ঢাকার ‘ছায়া মেয়রে’র বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামলা
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২০:২১:০১
ঢাকার ‘ছায়া মেয়রে’র বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থাকায় মামলা হয়েছে।
ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী হিন্দিতে লেখা তার ফেইসবুক আইডি থেকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ‘শেখ হাসিনাকে হত্যা ছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতার ভারসাম্য ও গণতন্ত্র ফেরানো সম্ভব নয়’ বলে একটি স্ট্যাটাস দেন। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র ফেইসবুকে পোস্ট করেন।
নিজের ফেইসবুক পেজে ইরাদ নিজেকে ঢাকায় ছায়া মেয়র বলে পরিচিতি দেন। এই পেজে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নানা ব্যাঙ্গাত্মক ও অশালীন পোস্ট দিচ্ছেন।
গণমাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বুধবার ইরাদের নিজ এলাকা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মামলা করেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। পরদিন সকালে রাজধানীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন ক্ষমতাসীন দলের আরেক নেতা। এরপর সারা দিন দেশের আরও বিভিন্ন এলাকায় ইরাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ইরাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন জেলা নারী ও শিশু আদালতের স্পেশাল পিপি মো. শাহজাহান। আদালতে বিচারক শহিদুল ইসলাম শুনানি শেষে মামলার আর্জি আমলে নিয়ে জয়পুর থানাকে মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আজমত উল্লা খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। এরই অংশ হিসেবে আসামি ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।’
আমাদের সিলেট ব্যুরো প্রধান জানান, সিলেটের কোতয়ালী থানায় ইরাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহমদ জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন বরিশালের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে ইরাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বিচারক আলী হোসাইন অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি এজাহার হিসেবে নিতে মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সদর থানায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেল মামলাটি করেন। এতে বলা হয়, ‘সামাজিক যোগাযোগ ফেইসবুকের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অপমানজনক ছবি ও অসত্য তথ্য ও অশোভনীয় লেখা পোস্ট করে জনমনে মারাত্মক আঘাত ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’
মামলায় বলা হয়, ‘ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন যাবৎ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে অশোভন লেখা ফেইসবুকে পোস্ট করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং সরকার উচ্ছেদের পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছেন।’
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এই জেলার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার পর মুখ্য বিচারিক হাকিম অম্লান কুমার জিষ্ণু অভিযোগটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে গণ্য করতে কুড়িগ্রাম সদর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী আইনজীবী খোরশের আলম। তিনি বলেন, ‘আসামি বঙ্গবন্ধুর ছবির উপরে পা রেখে অসম্মান করেছে এবং বাংলাদেশের পতাকার উপর ভারতীয় পতাকা স্থাপন করে সার্বভৌমবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে সংঘাত তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাষ্ট্রকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করেছেন।’
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ইরাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ইরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের। শুনানি শেষে বিচারক আব্দুল্লাহ আল মাসুম অভিযোগটি মামলা হিসেবে নিতে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁও থানায় দুপুরে ইরাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন আইনজীবী ইন্দ্রনাথ রায়। ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ছাড়া বগুড়ার শেরপুর থানায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ ইরাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
কে এই ইরাদ আহমেদ
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী। তবে খালেদা জিয়াকে নিয়ে ইরাদের তোলা গুররুতর অভিযোগের পর ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় তানভীরকে। এরপর থেকে দুইজন কার্যত রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।
২০০৯ সালে একবার ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হলে ইরাদ বিএনপির সমর্থনে ভোটে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। ওই বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে ইরাদ নিজেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও দেন। এ সময় তিনি জানান, মেয়র পদে সমর্থনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার কাছে পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছিলেন।