ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহে একটি নামধারী ওষুধ ব্যবসায়ী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে গত ৯ বছরে ৩৫ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার ও ওষুধ কোম্পানি জড়িত বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদার হাসপাতালের টেন্ডার ও ওষুধ ক্রয় কমিটি এবং ওষুধ কোম্পানি জিসকা ফার্মা লিমিটেডের যোগসাজশে গড়ে তুলেছে একক আধিপত্য। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য পরিচালক নিয়মমাফিক ওষুধ ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করার পর চক্রটি কৌশলে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে একমাত্র ঠিকাদার হিসাবে ওষুধ সরবরাহ করে আসছে।
অভিযোগ উঠেছে জিসকা ফার্মা লিমিটেডের উৎপাদিত ওষুধের গুণগত মান নিয়েও। রোগীদের অভিযোগ, এই কোম্পানির ওষুধ সেবনের পর দীর্ঘ সময়েও তেমন কার্যকর নয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের মাধ্যমে হাসপাতালে ওষুধ কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়। আলেয়া কর্পোরেশন, বনানী ফার্মেসী ও রাজিয়া ফার্মেসীর নামে তিনটি দরপত্র জমা পড়ে যেগুলোর মূল মালিক একজন। মেঘনা নামের ওই ব্যক্তি তার প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক হিসাবে তার স্ত্রী ও শ্যালকের নাম দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নেন।
জানা যায়, শুধু চলতি অর্থবছরই নয়, গত ৯ বছর ধরে মেঘনা এককভাবে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদার হিসেবে।
ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, হাসপাতালের টেন্ডারে সাড়া দিয়ে গত ৯ বছর তারাও শিডিউল জমা দেন। দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ার পরও তাদের কাজ দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ওষুধ ক্রয় কমিটি তাদের কাগজপত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখিয়ে শিডিউল বাতিল করে দেয়।
তাদের অভিযোগ, ক্রয় কমিটি তাদের একমাত্র নির্বাচিত ঠিকাদার মেঘনার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন। এ কারণে ৯ বছর ধরে শুধু তাকেই ঠিকাদার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
আরও অভিযোগ করা হচ্ছে, বাংলাদেশে মানসম্মত অনেক কোম্পানি থাকলেও দীর্ঘ ৯ বছর ধরে শুধু জিসকা ফার্মা লিমিটেড নামের এক কোম্পানির ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কথিত আছে, এই কোম্পানির ওষুধের নাম রোগী তো দূরের কথা অনেক ডাক্তারই জানেন না।
এ ছাড়া হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ (লট-১) সংগ্রহ করে নতুন মোড়কে সেগুলো আবার হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এসব দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত হাসপাতলের সংশ্লিষ্ট স্টাফরা শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ কমিশন নিয়ে থাকেন ঘুষ হিসাবে।
হাসপাতালের স্টোর কিপার শাহজাহানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আগে দুর্নীতি হয়েছে। তবে বর্তমানের কোনো তথ্য সরবরাহ করতে পারব না। হাসপাতালের কোনো তথ্য দেয়া যাবে না।
অভিযোগের আঙুল স্টোর কিপার মো. শাহজাহানের দিকেও আছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে কর্মরত শাহজাহান। সম্প্রতি তিনি ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দায় শান্তিনগরে জমি কিনে চারতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক স্টাফ জানান, মো. শাহজাহান শুধু বাড়ি করেছেন তা নয়, বিভিন্ন ব্যাংকেও রয়েছে তার মোটা অংকের টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নামে-বেনামে কেনা অনেক জায়গা জমি।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নাছির উদ্দীন আহমদ জানান, বিষয়গুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।