে তো ঘুরে দাঁড়াতে? বিকল হয়ে বিআরটিসির অনেক পরিবহন ডিপোতে পড়ে আছে। ভারী মেরামতের অপেক্ষায় আছে কয়েকশ পরিবহন। অথচ ঢাকার পথে গণপরিবহনের সংকট রয়েছে। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হলে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট কাটিয়ে ওঠা অনেকাংশে সম্ভব হবে।
বেসরকারি গণপরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে নাগরিকমহলে বেশ তোলপাড় চলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশি অভিযানে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি। বরং কৃত্রিম পরিবহন সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে। পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে নাগরিকদের জিম্মি করে কী ফায়দা হাসিল করতে চায়?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সামর্থ্য বাড়ছে। প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উঠে আসছে। সচ্ছল বা উচ্চবিত্তের সংখ্যাও সমানভাবে বাড়ছে। ফলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় বাজার।
দেশের অর্থনীতির চলমান অগ্রগতি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে। এটি আরও গতিশীল হতো যদি দেশে বড় আকারের দেশি কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ত। বিনিয়োগ বাড়লে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, বেকার সমস্যা কমে আসবে। পাশাপাশি মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার যে স্বপ্ন আমাদের সামনে রয়েছে সেটি অর্জন করা আরও সহজ হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার বিকল্প নেই। কারণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনোভাবে চলমান অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। বিসিজির গবেষণালব্ধ তথ্যকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে এই তথ্য তুলে ধরতে হবে, যেন ভবিষ্যতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।