বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যুর পর চার দিনের শোক ঘোষণা করেছে দলটি। এর মধ্যেই দলের মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কর্মী-সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা করছেন কর্মী-সমর্থকরাও।
হান্নান শাহের মৃত্যুর খবর আসার পর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রয়াত নেতার বাসায় ছুটে যান দলের শীর্ষ নেতারাও। বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। নয়াপল্টনে খোলা হয় শোক বই।
নেতার মৃত্যুতে বিদেশি ডেলিগেডদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন স্বয়ং বিএনপি চেয়ারপারসন। এরই মধ্যে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে বিএনপির দপ্তর থেকে প্রকাশিত মহিলা দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার খবর।
শোকের মধ্যে এমন খবরে নড়েচড়ে বসে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভিন্নভাবে তারা ক্ষোভপ্রকাশ করতে শুরু করেন। অনেকে বিএনপির দপ্তরের কড়া সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু ততক্ষণে গণমাধ্যমে নতুন কমিটির খবর ফলাও করে প্রকাশ হয়।
বিএনপির দপ্তরের নেতারা বলছেন, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ পালন ছাড়া তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কমিটির মেইল গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
মহিলা দলের নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সুলতানা আহমেদ। তাই কমিটি হওয়ার শোকের মধ্যেই নেতাকর্মীদের কেউ কেউ ফুল নিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান। এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলে আসায় নড়েচড়ে বসে নতুন কমিটি।
পরে রাতে মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি কমিটি ঘোষণার জন্য চেয়ারপারসন,সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান,মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে বলা হয়,বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহর মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। দলের পক্ষ থেকে চারদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। মহিলা দল এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। এই অবস্থায় মহিলা দলের কমিটি কোনো ধরনের অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হান্নান শাহর মৃত্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো শোক ও শোক দিবসের কর্মসূচির মেইলে দেখা যায় তা পাঠানো হয়েছে বুধবার বেলা ১.৪৮ মিনিটে। এবং মহিলা দলের কমিটির খবর মেইল করা হয় ২.৩৭ মিনিটে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে মহিলা দলের নতুন কমিটি অনুমোদন দেন বেগম খালেদা জিয়া। নিয়ম অনুযায়ী পরদিন মহাসচিবের নির্দেশে দপ্তর থেকে গণমাধ্যমেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ খবর জানানো হয়।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের যুক্তি যখন কমিটি অনুমোদন দিয়ে প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয় তখন হান্নান শাহর মৃত্যুর খবর হয়নি। পরে তার মৃত্যুর খবর আসলেও কমিটির খবর প্রকাশ না করার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যে কারণে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সবগুলো মেইলে সই ছিল বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমার নিদের্শনার বাইরে কিছুই করার ক্ষমতা নেই। যেভাবে বলা হয়েছে সেইভাবেই মেইল পাঠানো হয়েছে। যারা সমালোচনা করছেন তাদেরও যুক্তি আছে।’
ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া
মহিলা দলের কমিটি ঘোষণার পর ফেসবুকে বিএনপিমনা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অর্পন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা বিথিকা বিনতে হোসাইন লিখেছেন, ‘শোক পালন না,অভিনন্দন? তার এই স্টাটাসের নিচে মেহেদী হাসান নামে একজন মন্তব্য করেছেন,‘বাহ বিএনপি বাহ। বিএনপি পারেও! যুগ যুগ কমিটি ঘোষণা করতে পারেন না, নেতা-কর্মীরা কমিটি করে চিল্লাফাল্লা করে,কমিটি দেন না। কিন্তু সারাদেশের নেতা-কর্মীরা যখন দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারি হান্নান শাহের মৃত্যুতে যখন কাঁদছে-
সে সময়ে মহিলা দলের কমিটি দিয়ে মিষ্টি খাওয়ার -আনন্দ ফুর্তির ব্যবস্থা করে দেয়ার মানে বুঝতে পারলাম না? হে আল্লাহ আমার প্রাণ প্রিয় দল বিএনপিকে একটু হেদায়েত দান করো যাতে দলটা ভালো হয় ;)।’
হায়রে বিএনপি !!!’
কামরুল হাসান নামে একজন লিখেছেন, ‘একদিকে চলছে শোক, অন্যদিকে ফুলেল শুভেচ্ছা । বোধজ্ঞান না থাকলে যা হয় । আর কি....।’
শোক দিবস শেষ হলে কমিটি ঘোষণা করলে কি ক্ষতি হত সেই প্রশ্নও করেছেন কেউ কেউ।
একই দিনে শোক দিবস অন্যদিকে কমিটি ঘোষণায় ক্ষুব্ধ বিএনপির শীর্ষ নেতারাও।স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বুধবার রাতে এ নিয়ে দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একজন ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন।
বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগের দিন অনুমোদন হলেও সকালে হান্নান শাহর মৃত্যুর খবরের পর এটা ঘোষণা করাকে কোনো যুক্তি দিয়ে বুঝানো যাবে না। দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবশ্যই এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে। না হলে সামনে আরো এমন ঘটনা ঘটবে।’