গর্ভধারণের ওপরে নিজস্ব জীবনযাপনের প্রভাব রয়েছে। মদ, সিগারেট, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, ব্যায়াম না করা ইত্যাদি বিষয় সন্তানধারণের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে।
জীবনের বিশেষ কিছু দিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মনে চাপ পড়ে। কাজের জগৎ ঠিকঠাক থাকলে কিংবা স্বামী/স্ত্রীর শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো সমস্যা না হলে, সাধারণত মানসিক চাপ হওয়ার কথা নয়। অন্য দিকে কাজ থেকে একেবারেই ছুটি না নিলে বা ঋণের চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকলে নিয়মিত কম ঘুমালে স্ট্রেস হরমনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সন্তান লাভে সচেষ্ট দম্পতিরাও প্রায়ই মানসিক ভাবে উদ্বিগ্ন হন। সন্দেহ নেই, মাসের পর মাস চেষ্টা করেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে দম্পতির বিশেষ করে স্ত্রীর মনে স্ট্রেস বা চাপ আসতে পারে। সেই স্ট্রেস পরবর্তী কালে ফার্টিলিটির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু কিছু স্ট্রেস থাকে। স্ট্রেসে সাড়া দেয়ার ক্ষমতা কিংবা স্ট্রেস হরমন উৎপাদন মাত্রা মানুষ ভেদে আলাদা। কোনো নারীর শরীরে অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমন নিঃসৃত হলে, তা যৌন বা সেক্স হরমনের ওপর প্রভাব ফেলে। কারো কারো মেনস্ট্রুয়েশন ও ওভ্যুলেশনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যা গর্ভসঞ্চারে অসুবিধা ঘটায়। এ ছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দম্পতিদের সামাজিক জীবন, যৌনজীবন ও সাধারণ শান্তির বিঘ্ন ঘটিয়ে স্ট্রেস পুরুষ বা নারী উভয়ের যৌনাকাঙ্ক্ষা কমায়। বলা বাহুল্য, এর ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়।
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস স্ট্রেস হরমন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ঋতুচক্র বা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের প্রথম দিকে গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমন তৈরি করে নারীদের রিপ্রোডাক্টিভ সাইকেলের সেক্স হরমন নিয়ন্ত্রণ করে। এই ঘটনায় পিটুইটারি গ্রন্থি ফলিকল স্টিমেলেটিং হরমন (এফ এস এইচ) নিঃসরণের সঙ্কেত পায়, যা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের একটি বিশেষ সময়ে পর্যায়ক্রমে ইস্ট্রোজেন, লুটিনাইজিং হরমন (এল এইচ) ও প্রোজেস্টেরন হরমন সৃষ্টিতে উদ্দীপকের কাজ করে। চূড়ান্ত স্ট্রেস চলাকালীন কিংবা কোনো নারী ক্রনিক মানসিক উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকলে প্রোজেস্টেরন হরমন নিজে স্ট্রেস হরমন কটিসলে পাল্টে যায়। কটিসল উৎপাদন সেক্স হরমন উৎপাদনের জৈব রাসায়নিক পথটিকে অনুসরণ করে। এর ফলে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমনের মাত্রা কমে যায়। একই সঙ্গে ভাললাগার অনুভূতি সৃষ্টিকারী বা ফিল গুড ডোপামিন হরমনের মাত্রা কমে গেলে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে প্রোল্যাকটিন হরমনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এরাও যৌন হরমনকে স্বাভাবিক মাত্রা রক্ষা না করতে দিয়ে নিঃসরণ কমাতে বাধ্য করে। সেক্স হরমন নিঃসরণ কমে যাওয়ার অর্থ ওভ্যুলিটারি এবং মেনস্ট্রুয়াল সমস্যার সৃষ্টি হওয়া।
দীর্ঘকালীন মানসিক চাপে থাকার কারণে বদহজম, পৌষ্টিক গুণ পোষণের ক্ষমতা কমে যায়, এমনকী ফুড অ্যালার্জি উপসর্গও দেখা দেয়।
মানসিক চাপ কমানোর পরিকল্পনা কয়েকটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। গর্ভসঞ্চারে উদ্যোগী হওয়ার সময়, বিশেষত ফার্টিলিটির সমস্যা থাকলে বা আই ভি এফ চিকিৎসা চলাকালীন মানসিক উৎকণ্ঠার বিষয়টিকে পরিষ্কার ভাবে বুঝে নেয়া উচিত।