ভোজনরসিক বাঙালিদের মাঝে দিন দিন স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত কয়েক বছর আগেও দেখা যেতো ঈদ বা কোনো পার্বণ উপলক্ষে ভোজনবিলাসী বাঙালিদের ঘরে ঘরে খাবারের প্রতিযোগিতা চলত। যিনি যত বেশি খেতে পারেন, তিনি তত ছিলেন লোকচক্ষুর সামনে। এমন লোকও নেহায়েত কম ছিলেন না- যারা আস্ত খাসি এক ডেক ভাত খেয়েছেন। গ্রামে-গ্রামে চলতো খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা। কে কত বেশি খেতে পারেন। এখন এমন মানুষের খুব কমই দেখা মেলে। আবার অতি ভোজনে সেসময় বহু মানুষের দেখা দিত নানাবিধ পেটের পীড়া। ঈদের খাবারের লোভ না সামলানো লোকদের ভিড় দেখা যেতো ওষুধের দোকানগুলোতে। এখনও ঈদে খাবার খেয়ে পরবর্তীতে কম-বেশি অনেকেই আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
ডাক্তার জোৎস্না খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঈদের দিন অতিরিক্ত খাদ্য না খেয়ে যত কম খাওয়া যায়- ততই ভালো। ঈদের দিনে গুরুপাক ভোজনের ফলে পাকস্থলির উপর হঠাৎ চাপ পড়ে। ফলে পেটে ব্যথা, বদহজম, গ্যাস, ডায়রিয়া, পেটফাঁপা, মাথাধরা, বমি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। তাই ঈদে খাবারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
ঈদের দিন সকালে অল্প করে সেমাই বা পায়েস খাওয়া যেতে পারে। কিশমিশ, বাদাম, বিভিন্ন ফল যেমন পেঁপে, আম, বেলের শরবত খেতে পারেন। পাশাপাশি প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খান। এই সময়টা ফলের মৌসুম হওয়ায় দেশীয় ফলমূলও খাওয়া যেতে পারে।
তবে যে খাবারই হোক না কেন, তা একেবারে বেশি না খেয়ে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে থাকুন। ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার পেটে গ্যাস তৈরি করে। এতে বদহজম ও বুকে জ্বালাপোড়া বাড়ায়, ওজন বৃদ্ধি করে। এগুলো এড়িয়ে চলুন। দুগ্ধজাত খাদ্য অনেকের পেট ফেঁপে যাওয়ার জন্য দায়ী। এমন সমস্যা থাকলে সাবধানতা অবলম্বন করুন। হঠাৎ করে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার যেমন পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, রেজালা ইত্যাদি খেলে এসিডিটি ও ডায়রিয়া হতে পারে। খেলেও পরিমাণে অল্প খাওয়া ভালো। খাবারের সঙ্গে টক দইয়ের সালাদ (টমেটো, শসা ইত্যাদি), বোরহানি, সবজি ইত্যাদি হজমের সহায়ক। খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে দই খাওয়া ভালো।
এ সময়ে পেটের পীড়া সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। অনেক সময় পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার সঙ্গে বমিও হয়। এছাড়া সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি হতে পারে। যাদের আইবিএস আছে, তারা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
তিনি বলেন, বেশি তেলে ভাজা কিংবা বাসি-পচা খাবার একেবারে এড়িয়ে যেতে হবে। অনেকে বেড়াতে গিয়ে পার্কে, হোটেলে বা যত্রতত্র খোলামেলা পরিবেশে ফুচকা, চটপটি বা বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে থাকেন। এসব না খাওয়াই উচিৎ। আর খেলেও যেন ওভার ডায়েট না হয়। রাতের খাবার পর একটু হাঁটাহাঁটি করা ভালো। সকালে উঠে খোলামেলা পরিবেশে শ্বাস নিন। মনে রাখবেন, ওজন কমানোর চেয়ে বাড়ানো সহজ। ঈদের সময় খাবার-দাবারে একটু সচেতন হলে ওজন বাড়ে না এবং সুস্থও থাকা যায়।
যাদের আগে থেকে অসুখ আছে যেমন কিডনি, হার্ট, লিভারে, বাতের রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ- তাদের ঈদের খাবারে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিৎ। আগে তাদের খাবারের যে রুটিন ছিল, তা মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য।
কিডনি রোগীদের মাংস বা প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিৎ। পাশাপাশি তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। সেমাই, জর্দা, পায়েস ইত্যাদি না খেয়ে চটপটি, সালাদ, লাচ্ছি ইত্যাদি খাওয়া ভালো।
তিনি আরো বলেন, ঈদে মাংস বেশি খাওয়া হয় বলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অ্যানাল ফিশার বা হিমোরয়েড (পাইলস) রোগীরা সবজি, আঁশযুক্ত খাবার, সালাদ, পানি বেশি খাবেন। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন ও হার্টে রোগ আছে তারা পরিমাণ মতো খাবেন। পোলাও, বিরিয়ানি, মগজ, কলিজা ইত্যাদি তাদের না খাওয়াই শ্রেয়। খাবারের সঙ্গে সালাদ, টক দই, লেবু ইত্যাদি খাবেন। দিনে ৩০/৪০ মিনিট হাঁটতে পারলে ভালো।
অতিরিক্ত খাবারের কারণে মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ব্যথা হওয়া শক্তি হ্রাস পাওয়া, ক্লান্তিভর করা, মন মেজাজ খিটখিট হওয়া, শরীর দুর্বল হওয়া, প্রসাবের রং হলুদভাব হওয়া আর এ ক্ষেত্রে বারবার পানি পান করা এবং স্যালাইনের পানি পান করা যায়। শসা, খিরা, ডাব, পান করা শ্রেয় বলে পরামর্শ দেন ডা. জোৎস্না।