বাংলাদেশে উগ্রবাদী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার বিচার শুরু হয়েছে। মামলা দায়েরের ছয় বছর পর মোট ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে।
বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা সকালে এই অভিযোগ গঠন করে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
তিন বছর আগেই এই মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিল। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় বিচার শুরু করতে দেরি হচ্ছিল। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদ প্রকাশের পর অনুমোদন দেয়া হয়। আরও পড়ুন: হিযবুত তাহরীরের ‘ভাগ্যবান’ এক নেতার কাহিনি
যাদের হাত ধরে বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের যাত্রা শুরু তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউট- আইবিএর শিক্ষক মহিউদ্দীন আহমেদ। সংগঠনটি নিষিদ্ধ করার পর তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছয় বছর আগে মামলা এবং তিন বছর আগে অভিযোগপত্র জমা
মহিউদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে উত্তরা মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২০১০ সালে মামলা করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়, তার নির্দেশেই সেই সময় বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। তিনি ধর্মভীরু মুসলমানদের ভুল পথে পরিচালিত করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
ওই বছরের ২০ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর হাইকোর্ট থেকে ২০১১ সালের ৩ মে জামিন পান তিনি। পরের বছর কারাগার থেকে মুক্ত হন।
২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ছয় জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলাটি বিচারের জন্য ওই বছরের ২১ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। তখনই আদালত থেকে মামলার অনুমোদনের প্রথম দফা চিঠি পাঠানো হলেও অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র আদালতে আসেনি। সবশেষ গত ২৮ মার্চ তৃতীয় দফা চিঠি পাঠানো হয়।
সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতাতেও নাম আসছে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের
২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশে উগ্রবাদী তৎপরতা পরিচালনার অভিযোগে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করে। তবে নিষিদ্ধ থাকা অবস্থাতেও সংগঠনটি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। আর সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতাতেও হিযবুতের নাম এসেছে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা করে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনায় যারা জড়িত ছিল তাদের এক বা একাধিক জনই হিযবুত তাহরীরের হাত ধরে উগ্রবাদে জড়ান বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে দেখা গেছে। কেবল এরা নন, উচ্চবিত্ত শ্রেণির যত তরুণ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছে তাদের বেশিরভাগই হিযবুতের হাত ধরেই এই পথে গেছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এরপরই বাংলাদেশে হিযবুত সমন্বয়নের বিরুদ্ধে ছয় বছর আগের করা মামলাটির বিচার নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়।
সব দায় অস্বীকার মহিউদ্দীনের
ঢাকাটাইমসকে সম্প্রতি দেয়া সাক্ষাৎকারে মহিউদ্দীন বলেছেন, তার সঙ্গে হিযবুত তাহরীরের কোনো সম্পর্ক সেই। তিনি কখনই হিযবুতের প্রধান ছিলেন না। এই ধরনের লিখিত প্রমাণ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও দিয়েছেন বলে দাবি করেন মহিউদ্দীন।
কিন্তু বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড চলার সময় বিভিন্ন সভা-সেমিনারে হিজবুতের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন মহিউদ্দীন। বিভিন্ন সেমিনারের সভাপতিও ছিলেন তিনি। এখন কেন সম্পর্ক অস্বীকার করছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই চ্যাপ্টার বাদ দেন। এখন তো কোনো সম্পর্ক নেই। এটাই মূল কথা। তখন নিষিদ্ধ ছিল না। এখন নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধের পর থেকে কোনো ধরনের সম্পর্ক ওই সংগঠনের সঙ্গে নেই।’
বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আবাসিক ভবনেই থাকছেন মহিউদ্দিন আহমেদ। অনেকটা বিচ্ছিন্ন জীবনে নিজেকে আটকে রেখেছেন। তিন সন্তানের স্কুলে যাওয়া আসা ছাড়া বাইরে বের হন না বললেই চলে। আবাসিক ভবনে অন্য শিক্ষক-পরিবারের সঙ্গে তার নেই দেখাশোনা।