‘আমি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি, তাহলে আমাকে বিদেশে নেবেন না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠাবেন না। আমি দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নেব। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেব।’ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ সম্পর্কে এভাবেই আস্থার কথা এখানকার চিকিৎসকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বছরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গাজীপুরের কাশিমপুরের সারাবো তেঁতুইবাড়ির এই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি।
‘সাধ্যের মধ্যে এখন দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা’ প্রতিপাদ্যের চিকিৎসালয়টি মালয়েশিয়ান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান কেপিজের (কামপুলান পেরুতান জহুর) সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ২১৫ কোটি টাকায় নির্মিত ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল ও কলেজ যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর। কেপিজে পরিচালিত এই হাসপাতালে বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ান চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে গেলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে এর নান্দনিক অবকাঠামো দেখে। চিকিৎসাসেবার জন্যও এখানে আছে দারুণ আয়োজন। আছে আধুনিক প্রযুক্তির সব চিকিৎসা সরঞ্জাম। সেবা দিতে সবসময়ই প্রস্তুত আছেন দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। দরকারে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শও নিতে পারবেন।
হাসপাতালের প্রশাসন জানিয়েছে, এখানে প্রসূতি স্ত্রীরোগ, শিশুরোগ, নাক-কান-গলা, অস্থি, হাড় ও মেডিসিন বিভাগ আছে। ৩০ শতাংশ রোগী, যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে আছে বিশেষ ব্যবস্থা। এছাড়া প্রতিবন্ধী আর নির্যাতিত নারীদের সেবায় অগ্রাধিকার দেয় এই হাসপাতাল। দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে পারেন এক-তৃতীয়াংশ খরচেই।
এই হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মালয়েশিয়ান নাগরিক জাইতুন বিনতে সুলাইমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে যেসব সেবা থাকে, তার সবকিছু আছে এখানে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা হাসপাতাল। এখানে আমরা দ্রুতই ওয়ানস্টপ সাভিস চালু করব।’
তিনি আরো বলেন, এখানে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই হাসপাতাল অবশ্যই একদিন বিশ্বের সেরা হাসপাতালে পরিণত হবে।
এক চিকিৎসালয়ে দেশের সব প্রখ্যাত চিকিৎসক
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা দেন। সপ্তাহে একদিন করে ২২ জন বিশেষজ্ঞ সুলভে চিকিৎসাসেবা দেন। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তারা থাকেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে আছেন-সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অর্থপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, জাতীয় অধ্যাপক ও গাইনি অবস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহেলা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দ্বীন মো. নুরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, সাবেক উপ-উপাচার্য ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম, হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সের পরিচালক ও নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ও অবস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা এবং ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, সিএমএইচের ইউরোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট মেজর জেনারেল ডা. হারুনুর রশীদ, কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান, অর্থপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আর. আর. কৈরী, বারডেম হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মীর নজরুল ইসলাম, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আলী হোসেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম রব্বানী এবং ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইয়াকুব আলী।
গাজীপুরে মালয়েশিয়ার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
মালয়েশিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও সেবা দিচ্ছেন গাজীপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে। প্রতি মাসে এক দিন করে চার জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন এখানে।
মালয়েশিয়ার কেপিজে জহর বিশেষায়িত হাসপাতালের রেডিওগ্রাফি ও অনকোলজি (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনউদ্দিন রহমান বিন মো. মেইদিন এখানে রোগী দেখেন। চিকিৎসাসেবা দেন মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ কেপিজে হেলথকেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক দাতো ডা. লোকমান সায়েম।
মাসে একবার রোগী দেখছেন কুচিং স্পেশালিস্ট হাসপাতালের অর্থপেডিক ও ট্রমাটোলজির বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াং চুং চেক, কুচিং স্পেশালিস্ট হাসপাতালের অ্যাডাল্ট রিকন্সট্রাকটিভ অর্থপেডিক ও স্পট সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. লি উ গুয়ান। খন্ডকালীন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আরো সেবা দিচ্ছেন মালয়েশিয়ার কেপিজে হেলথ কেয়ার বারহাদের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক।
চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও
এই হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু এবং সেবা কার্যক্রমের সূচনা দুটো দিনই হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের শুরুর দিকে চিকিৎসাসেবা নিতেও তিনি গিয়েছেন সেখানে। নিজেই টিকিট কিনে নাম নিবন্ধন করান। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় প্রথমে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রধানমন্ত্রীর নাক-কান-গলা পরীক্ষা করেন। চক্ষু পরীক্ষা করেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দ্বীন মো. নুরুল হক।
এই হাসপাতাল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষ্য, ‘জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চিন্তা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ।’ চিকিৎসকদের এখানে যুক্ত হওয়ার ডাক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অনেক ভালো ডাক্তার ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। আমরা তাদের এখানে যুক্ত করতে পারি। যদি কোনো ডাক্তার এখানে এসে চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহী হন, তারা প্রতিদিন এখানে আসতে পারেন। এভাবেই আমরা এ হাসপাতালকে আরও উন্নত করে তুলতে পারব।’